২২ সেপ্টেম্বর শিয়ালদা স্টেশন চত্বরে গণকনভেনশন
ভারতীয় রেল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা। দেশের সর্ববৃহৎ চাকরির ক্ষেত্রও। বর্তমানে রেল শিল্পে স্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা ১৩ লক্ষ। এছাড়া রয়েছেন আরও কয়েক লক্ষ বিভিন্ন স্তরের অস্থায়ী কর্মী, যাঁদের স্থায়ীকরণ জরুরি। কর্মসংস্থানের এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বেসরকারিকরণ শুরু করেছে। যার ফলে একটা বিরাট অংশের শ্রমিক কাজ হারাবেন। ইতিমধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব রেল ঘোষণা করেছে, যে কর্মীদের বয়স ৫৫ বছর হয়ে গেছে বা যাঁদের চাকরির মেয়াদ ৩০ বছর হয়ে গেছে তাঁদের বাধ্যতামূলক অবসর নিতে হবে। ফলে এই বেসরকারিকরণ ঘিরে রেল কর্মচারী ও তার পরিবারের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে কাজ হারিয়ে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
৪ লক্ষ ৩২ হাজার হেক্টর জমির উপর গড়ে ওঠা ভারতীয় রেল ব্যবস্থায় রয়েছে ১ লক্ষ ১৫ হাজার কিলোমিটার বিস্তীর্ণ রেলপথ, ৭ হাজার ৭১২টি রেল স্টেশন, ১২ হাজার ৬৭১টি ট্রেন, আধুনিক সিগন্যাল সিস্টেম, বহু রেলওয়ে কলোণি, হাসপাতাল, ৪৫টি বৃহৎ ওয়ার্কশপ, ৭টি উৎপাদন কেন্দ্র প্রভৃতি। জনগণের দেওয়া ট্যাক্সের টাকায় গড়ে তোলা এই বিশাল সম্পত্তি মোদি সরকার পুঁজিপতিদের পাইয়ে দিতে চলেছে। কোনও দেশপ্রেমিক মানুষ এ জিনিস মেনে নিতে পারেন না। রেল শিল্পের সাথে যুক্ত রয়েছেন গড়ে দৈনিক ২ কোটি ৩০ লক্ষ নিত্যযাত্রী এবং লক্ষ লক্ষ দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হকার ও সিr বিক্রেতারা। এই বিশাল অংশের মানুষ জীবিকাচ্যুত হবেন এবং জীবন হবে দুর্বিষহ। শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকরির নিরাপত্তাও থাকবে না। ফলে ক্ষোভে ফুঁসছেন তাঁরা। রেলের ভাড়া নির্ধারণের ক্ষমতাও চলে যাচ্ছে বেসরকারি মালিকদের হাতে। ফলে মুনাফা সর্বোচ্চ করতে যাত্রী ও পণ্যভাড়া ইচ্ছামতো বাড়াবে। বিপর্যস্ত হবে জনজীবন।
শুধু রেল নয়, করোনা সংক্রমণের সুযোগ নিয়ে মোদি সরকার প্রতিরক্ষা সহ অন্যান্য সরকারি বিভাগ, ব্যাঙ্ক, বিমা, বিদ্যুৎ, তৈলক্ষেত্র, কয়লা ইত্যাদি রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের শিল্পগুলিকে বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করছে। কেন্দ্রীয় সরকার গণতন্ত্রকে দুপায়ে মাড়িয়ে সংসদ, আইনসভা এবং জনমতকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে ভারত পেট্রোলিয়াম, বেঙ্গল কেমিক্যাল, শিপিং কর্পোরেশন, কন্টেনার কর্পোরেশন, দুর্গাপুর, সালেম এবং ভদ্রাবতী স্টিল প্ল্যান্ট, ভারত আর্থ মুভারস, সিমেন্ট কর্পোরেশন, এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান ট্যুরিজম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের বিলগ্নীকরণের (শেয়ার বিক্রি) সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যেই দেশের ৬টি বিমান বন্দর আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সারা দেশে ১০৯টি রুটে ১৫১টি ট্রেন বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ১৫টি রুটের দূরপাল্লার ট্রেন রয়েছে। শুধু রেল পরিবহণই নয়, সড়ক যোগাযোগ, আকাশপথ ও জলপথেরও বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
বেসরকারিকরণের সর্বনাশা এবং চূড়ান্ত জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে আজ জরুরি প্রয়োজন হল ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত নাগরিক প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার। এই উদ্দেশ্যেই ২২ সেপ্টেম্বর কলকাতায় নাগরিক কনভেনশন আহ্বান করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শুরু করে অধ্যাপক, শিক্ষক, ডাক্তার, সাংবাদিক, সঙ্গীত শিল্পী, অ্যাডভোকেট, রেলওয়ে হকার ইউনিয়ন, রেলকর্মচারী, রেলে মালবহনকারী ব্যবসায়ী সমিতি, রেল সংলগ্ন ট্যাি’-টোটো-অটো চালক ইউনিয়ন, রিক্সা ইউনিয়ন, স্টেশন সংলগ্ন বাজার সমিতি, রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন, রেলওয়ে মোট বাহক ইউনিয়ন, মহিলা রেলযাত্রী সমিতি, বিভিন্ন কালচারাল ফোরাম, সমাজকর্মী প্রমুখ শত শত ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনের নেতৃত্ব এই কনভেনশন সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন।