শহিদদের সংগ্রাম ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে (পাঠকের মতামত)

আজ যখন দেখি গোটা সমাজ জুড়ে মানুষকে অমানুষ করার একটা আয়োজন চলছে, তখন দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর যোদ্ধাদের কথা বারবার মনে পড়ে।

ক্ষুদিরামের ফাঁসির পরের দিন ‘দি এম্পায়ার’ পত্রিকায় লেখা হয়েছিল, ‘Kshudiram Bose  was executed this morning…..It is alleged that he mounted the scaffold with his body erect. He was cheerful and smiling. ‘ এত আনন্দ তাঁর কীসের জন্য? তিনি নিশ্চিত ছিলেন, তাঁর এই আত্মত্যাগ বিফলে যাবে না। আমরা, তাঁর উত্তরসূরীরা স্বাধীন দেশে আনন্দে দিন কাটাব।

সেদিন ক্ষুদিরামের আত্মোৎসর্গের পর মজফরপুরের ঘটনায় পরাধীন জাতির হৃদয়ে জেগে উঠেছিল অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। সারা দেশে একটা জেহাদি বেপরোয়া মনোভাবের প্রতিফলন ঘটল। চরমপন্থী নেতা বালগঙ্গাধর তিলক কিংসফোর্ডের ওপর বোমা নিক্ষেপকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করলেন। যার জন্য তিলককে গ্রেফতার করা হল। তার বিরুদ্ধে আনা হলো রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ। তাঁকে নির্বাসনদণ্ড দেওয়া হল। তাঁর মুক্তির দাবিতে বোম্বের মিলের শ্রমিকরা ধর্মঘট করলেন। সেই শ্রমিকদের উপর পুলিশের বেপরোয়া আক্রমণ শুরু হল। এইভাবে ক্ষুদিরামের আত্মোৎসর্গের ঘটনা গোটা দেশের জাতীয়তাবাদী চেতনাকে আরও শক্তিশালী করেছিল।

অথচ আজ আমরা এই বীর সংগ্রামীদের ভুলতে বসেছি। ভুলে গেছি বললেও ভুল হবে, তাঁদের ভুলিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। রাষ্ট্রের পরিচালকরা এমন এক সমাজ ব্যবস্থার জন্ম দিয়েছেন যেখানে মানুষ হবার প্রক্রিয়াটাই ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। যাতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মেরুদণ্ড সোজা করে, মাথা উঁচু করে, প্রতিবাদ করার জন্য কোনও ক্ষুদিরাম জন্ম নিতে না পারে।

‘অভয় টু’ নামক ওয়েব সিরিজে ক্রিমিনালদের ছবির তালিকায় ক্ষুদিরামকে সামিল করার ঘটনা সেটাই আবার প্রমাণ করল। এটা বিক্ষিপ্ত কোনও ঘটনা বলে মনে করি না। যেভাবে আমাদের তাঁদের ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তাঁদের সংগ্রামকে খাটো করার চেষ্টা চলছে, এ তারই ফলশ্রুতি।

গৌতম দাস

মালদা

(ডিজিটাল গণদাবী-১৫_২০ আগস্ট, ২০২০)