মহান লেনিন কেবল রাশিয়ার নভেম্বর বিপ্লবের রূপকার ছিলেন তাই নয়, সমগ্র বিশ্বের শোষিত মানুষের তথা সর্বহারা শ্রেণির শিক্ষক ছিলেন। বিংশ শতাব্দীতে মার্কসবাদকে আমরা যেভাবে পেয়েছি, বুঝেছি তা সবই লেনিনের অবদান। সমাজতন্ত্রের বাস্তব রূপ কী, কীভাবে কেন্দ্রীভূত, পরিকল্পিত অর্থনীতি পরিচালিত হয়, কীভাবে জাতিগত বিদ্বেষ বৈরিতা দূর করে একমাত্র সমাজতন্ত্রই বহু জাতিকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে মেলাতে পারে তা আমাদের দেখিয়েছেন কমরেড লেনিন এবং তাঁর সুযোগ্য ছাত্র কমরেড স্ট্যালিন। এই মহান বিপ্লবী নেতার জন্ম ১৮৭০-এর ২২ এপ্রিল। এ বছর শুরু হচ্ছে তাঁর সার্ধশত জন্মবার্ষিকী। আমরা তাঁর সুযোগ্য ছাত্র কমরেড স্ট্যালিনের ১৯২৪ সালের ২৮ জানুয়ারি ক্রেমলিন মিলিটারি স্কুলে দেওয়া একটি অসামান্য ভাষণ প্রকাশ করছি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসাবে।
কমরেডস,
আমি শুনেছি আজকের সন্ধ্যায় আপনারা লেনিন স্মরণসভার আয়োজন করেছেন এবং একজন বক্তা হিসাবে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমি মনে করি, লেনিনের কার্যাবলি সম্পর্কে আমার কোনও তৈরি করা ভাষণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তার থেকে ভাল হবে, আমি যদি কিছু ঘটনাবলির মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখি, যেগুলি থেকে একজন মানুষ ও নেতা হিসাবে লেনিনের বৈশিষ্ট্যগুলিকে চেনা যাবে। এইসব ঘটনার মধ্যে হয়তো কোনও যোগসূত্র নেই, কিন্তু লেনিন সম্পর্কে একটা ধারণা অর্জন করার প্রশ্নে এই যোগসূত্র থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। আজ এই মুহূর্তে এর থেকে বেশি কিছু বলতে আমি অক্ষম।
পাহাড়ি ঈগল
আমি প্রথম লেনিনের সঙ্গে পরিচিত হই ১৯০৩ সালে। সেটা মুখোমুখি সাক্ষাৎ ছিল না, পরিচয় হয় চিঠিপত্রের মাধ্যমে। কিন্তু সেটাই আমার মধ্যে এত গভীর ছাপ ফেলেছিল যে আমার সমগ্র পার্টিজীবনে তা কখনওই আমার মন থেকে মুছে যায়নি। আমি সেই সময়ে সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে ছিলাম। ১৮৯০-এর দশকের শেষ দিকে, বিশেষ করে ১৯০১ সালের পর, ‘ইসক্রা’ প্রকাশ পাওযার পর লেনিনের বিপ্লবী কার্যাবলি সম্পর্কে আমার যে ধারণা জন্মায়, তার থেকে আমি নিশ্চিত হই যে, লেনিনের মধ্যেই রয়েছে একজন অসাধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ। সেই সময় আমি লেনিনকে পার্টির নিছক একজন নেতা রূপে দেখিনি, দেখেছি পার্টির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা রূপে। বুঝেছি, পার্টির অন্তর্নিহিত তাৎপর্য এবং পার্টির জরুরি প্রয়োজনকে তিনিই একমাত্র উপলব্ধি করেন। আমি যখন তাঁকে পার্টির অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তুলনা করেছি, তখন সর্বদা আমার মনে হয়েছে, তাঁর স্থান তাঁর সহকর্মী, যেমন প্লেখানভ, মার্টভ, আে’লরড প্রমুখের চেয়ে অনেক উঁচুতে। লেনিন শুধুমাত্র অনেক নেতাদের একজন ছিলেন না, তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ নেতা, এক পাহাড়ি ঈগল, সংগ্রামে যাঁর কোনও ভয় ছিল না, যিনি রুশ বিপ্লবী আন্দোলনের অজানা পথে পার্টিকে অবিচল দৃঢ়তায় পরিচালনা করেছিলেন। তাঁর সম্পর্কে আমার এই মনোভাব এতটাই গভীর ছিল যে, আমি আমার একজন বন্ধু যে তখন বিদেশে রাজনৈতিক নির্বাসনে ছিল, তাঁকে লেনিন সম্পর্কে আমার এই উপলব্ধি লিখে পাঠিয়ে তার অভিমত জানাতে অনুরোধ করেছিলাম। কিছুকাল পর ১৯০৩ সালের শেষ দিকে আমি যখন সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে রয়েছি, তখন সেই বন্ধুর কাছ থেকে একটা উৎসাহব্যাঞ্জক জবাব পাই, তার সাথে পাই সরল ভাষায় গভীর অভিব্যক্তিসম্পন্ন লেনিনের একটি নোট, যা থেকে আমি বুঝতে পারি, আমার বন্ধু লেনিনকে আমার চিঠিটি দেখিয়েছিলেন। লেনিনের নোটটি ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত। কিন্তু তার মধ্যেই ছিল আমাদের পার্টির বাস্তব কার্যকলাপ সম্পর্কে অত্যন্ত কঠোর ও নির্ভীক সমালোচনা। তার সাথে ছিল, পার্টির আশু কার্যাবলি সংক্রান্ত সমগ্র পরিকল্পনার একটা সংক্ষিপ্ত এবং পরিষ্কার বর্ণনা। অত্যন্ত জটিল বিষয়কে এত সহজ ভাষায় ও পরিষ্কারভাবে, এত সংক্ষিপ্ত ও দৃঢ়ভাবে লিখতে পারতেন একমাত্র লেনিনই। তাঁর প্রত্যেকটি বাক্য যেন ছিল বন্দুকের এক একটি গুলি। এই সহজ অথচ বলিষ্ঠ চিঠিটি আমার মধ্যে এই ধারণাকে আরও শক্তিশালী করে দেয় যে, লেনিনই হচ্ছেন আমাদের পার্টির পাহাড়ি ঈগল। দুঃখের কথা, সেই সময়ে আমরা যারা গোপনে পার্টির কাজ করতাম, তাদের অভ্যাসবশত বহু চিঠির মতো লেনিনের এই চিঠিটিকেও আমি পুড়িয়ে ফেলি। এজন্য আমি নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারিনি। লেনিনের সঙ্গে আমার পরিচয় সেই সময় থেকেই।
বিনয়
আমার সঙ্গে লেনিনের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৯০৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ফিনল্যান্ডের তামারফস বলশেভিক সম্মেলনে। আমি আশায় ছিলাম, আমাদের পার্টির পাহাড়ি ঈগলকে, মহৎ মানুষটিকে দেখব। এ শুধু এক বিরাট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে দেখার আশা নয়, আমি কল্পনা করেছিলাম লেনিন একজন বিরাট চেহারারও মানুষ হবেন। ফলে বুঝতেই পারছেন, এত আশা ও কল্পনা করার পর আমি যখন একজন সাধারণ চেহারার মানুষকে দেখলাম, গড় উচ্চতার মানুষের চেয়েও যাঁর উচ্চতা কম, আক্ষরিক অর্থেই কোনও ভাবে যাঁকে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করা যায় না, আমি কতটা হতাশ হয়েছিলাম। …
