ভারতীয় রেলের বিভিন্ন কারখানা ও উৎপাদন সংস্থার আধুনিকীকরণের জন্য তৈরি সেন্ট্রাল অর্গানাইজেশন ফর মর্ডানাইজেশন অফ ওয়ার্কশপের ঝাঁপ এ বছরের পয়লা ডিসেম্বর থেকে বন্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রেলমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চ।
মঞ্চের আহ্বায়ক, প্রাক্তন সাংসদ ডাঃ তরুণ মণ্ডল ৩০ অক্টোবর এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়ে বলেন, রেল সহ সামগ্রিক বেসরকারিকরণ বিরোধী নাগরিক প্রতিরোধ মঞ্চের আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে।
রেলের সামগ্রিক বেসরকারিকরণের প্রক্রিয়ায় একের পর এক রেলের কারখানা, অফিস, স্টেশন, বিভাগ, শেড ইত্যাদি হয় বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, নয়ত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আমলে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুততর হয়েছে। ইতিমধ্যে রেলের সাফাই, মেরামত, ক্যাটারিং, মাল পরিবহণ, রেল লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ সহ বহু কাজই বেসরকারি হাতে চলে গেছে। রেলের আটটি প্রোডাকশন ইউনিটকে ব্যক্তি মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য কর্পোরেটাইজড করা হচ্ছে। ১১৯টি রুটে ১৫১ জোড়া বেসরকারি ট্রেন চালানোর জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ১৫০-এরও বেশি স্টেশন বিক্রি হওয়া শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ স্টেশনে টিকিট বিক্রি করার রেলের নিজস্ব ব্যবস্থা একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ৭৬৫০ কোটি টাকায় ২৪ হাজার ৭০০ যন্ত্র কেনা হয়েছিল যে সংস্থায়, সেই সি ও এফ এম ও ডব্লিউ-কেও বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আইআরসিটিসি এবং রেল টেল এই দুটি সংস্থাকেও বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে যুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অরগানাইজেশন ফর অল্টারনেটিভ ফুয়েল নামের সংস্থাটিকেও ইতিমধ্যে গুটিয়ে ফেলা হয়েছে।
এর প্রত্যক্ষ কুফল হিসাবে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে ব্যাপক পরিমাণে আর্থিক বোঝা চাপছে এবং আরও চাপবে। বেসরকারি ভেন্ডারদের কাছে টিকিট কাটতে গিয়ে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। বিভিন্ন প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে এক্সপ্রেস ঘোষণা করে দিয়ে ভাড়া তিন গুণেরও বেশি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রেলের সাড়ে চার লাখ হেক্টরেরও বেশি জমি ব্যবসা করার জন্য বেসরকারি মালিকদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া শুরু হয়েছে। যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি স্টেশনও তালিকায় রয়েছে।
এর ফলে রেল স্টেশন এবং রেললাইন সংলগ্ন ছোট দোকানদার, হকার, ফুটপাথ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাঁরা তাদের জীবন জীবিকা থেকে বঞ্চিত হবেন।
আমরা ভারতীয় রেলের এই বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সাথে সাথে সর্বস্তরের মেহনতি মানুষকে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।