জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এন আর সি) তৈরির নামে আসামে ক্ষমতাসীন বিজেপি–এজিপি সরকার কয়েক লক্ষ ধর্মীয় এবং ভাষিক সংখ্যালঘু মানুষের নাগরিকত্ব হরণের চক্রান্তে নেমেছে৷
৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ খসড়া নাগরিক পঞ্জি প্রকাশিত হয়৷ মোট ৩ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষ আবেদন করেছিলেন এন আর সি–তে নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য৷ কিন্তু দেখা গেল খসড়া তালিকায় নাম উঠেছে মাত্র ১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের৷ বাকি ১ কোটি ৩৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হল, যাঁদের অধিকাংশই ধর্মীয় এবং ভাষিক সংখ্যালঘু৷ তালিকায় আরও দেখা গেল, আপার আসামের অসমিয়াভাষী জনগণের ৮০–৯০ শতাংশের নাম থাকলেও লোয়ার এবং সেন্ট্রাল আসামের ৩৫–৪০ শতাংশের বেশি নাম নেই৷ বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ৷ এখানে বর্তমান এম এল এ, এম পি থেকে শুরু করে প্রাক্তন এম এল এ, প্রাক্তন এম পি, সরকারি কর্মচারী, এমনকী প্রাক্তন সেনা কর্মীদের অনেকেরই নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি৷ অথচ এন আর সি কর্তৃপক্ষ তালিকা তৈরির আগে প্রচার করেছিলেন কোনও প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকের নাম বাদ যাবে না৷ তা হলে, এম এল এ–এম পি বা সেনা কর্মীদের নাম বাদ দেওয়া হল কেন? তাঁরা কি ভারতীয় নন?
তালিকায় নাম না থাকার বিপদ সাংঘাতিক৷ মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনওয়াল এক সভায় বলেছেন, তালিকায় যাদের নাম থাকবে না তারা বিদেশি নাগরিক হিসাবে ঘোষিত হবে, তাদের কোনও মৌলিক অধিকার থাকবে না, ভোটাধিকার থাকবে না, তারা জমি কিনতে পারবেন না, চাকরির নিশ্চয়তা পাবেন না, শিক্ষার নিশ্চয়তাও থাকবে না তাদের জন্য৷ তারা অধিকারহীন মানুষ হিসাবে কেবল বসবাস করতে পারবে৷
বোঝাই যায়, এই নাগরিক পঞ্জির হীন উদ্দেশ্য হল ১ কোটিরও বেশি ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘু মানুষের সমস্ত অধিকার হরণ করে উগ্র প্রাদেশিক শক্তি এ জি পি এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপিকে ভোটে জেতার পথ প্রশস্ত করে দেওয়া এবং সংখ্যালঘু মানুষকে বুঝিয়ে দেওয়া যে, আসামে যদি থাকতে চাও তবে এ জি পি এবং বিজেপিকে তুষ্ট করেই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে থাকতে হবে৷
নামটা ‘জাতীয় নাগরিক পঞ্জি’ হলেও আসলে তা ‘জাতীয়’ নয়৷ ভারতের অন্য কোনও রাজ্যে এই ধরনের পঞ্জি করার ঘটনা নেই৷ তা হলে শুধু আসামে তা করা হচ্ছে কেন? নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫–এর ১৮ (৪) ধারায় জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরির বিধান দেওয়া থাকলেও সর্বভারতীয় স্তরে বা অন্য কোনও রাজ্যে আজও তা করা হয়নি৷ আসামে লাখ লাখ বিদেশি ঢুকছে এবং তাদের চিহ্ণিত করা দরকার–এই শোরগোল তুলে আসামের জন্য পৃথকভাবে নাগরিক পঞ্জি তৈরি করতে উক্ত আইনের ৪ নং ধারা সংশোধন করে ৪ (এ) ধারা প্রণয়ন করা হয়৷ কিন্তু এ জন্য সংবিধান অনুযায়ী পার্লামেন্টের অনুমোদন বাধ্যতামূলক থাকলেও সেখানে কোনও অনুমোদন নেওয়া হল না৷ পার্লামেন্টকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে গিয়ে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত দ্বারাই তা করা হল৷ অশুভ উদ্দেশ্যে এর পিছনে না থাকলে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে পার্লামেন্টে এ বিষয়ে বিতর্ক আহ্বান করা হল না কেন?