এ কথা স্বাভাবিক ভাবেই ধরে নেওয়া হয় যে, একজন ‘বড় মানুষ’ সভায় দেরিতে আসবেন, যাতে সমবেত অন্যেরা তাঁর আসার জন্য অধীর আগ্রহে, পথ চেয়ে থেকে এবং তারপর সেই ‘বড় মানুষ’ যখন সভায় ঢুকবেন, তখন সমবেত মানুষদের মধ্যে ফিসফিস শুরু হয়ে যাবে– ‘চুপ, চুপ, উনি আসছেন’। এই ধরনের আচরণ আমার কাছে খুব একটা অপ্রয়োজনীয় মনে হয়নি, কারণ এর দ্বারা মানুষটি সম্পর্কে একটি ভাবমূর্তি গড়ে ওঠে, শ্রদ্ধা সম্মান গড়ে ওঠে। এই অবস্থায় যখন আমি দেখলাম, প্রতিনিধিরা পৌঁছবার আগেই লেনিন সম্মেলনে পৌঁছে গিয়েছেন এবং হলের একটা কোণে নিজের স্থান করে নিয়ে সাধারণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে অত্যন্ত সাদামাটা আলাপচারিতায় নিয়োজিত আছেন, আমার মধ্যেকার হতাশা আপনারা বুঝতেই পারছেন। আপনাদের সামনে এ সত্য আমি গোপন করব না যে, সেই সময় মনে হয়েছিল, লেনিনের এই আচরণ কতগুলো আবশ্যক নিয়মকানুনকে লঙ্ঘন করছে। একমাত্র পরবর্তীকালেই আমি উপলব্ধি করি যে, এই যে সরল সাদাসিধে জীবন, এই যে বিনয়, নিজেকে অলক্ষ্যে রাখার চেষ্টা, অথবা বলা যায়, অন্ততপক্ষে নিজেকে জাহির না করা, নিজের উচ্চ অবস্থানকে জোরালো ভাবে সামনে তুলে না ধরা– এই বৈশিষ্ট্যই ছিল নতুন নেতা হিসাবে সাদাসিধে সাধারণ জনগণের, মানবজাতির নিচুতলার মানুষের নেতা হিসাবে লেনিন চরিত্রের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক।
যুক্তির শক্তি
ওই সম্মেলনে লেনিন দু’টি উল্লেখযোগ্য ভাষণ দিয়েছিলেন। একটি ছিল বর্তমান পরিস্থিতির উপর, আরেকটি ছিল কৃষি সংক্রান্ত প্রশ্নে। দুঃজনকভাবে ওই ভাষণগুলি সংরক্ষিত হয়নি। ওই ভাষণ সমগ্র সম্মেলনকে উদীপ্ত করে উৎসাহের তুঙ্গে তুলে দিয়েছিল। নিজ প্রত্যয়ে অসাধারণ দৃঢ়তা, যুক্তির সরলতা ও পরিচ্ছন্নতা, বোঝার মতো সংক্ষিপ্ত বাক্যে সহজ উপস্থাপনা, কৃত্রিমতা ও নাটকীয় অঙ্গভঙ্গির অনুপস্থিতি– এই বৈশিষ্টগুলিই লেনিনের ভাষণকে ‘পার্লামেন্টারি’ বাগ্মীদের প্রথাগত ভাষণ থেকে আলাদা করে মানুষের কাছে আদরণীয় করে তুলেছিল। কিন্তু সে সময় আমাকে যা সম্মোহিত করেছিল, তা লেনিনের ভাষণের এই দিকটা নয়। আমি সম্মোহিত হয়েছিলাম, তাঁর বক্তব্যের ভিতরকার যুক্তির দুর্দমনীয় শক্তির দ্বারা। যদিও তাঁর বক্তব্য ছিল অত্যন্ত মাপা, কিন্তু তা দিয়েই তিনি সমবেত শ্রোতাদের মনকে পুরোপুরি আকৃষ্ট করে রাখতেন, ধীরে ধীরে তাদের প্রবল ভাবে উদ্দীপ্ত করে তুলতেন এবং শেষপর্যন্ত শ্রোতাদের উপর তাঁর যুক্তির পূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হত। আমার মনে পড়ে, বেশ কিছু প্রতিনিধি বলেছিলেন, ‘লেনিনের ভাষণের যুক্তি যেন অক্টোপাসের শুঁড়ের মতো, যা তোমাকে