করোনা পরিস্থিতিতে দেশে লাগামহীন বেসরকারিকরণ ও ব্যবসায়ীকরণের লক্ষ্যে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বেপরোয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গডে তুলতে দেশের আপামর সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানিয়ে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)–এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ৪ জুলাই এক বিবৃতিতে বলেছেন,
কোভিড–১৯ এর সংক্রমণ রোখার নামে গোটা দেশে চলতে থাকা দীর্ঘ লকডাউন পরিস্থিতি বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সামনে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলিসহ সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দ্রুত বেসরকারিকরণ ঘটানোর লক্ষ্যে তাদের সর্বনাশা কর্মসূচিগুলি কার্যকর করার এক সুবর্ণ সুযোগ খুলে দিয়েছে৷ তথাকথিত ‘আত্মনির্ভর ভারত’ –এর ধুয়া তুলে রেল, কয়লা, প্রতিরক্ষা, ব্যাঙ্ক, কৃষির মতো অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের যে সিদ্ধান্ত তারা ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছে তা শোষিত খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে আরও ভয়াবহ এক কঠিন শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে৷
২০১৭ সালে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যখন রেল বাজেটকে সাধারণ বাজেটের সাথে যুক্ত করে দিয়ে রেলব্যবস্থা ও রেলের ভাডা কাঠামো নিয়ন্ত্রণে রেল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (আরডিএ) নামে একটি স্বাধীন সংস্থা গঠনের কথা ঘোষণা করে তখন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলা হয়েছিল সড়ক যোগাযোগ, আকাশপথ ও জলপথে বেসরকারি বিনিয়োগে উৎসাহ যোগানো হবে৷ সমগ্র রেল ব্যবস্থা, যা এতদিন শিরা–উপশিরার মতোই গোটা দেশের যোগাযোগ ও পরিবহণ ক্ষেত্রকে এক অভিন্ন জালে বেঁধে রেখেছিল, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এর বিশাল পরিকাঠামো যেখানে অগণিত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, যা পরিচালিত হত মূলত জনসেবার নীতির ভিত্তিতে৷ সেখানে বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপ গোটা রেল ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ার সূত্রপাত ঘটিয়েছিল৷ বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার রেলের ১৯০–এরও বেশি রুটে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানিয়ে এবং সেখানে ১৫১টি অত্যাধুনিক ট্রেন চালানোর ঘোষণা করে যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে তা বাস্তবে রেলব্যবস্থার বেসরকারিকরণের এই প্রক্রিয়াকে ভবিষ্যতে আরও গতিশীল করবে৷
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বেসরকারিকরণের এই লাগামছাড়া পদক্ষেপের লক্ষ্য হল, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যে সর্বাত্মক বাজার সংকট প্রতিনিয়ত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, যে কারণে একটার পর একটা উৎপাদন ক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, একচেটিয়া মালিকদের বিশাল পুঁজি অলস হয়ে পড়ে থাকছে, সেই পুঁজি খাটানোর জন্য অত্যাবশ্যকীয় জনপরিষেবা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের মতো নতুন নতুন ক্ষেত্র তাদের সামনে খুলে দেওয়া৷ নিশ্চিতভাবেই এই সর্বনাশা নীতি দেশে ব্যাপক কর্মচ্যুতি ও বিশাল কর্মসঙ্কোচন ডেকে আনবে৷ রেল ভাড়া সহ সমস্ত অত্যাবশ্যকীয় চূডান্ত মূল্যবৃদ্ধি ঘটাবে, যার পরিণতিতে একদিকে যখন কর্পোরেট রাঘব–বোয়ালরা এবং বৃহৎ ব্যবসায়ীরা ফুলে ফেঁপে উঠবে, অন্যদিকে তখন দেশের মানুষের জীবনে নেমে আসবে চরম দুঃখ–দারিদ্র–হাহাকা৷ এই বেসরকারিকরণ জনজীবনে কী মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ব্যাপক বেসরকারিকরণ ও ব্যবসায়ীকরণের বর্তমান পরিবেশে চলতে থাকা কোভিড–১৯ অতিমারির ভয়াবহ পরিণতি তা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে৷
দেশের খেটে–খাওয়া শোষিত মানুষকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রূপায়িত এই সর্বনাশা পদক্ষেপকে সাধারণ মানুষ কোনওভাবেই সমর্থন করতে পারে না৷ এর বিরুদ্ধে তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁডাতে হবে৷ গডে তুলতে হবে দীর্ঘস্থায়ী শক্তিশালী আন্দোলন৷