পৃথক নাগরিক পঞ্জি কীসের ভিত্তিতে হবে? দুটি ডকুমেন্টের ভিত্তিতে করার কথা ঠিক হয়েছিল৷ তার একটি ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জি, দ্বিতীয়টি ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগের ভোটার লিস্ট৷ কিন্তু দেখা গেল, আসামের কোনও জেলাতেই এই দুই ডকুমেন্ট নেই৷ তা ছাড়া ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জিতে যাঁদের নাম ছিল আজ ৬৬ বছর পর তাঁদের অধিকাংশই মৃত৷ ফলে একদিকে ভোটার লিস্ট নেই, অন্যদিকে সেখানে যাঁদের নাম ছিল তাঁরাও যখন বাস্তবে নেই– এই অবস্থায় আজ কী করে একজন প্রমাণ করবেন তাঁর পূর্বসূরির নাম উক্ত তালিকায় ছিল? এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) প্রথমেই এই বিষয়টি এন আর সি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষ অসৎ উদ্দেশ্য থেকে এই যুক্তিতে কর্ণপাত করেনি৷ সমস্যাটির যুক্তিপূর্ণ সমাধানের ইচ্ছা কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারেরই ছিল না৷ তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল– বিদেশি ইস্যুতে শোরগোল তোলা, প্রাদেশিকতাবাদী শক্তিদের তোষণ করা৷
সত্যিই কি আসামে লক্ষ লক্ষ বিদেশি অনুপ্রবেশ ঘটছে? এ জি পি সরকার রাজ্যে ১০ বছর ক্ষমতায় ছিল৷ এই ১০ বছর ধরে তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান চালিয়ে কতজন অনুপ্রবেশকারীকে চিহ্ণিত করতে পেরেছে তারা? যে ‘লক্ষ লক্ষ বিদেশি অনুপ্রবেশকারী’র কথা তাঁরা জোরের সাথে বলতেন, তারা বাস্তবে থাকলে তার সন্ধান তাঁরা পেলেন না কেন? আসলে রাম মন্দির নির্মাণ যেমন বিজেপির কাছে নির্বাচনী ইস্যু, তেমনি বিদেশি অনুপ্রবেশের স্লোগান এ জি পি–র কাছে আকর্ষণীয় নির্বাচনী ইস্যু৷ তাই বাস্তবে লক্ষ লক্ষ বিদেশি অনুপ্রবেশকারী তারা খুঁজে না পেলেও, তা চিহ্ণিত করার নামে নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হল৷
আনা হল ‘ডি ভোটার’ বাহানা৷ ১৯৯৭ সালে এ জি পি খেয়ালখুশি মাফিক আচমকা ঘোষণা করে দেয় রাজ্যে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ডাউটফুল ভোটার বা সন্দেহজনক ভোটার রয়েছে৷ কীসের ভিত্তিতে তাঁরা বললেন তার কোনও ব্যাখ্যা দিলেন না৷ কিন্তু লক্ষ করার বিষয়, এই যে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার ভোটারকে ‘ডি ভোটার’ হিসাবে তারা চিহ্ণিত করল, তাদের বেশিরভাগই ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘু৷ এবং বলা হল, এঁদের কোনও ভোটাধিকার থাকবে না৷ যদিও বলা হল, ‘ডি ভোটার’রা সত্যিই ‘ডি ভোটার’ কি না ৬ মাসের মধ্যে যাচাই করে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক হলে তাদের নাম ভোটার লিস্টে তোলা হবে৷ কিন্তু ৬ মাস কেন, ২০ বছর পার হয়ে গেলেও আজও তা পরীক্ষা করা হল না৷ এই ভোটাররা আজও ভোট দিতে পারছেন না৷ শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে এই যে ভোটাধিকার হরণ এটা কি কোনও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, না চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতা? রাজ্যে ক্ষমতাসীন বর্তমান বিজেপি তার জোটসঙ্গীর এমন স্বৈরাচারী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলছে না কেন?