ধীরে ধীরে বেড়ির মতো জড়াবে এবং শেষপর্যন্ত এমন আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলবে যা ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার ক্ষমতা তোমার থাকবে না। হয় তুমি আত্মসমর্পণ করবে, নয়তো চূড়ান্ত পরাজয় মেনে নিতে হবে। আমি মনে করি, লেনিনের ভাষণের এই দিকটিই ছিল বাগ্মী হিসাবে তাঁর শিল্পীসত্তার সবচেয়ে শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য।
পরাজয়ে নির্ভীক
দ্বিতীয়বার আমার সঙ্গে লেনিনের দেখা হয় ১৯০৬ সালে পার্টির স্টকহোম কংগ্রেসে। আপনারা জানেন, ওই কংগ্রেসে বলশেভিকরা ছিল সংখ্যালঘিষ্ঠ এবং তাদের পরাজয় ঘটেছিল। সেইবারই প্রথম আমি লেনিনকে পরাজিতের ভূমিকায় দেখেছিলাম। কিন্তু তিনি সে জাতের নেতা ছিলেন না, যাঁরা কোনও পরাজয়ের পর অজুহাত দেন, অভিযোগ নিয়ে কাঁদুনি গান এবং বল-ভরসা হারিয়ে বসেন। বরং পরাজয় লেনিনকে অফুরন্ত শক্তির উৎসে পরিণত করত, যা তাঁর সমর্থকদের উদ্দীপ্ত করে নতুন লড়াইয়ে ও ভবিষ্যৎ বিজয় অর্জনে অনুপ্রেরণা দিত। একটু আগেই আমি বললাম, সেই কংগ্রেসে লেনিন পরাস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু কী জাতের পরাজয় ছিল এটা? সেটা আপনারা সে সময় শুধু তাঁর বিরোধীদের– প্লেখানভ, আলেক্সরড, মার্টভ এবং অন্যান্যদের চেহারা-ছবি দেখলেই বুঝতে পারতেন। তাঁরা জয়ী, অথচ তাঁদের মুখচোখ হয়ে গিয়েছিল পাংশু। মেনশেভিকবাদ সম্পর্কে লেনিনের নির্দয় সমালোচনা তাঁদের যেন রক্তশূন্য করে দিয়েছিল। আমার স্মরণে আছে, আমরা বলশেভিক প্রতিনিধিরা একত্রে জড়ো হয়ে লেনিনের মুখের দিকে তাকিয়েছিলাম তাঁর নির্দেশের জন্য। কোনও কোনও ডেলিগেটের বক্তব্যের মধ্যে ক্লান্তি এবং হতাশা ঝরে পড়েছিল। আমার মনে আছে, এই ধরনের ভাষণের জবাবে লেনিন তীব্র ভাষায় দাঁত চেপে বলেছিলেন, ‘কমরেডস’, কাঁদুনি গাওয়া নয়, আমরা জয়ী হবই। কারণ আমরা সঠিক’। ঘ্যানঘ্যানে বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ঘৃণা, আমাদের নিজেদের শক্তির উপর বিশ্বাস এবং জয় সম্পর্কে আস্থা– এটাই লেনিন আমাদের দিয়েছিলেন। আমরা অনুভব করেছিলাম যে, বলশেভিকদের পরাজয় সাময়িক। অদূর ভবিষ্যতে তারা জয়ী হবেই। ‘পরাজয় নিয়ে কাঁদুনি নয়’– এটাই ছিল লেনিনের কার্যাবলির বৈশিষ্ট্য, এটাই লেনিনের চারপাশে আমৃত্যু অবিচল এবং নিজ শক্তি সম্পর্কে আস্থাবান এক সংগ্রামী বাহিনীকে সমবেত হতে সাহায্য করেছিল।
আত্মগরিমা নয়
