রেলকে বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যায় পদ বিলুপ্তির সিদ্ধান্তও কার্যকর করতে শুরু করে দিল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার৷ সরকার প্রতিটি জেনারেল ম্যানেজারকে জানিয়ে দিয়েছে, সুরক্ষা ছাডা রেলের অন্য কোনও বিভাগে আর নতুন পদে লোক নিয়োগ করা যাবে না৷ গত দু’বছরে যে পদগুলি সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু কর্মী নিয়োগ করা হয়নি, সেগুলিকে বিলুপ্ত করা হবে৷ এ ছাড়াও রেলে যত শূন্যপদ রয়েছে তারও ৫০ শতাংশ এক ধাক্কায় তুলে দিতে হবে৷ সরকারি এই নির্দেশের ফলে লক্ষাধিক শূন্যপদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে৷ এমনকি ৫৫ বছরের বেশি বয়স ও ৩০ বছর চাকরি হয়ে গেলে, অবসর নিতে বাধ্য করা হবে৷
বর্তমান করোনা সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে যেখানে প্রয়োজন আরও অনেক বেশি কর্মসংস্থানের, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের এমন বিপরীত বুদ্ধি কেন? কারণ সরকার রেলের যে সর্বাত্মক বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা নিয়েছে, এই ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই তারই অঙ্গ৷ যত কর্মী কম থাকবে ততই বেসরকারিকরণের সুবিধা হবে৷ ভারতীয় রেলে মোট শূন্য পদের সংখ্যা এখন ২ লক্ষ ৮৭ হাজার৷ সরকার এখনই অন্তত এক লক্ষ পদ বিলুপ্ত করে দিতে চায়৷
কর্মীসঙ্কোচন ও বেসরকারিকরণের পক্ষে বিজেপি সরকারের প্রধান যুক্তি অর্থের অভাব৷ অথচ রেল বাজেটে এই সরকারই দেখিয়েছে, গত আর্থিক বছরে রেলের মোট আয় ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ২১৪ কোটি টাকা এবং খরচ ১ লক্ষ ৯১ হাজার ২০০ কোটি টাকা৷ নিট লাভ ৬ হাজার ১৪ কোটি টাকা৷ বাজেটের হিসাবে প্রতি ১০০ টাকা আয়ে রেলের খরচ ৯৬.২ টাকা৷ তাহলে রেলের মত একটি লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেখানে ১৪ লক্ষ কর্মচারী এবং তাঁদের পরিবারের ৭০ লক্ষেরও বেশি মানুষ যুক্ত৷ বেসরকারিকরণ এবং ছাঁটাই সেই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনে সর্বনাশ নামিয়ে আনবে৷
সরকারের এই সর্বনাশা পদক্ষেপ যদি প্রতিহত করতে হয়, তবে শ্রমিক সংগঠনগুলিকে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ভাবে একদিকে জনসাধারণকে জড়িত করে, অন্য দিকে সব রকমের আপসকামিতার মোকাবিলা করে দুর্বার প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে৷