রেল বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে দেশজোড়া আন্দোলনে এআইডিওয়াইও

রেলে সাড়ে তিন লক্ষ পদ শূন্য। কর্মীর অভাবে গত চার বছরে ১৬২টি রেল-দুর্ঘটনা ঘটেছে। তা সত্ত্বেও কোনও নিয়োগ হচ্ছে না। দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ভারতীয় রেল ব্যবস্থাকে আজ কর্পোরেটদের লুটের মৃগয়াক্ষেত্র বানানো হয়েছে। গত এক দশক ধরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ নীতি নিয়ে দূরপাল্লার মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনে অসংরক্ষিত দ্বিতীয় শ্রেণি ও স্লিপার কোচের সংখ্যা ক্রমাগত কমিয়ে বাতানুকূল কোচের সংখ্যা বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত কঠিন করে তুলেছে। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিক ও দরিদ্র মানুষ প্রবল অসুবিধায় পড়ছেন। প্রবীণ নাগরিকদের টিকিটে ছাড় পাওয়ার ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়েছে।

এর বিরুদ্ধে যুব সংগঠন এআইডিওয়াইও-র সর্বভারতীয় কমিটি ১২ সেপ্টেম্বর দেশ জুড়ে প্রতিবাদ দিবসের ডাক দিয়েছিল। অবিলম্বে সমস্ত শূন্যপদ পূরণ এবং পরিষেবা সম্প্রসারণের জন্য আরও বেশি কর্মী নিয়োগ, রেলের বেসরকারিকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ করা, অসংরক্ষিত দ্বিতীয় শ্রেণি ও স্লিপার কোচের সংখ্যা বৃদ্ধি, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য সম্পূর্ণ অসংরক্ষিত ট্রেন চালু, প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ট্রেন ভাড়ায় ছাড় পুনরায় চালু প্রভৃতি দাবিতে তারা বিক্ষোভ দেখায়। তৎকাল প্রিমিয়ামের নামে জুলুমবাজি বন্ধ, দুর্ঘটনা বন্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবিতে তারা সোচ্চার হন।

পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে রেলের ডিআরএম দফতরে বিক্ষোভ দেখানো হয় ও স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

ত্রিপুরাঃ সংগঠনের ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি এ দিন আগরতলা রেল স্টেশনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে এবং সেখান থেকে এক প্রতিনিধিদল রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের উদ্দেশে এক স্মারকলিপি স্টেশন ম্যানেজারের হাতে তুলে দেন।

পশ্চিমবঙ্গঃ শিয়ালদহ, মালদা, আসানসোল, শিলিগুডি, আদ্রা ও খড়গপুর– রাজ্যের এই ছ’টি জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও ডিআরএম ডেপুটেশন সংগঠিত হয়। অন্যান্য ডিআরএম দফতরে ইমেল মারফত ডেপুটেশন পাঠানো হয়।

কলকাতাঃ কলকাতায় সংলগ্ন জেলাগুলি থেকে যুবকরা কলেজ স্ট্রিটে এক বিক্ষোভ সভায় সমবেত হন। আর জি করের নির্যাতিতা ‘অভয়া’ স্মরণে শোকবেদিতে মাল্যদান করেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মলয় পাল। এক মিনিট নীরবতা পালন হয়। রাজ্য সম্পাদকের বক্তব্যের শেষে সুসজ্জিত একটি মিছিল শিয়ালদহ স্টেশন অভিমুখে যায়। সেখানে একটি বিক্ষোভ সভা হয়।

এখান থেকে সংগঠনের রাজ্য সহ-সভাপতি কমেরড সুপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে চারজনের প্রতিনিধিদল শিয়ালদহ ডিভিশন-এর ডিআরএমকে ডেপুটেশন দেন। সভা পরিচালনা করেন রাজ্য কোষাধ্যক্ষ কমরেড সঞ্জয় বিশ্বাস। শিয়ালদহ ডিভিশনের ডিআরএম স্মারকলিপিতে উত্থাপিত দাবির সাথে সহমত পোষণ করেন এবং উচ্চতর কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার আশ্বাস দেন।

শিলিগুড়িঃ শহরের এয়ারভিউ মোড় থেকে দুই শতাধিক যুবকের সুসজ্জিত মিছিল হিলকার্ট রোড হয়ে হাসমি চকে বিক্ষোভ অবস্থানে সামিল হন। প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অঞ্জন মুখার্জী। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাদল পাল, সুজয় লোধ, দার্জিলিং জেলা কমিটির ইনচার্জ ধনঞ্জয় রায় প্রমুখ। প্রতিনিধিদল এডিআরএম-এর মাধ্যমে রেলমন্ত্রী ও এডিআরএম (কাটিহার ডিভিশন)-এর কাছে স্মারকলিপি পাঠান। হাসমি চকে আর জি করের নির্যাতিতা ‘অভয়া’ স্মরণে শহিদ বেদি রেখে বিক্ষোভ অবস্থান চলে।

মালদাঃ এ দিন মালদা ডিআরএম দফতরে বিক্ষোভ ও ডেপুটেশনের কর্মসূচি হয়। রথবাড়ি মোড় থেকে কয়েকশো যুবক মিছিল করে রেল দপ্তরের সামনে এসে বিক্ষোভ দেখান। মূল দাবিগুলি ছাড়াও মালদা থেকে হাওড়া-শিয়ালদা পর্যন্ত দুপুরের দিকে প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানো, আজিমগঞ্জ-মালদা প্যাসেঞ্জারকে কাটিহার পর্যন্ত চালানো, মালদা থেকে কাটিহার নতুন প্যাসেঞ্জার ট্রেন সহ বিভিন্ন দাবিতে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। নেতৃত্ব দেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ইসরাফুল হক ও রাজ্য কমিটির সদস্য উজ্জ্বলেন্দু সরকার। বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক মাইতি, সুশান্ত ঢালী প্রমুখ। মিছিলে রেলের দাবি ছাড়াও আরজিকর ঘটনার দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির দাবি তোলা হয়। সভা থেকে জনসাধারণকে রেলের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে এবং সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তার দাবিতে আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।