পরবর্তী পার্টি কংগ্রেসে অর্থাৎ ১৯০৭ সালের লন্ডন কংগ্রেসে বলশেভিকরা নিজেদের বিজয় প্রমাণ করল। এই প্রথম আমি লেনিনকে জয়ীর ভূমিকায় দেখলাম। জয় কিছু নেতার মাথা ঘুরিয়ে দেয়, তাদের দাম্ভিক ও অহংকারী বানিয়ে দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা শুরুই করে জয়ী ভাব নিয়ে এবং কত জয় তারা অর্জন করেছে, তার বর্ণনা শুনিয়ে। এ ধরনের নেতাদের সাথে লেনিনের বিন্দুমাত্র মিল ছিল না। বরং যে কোনও বিজয়ের পর বিশেষ করে তিনি আরও বেশি সতর্ক ও সাবধানী হয়ে যেতেন। আমার মনে পড়ে, লেনিন বারবার প্রতিনিধিদের বোঝাচ্ছিলেন, ‘‘প্রথম কথা মনে রাখতে হবে, বিজয়ে মাথা খারাপ করলে এবং গর্বোদ্ধত হলে চলবে না। দ্বিতীয় হচ্ছে, বিজয়কে সংহত করতে হবে। তৃতীয় কাজ হচ্ছে, শত্রুকে শেষ আঘাত দেওয়া। কারণ, সে পরাজিত হয়েছে, কিন্তু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়নি”। যে সমস্ত প্রতিনিধিরা খুব আহ্লাদের সঙ্গে বলছিলেন, ‘মেনশেভিকদের সঙ্গে লড়াই সাঙ্গ হয়ে গেল’, তিনি তাঁদের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। এ সত্য দেখাতে লেনিনের কোনও অসুবিধাই হয়নি যে, শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনের মধ্যে মেনশেভিকদের শিকড় তখনও ছিল, তাদের বিরুদ্ধে দক্ষতার সাথে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে, নিজের শক্তিকে বাড়িয়ে দেখা এবং অপরের, বিশেষ করে শত্রুর শক্তিকে কমিয়ে দেখার অভ্যাস বদলাতে হবে। ‘‘বিজয়ে গর্বোল্লাস নয়”– এটি ছিল লেনিনের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য, এটাই শত্রুর শক্তিকে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝতে এবং আচমকা সম্ভাব্য বিপদ থেকে দলকে আগাম প্রস্তুত করে রাখতে লেনিনকে সাহায্য করেছিল।
অফিসারদের ঘেরাও করো, যুদ্ধ বন্ধ করো, অস্ট্রো-জার্মান সৈন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করো এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায়কে নিজেদের হাতে তুলে নাও।”
এটা ছিল ‘অন্ধকারে ঝাঁপ দেওয়া’। কিন্তু লেনিন এই ‘ঝাঁপ’ থেকে বিরত হলেন না, বরং ঝাঁপ দিতে ব্যগ্র হলেন। কারণ তিনি জানতেন, সেনারা শান্তি চাইছিল এবং পথের সমস্ত বাধা বিদেয় করে তারা শান্তি জয় করে আনবে। তিনি জানতেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার এই পদ্ধতি অস্টে্রা-র্জামান সৈন্যদের উপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য এবং সমস্ত যুদ্ধক্ষেত্রে শান্তির জন্য যে কামনা, তাকেই এই পদ্ধতি উৎসাহিত করবে। আমরা জানি, এ ক্ষেত্রেও লেনিনের বৈপ্লবিক দূরদৃষ্টি পরবর্তীকালে নিখুঁতভাবে সঠিক প্রমাণ হয়েছিল। একজন প্রতিভাবানের অন্তর্দৃষ্টি আসন্ন ঘটনাবলীর ভিতরকার ক্রিয়াকর্মকে অত্যন্ত দ্রুত বুঝতে পারার ক্ষমতা– এই ছিল লেনিনের গুণ। এটাই তাঁকে সঠিক রণনীতি নিরূপণ করতে এবং বিপ্লবী আন্দোলনের আঁকাবাঁকা পথে সঠিক ভূমিকা নির্ধারণ করতে সক্ষম করেছিল। (চলবে)