‘ডি ভোটার’ কাহিনী যে মিথ্যা, সাজানো, উচ্চতর কোর্টের বিচারেও তা প্রমাণিত হয়েছে৷ যে সমস্ত ডি ভোটার ন্যায়বিচারের আশায় উচ্চতর কোর্টে আপিল করেছিলেন, দেখা গেছে তাঁদের ৯৭ শতাংশই তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন৷ ৩ লাখ ৭০ হাজার ডি ভোটার থাকার দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করে বর্তমানে ডি ভোটারের সংখ্যা কমে ২ লাখ ৫০ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে৷ এই ২ লাখ ৫০ হাজার ডি ভোটার যাতে তথ্য প্রমাণ দাখিল করতে না পারে সেজন্য এঁদের বিরাট অংশকে ন্যূনতম অবহিত না করেই, তাঁদের অজান্তেই ফরেনার্স ট্রাইবুনালে তাঁদের নাম পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু না জানার কারণে ট্রাইবুনালের সামনে তাঁরা উপস্থিত হতে না পারায় তাঁদের নাম স্বাভাবিকভাবেই বিদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসাবে চিহ্ণিত হয়েছে৷ কেন এঁদেরকে জানানো হল না? এঁদেরকে নাগরিকত্ব প্রমাণের কেন সুযোগ দেওয়া হল না কেন? কেন ছল–চাতুরির আশ্রয় নেওয়া হল? এটা কি কোনও গণতান্ত্রিক রীতি?
অনুপ্রবেশ সমস্যার সমাধান কী? ১৯৮০ সালে ‘বাঙালি খেদাও’ আন্দোলনের সময় এস ইউ সি আই (সি) যে চারদফা সমাধান সূত্র সরকারের কাছে পেশ করেছিল, তাতে বিদেশি নাগরিক চিহ্ণিত করা সম্পর্কে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে৷ এস ইউ সি আই (সি) বলেছিল, সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিক সীমানা সুরক্ষা করতে হবে, যাতে বেআইনি অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে৷ গোয়েন্দা দপ্তরকে এ কাজে যোগ্যতাসম্পন্ন করতে হবে যাতে বেআইনি অনুপ্রবেশকারীকে ধরতে পারে এবং ট্রাইবুনালে বিচারের জন্য পাঠাতে পারে৷
এস ইউ সি আই (সি) আরও বলেছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে ভিত্তিবর্ষ ধরে বিদেশি নাগরিক চিহ্ণিত করতে হবে বিদ্যমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আইন, রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে৷ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে যাঁরা ভারতে এসেছেন তাঁদেরকে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে গণ্য করতে হবে৷ কিন্তু এর পরে যাঁরা এসেছেন, তাঁদেরকে তাঁদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে আন্তর্জাতিক আইন এবং ঐতিহ্য অনুসরণ করেই৷ এস ইউ সি আই (সি) মনে করে, আসামে বিদেশি অনুপ্রবেশ সমস্যাটিকে এ পথেই সমাধান করা সম্ভব৷ কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্যের কোনও সরকারই এ সমাধান সূত্র মেনে নেয়নি৷ তারা সমাধানের পরিবর্তে সমস্যাটিকে জিইয়ে রাখতে চাইছে ভোটের স্বার্থে৷
এই ভোট রাজনীতির স্বার্থেই বিজেপি–এজিপি এক সময় আই এম ডি টি (ইললিগ্যাল মাইগ্র্যান্ট ডিটারমিনেশন ট্রাইব্যনাল অ্যাক্ট) বাতিল করার দাবি তুলেছিল৷ ১৯৮৩ সালে আসামের নেলি, চালখোয়া, মোকালমোয়া, গোহপুরে সংখ্যালঘু মানুষের গণহত্যার পর দেশের ভিতরে এবং আন্তর্জাতিকভাবে চূড়ান্ত নিন্দিত হওয়ায় ভারত সরকার সংখ্যালঘু মানুষদের নিরাপত্তা কিছুটা সুনিশ্চিত করার জন্য আই এম ডি টি আইন প্রণয়ন করেছিল৷ কিন্তু বিজেপি–আর এস এস–এজিপি এই আইন বাতিলের জন্য সরকারের উপর চাপ দিতে থাকে এবং শেষপর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট এই আইন বাতিল করে দেয়৷ ফলে আসামে ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘু মানুষ আজ চরম বিপদের সম্মুখীন৷
অনুপ্রবেশ সমস্যাকে শাসকশ্রেণি নিজস্ব স্বার্থে ব্যবহারও করছে৷ রাজ্যে হাজারো সমস্যার কারণ হিসাবে তারা অনায়াসেই অনুপ্রবেশকে চিহ্ণিত করছে৷ বেকার সমস্যা কেন, শিল্প হচ্ছে না কেন, অর্থনৈতিক সংকট তীব্র কেন, এই সব সংকট নিরসনে সরকারের ভূমিকা কী ইত্যাদি প্রশ্ণে আর জবাব দেওয়ার দরকার নেই৷ সরকার বলছে এর জন্য দায়ী অনুপ্রবেশ সমস্যা এবং অদ্ভূতভাবে এক শ্রেণির মানুষ তা বিশ্বাসও করছেন এবং তার দ্বারা শেষপর্যন্ত ঠকছেনও৷
অনুপ্রবেশের কারণে অসমিয়ারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে এবং তাঁদের সংস্কৃতি বিপন্ন হবে– প্রাদেশিকতাবাদীদের এই প্রচারও ভিত্তিহীন৷ ১৯১১ সালের জনগণনা রিপোর্ট অনুযায়ী অসমিয়াভাষী জনগণ ছিল ১৫ লাখ, ১০ বছরে তা বেড়ে ১৯২১ সালে দাঁড়ায় ১৭ লাখ৷ ১৯৩১ সালে অসমিয়াভাষী জনগণ ছিল ৩১.৪ শতাংশ৷ ১৯৫১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬.৭ শতাংশ৷ এই তথ্য কি প্রমাণ করে অসমিয়াভাষী জনগণ সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে? কোনও অংশের মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি বিপন্ন হয় কি অন্য অংশের সাধারণ মানুষের দ্বারা? না কি সাধারণ মানুষের পারস্পরিক মেলামেশা ও সংস্কৃতির আদান প্রদানের মাধ্যমে সংস্কৃতি উন্নত থেকে উন্নততর হয়? সাধারণ মানুষ কখনওই তার ভাষা ও সংস্কৃতি অন্য অংশের মানুষের উপর চাপিয়ে দেয় না৷ এই কাজটি অতীতে করেছে সামন্তী রাজারা, এখন করছে ক্ষমতাসীন পুঁজিবাদ–সাম্রাজ্যবাদের প্রতিভূরা৷ অথচ সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে অসমিয়া ভাষা ও সংস্কৃতি বিপন্ন হওয়ার অভিযোগ আনা হল অ–সমিয়াভাষী সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে৷ এ ক্ষেত্রে কংগ্রেস–বিজেপি–এজিপ একই দোষে দুষ্ট৷
১৯৭৮ সালে আসামে কংগ্রেসকে পরাস্ত করে গোলাপ বরবরার নেতৃত্বে জনতা পার্টির সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে পরাজিত কংগ্রেস ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য গোলাপ বববরা সরকারকে চাপে ফেলতে ‘বহিরাগত অনুপ্রবেশের’ স্লোগান তোলে৷ শীঘ্রই তারা বলতে শুরু করে, সীমান্ত দিয়ে লাখ লাখ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ঘটছে৷ কংগ্রেসের এই স্লোগান লুফে নেয় আসামের উগ্র প্রাদেশিকতাবাদী ছাত্র সংগঠন অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং অল আসাম গণ সংগ্রাম পরিষদ৷ ১৯৭৯ সালে মঙ্গলদৈ লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন উপলক্ষে তারা দাবি করে, ভোটার লিস্ট থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাতিল না করলে এই ভোট হতে পারে না৷ এই সময়ই আসামের সমস্ত প্রাদেশিকতাবাদী শক্তি হাতে হাত মিলিয়ে বাঙালি খেদাও আন্দোলনের জন্ম দেয় যা ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আসামে বিস্ফোরক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে৷
এ বারের আসাম বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি একইভাবে অনুপ্রবেশকারী ইস্যুকে ব্যবহার করে৷ এইভাবে শাসক শ্রেণি অনুপ্রবেশ ইস্যুকে তার শ্রেণি স্বার্থে ব্যবহার করে এসেছে৷ কিন্তু কখনওই সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ বন্ধের জন্য যথাযথ ভূমিকা পালন করেনি৷ আসামের ধর্মীয় ও ভাষিক সংখ্যালঘু লক্ষ লক্ষ মানুষকে অধিকারহীন নাগরিকে পরিণত করে অনুপ্রবেশ বিরোধী আন্দোলনের নামে ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির যে নোংরা খেলা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন বিজেপি–এজিপি সরকার, তার বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষের আজ সরব হওয়ার সময় উপস্থিত৷ এদের মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন প্রচারকে আদর্শগতভাবে পরাস্ত করে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না পারলে বারবার এরা নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে বিভেদ আনবে, শোষিত মানুষের ঐক্য ভাঙবে৷
(৭০ বর্ষ ৩৯ সংখ্যা ১৮ মে, ২০১৮)