এস ইউ সি আই (সি) রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য গুরুত্ব সহকারে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের সর্বস্তরে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরিস্থিতিতে নির্বাচনী প্রচার স্থগিত রেখে দলের কর্মীরা এবং বিভিন্ন লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থীরা বিপর্যস্ত এলাকায় গিয়েছেন এবং তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। ঝড় আসার আগেই ২৪ মে রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে সরকারকে চিঠি দিয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়েছে। বারবার হওয়া এই বিপর্যয় থেকে জনসাধারণকে রক্ষা করার জন্য সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় স্থায়ী নদীবাঁধ নির্মাণের দাবিতে ‘নদীবাঁধ বাঁচাও কমিটি’ গঠন করে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে। অথচ কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
২৬ মে থেকে ঝড়বৃষ্টিতে বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগণার নদী-সমুদ্র উপকূলবর্তী গোসাবা, বাসন্তী, ক্যানিং, কুলতলী, জয়নগর-২, রায়দিঘি, মথুরাপুর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, সাগর, কাকদ্বীপ, কুলপি, ডায়মন্ডহারবার ও বজবজ-১ ও ২ ব্লক সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীবাঁধ যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় তীরবর্তী জনসাধারণ আশঙ্কিত। উত্তর ২৪ পরগণার হিঙ্গলগঞ্জ, টাকি সহ পুরো এলাকায় একই অবস্থা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নোনা জল ঢুকে চাষের জমির ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। বহু দুর্বল ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। কোথাও কোথাও স্থানীয় জনসাধারণ বৃষ্টির মধ্যেই নদীবাঁধ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। যেসব জায়গায় কিছু মানুষকে নিরাপত্তার জন্য এনে রাখা হয়েছে সেখানে খাদ্য-পানীয়-জলের ব্যবস্থা নিতান্তই অপ্রতুল। জয়নগর এবং কুলতলির প্রাক্তন বিধায়ক কমরেড তরুণ নস্কর ও জয়কৃষ্ণ হালদার ত্রাণশিবিরগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য, পানীয় জল ও আলোর ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে বিডিও, এসডিও এবং সেচের নানা দপ্তরে বারবার জানানো সত্ত্বেও দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এলাকাগুলোতে বেশকিছু দুর্বল ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে, সর্বত্রই গাছ ভেঙে পড়েছে, পান বরোজের ও সবজি চাষেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মৎস্যজীবীদের নৌকাও বহু জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া কিছু পুকুর ডুবে মাছচাষের ক্ষতি হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে কৃষক সহ সকল ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্রায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য পানীয় জলের সংকটও ব্যাপক আকারে দেখা দিয়েছে। উল্লেখিত এলাকাগুলিতে বিডিও, এসডিও এবং সেচ ও বিদ্যুৎ দপ্তরে ইতিমধ্যে দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে জেলাশাসকের কাছে দলের পক্ষ থেকে ঝড় আসার আগেই দাবি জানানো হয় কাঁথি, এগরা, নন্দীগ্রাম, রামনগর, খেজুরি এলাকার সমুদ্র ও নদীতীরবর্তী স্থানগুলি থেকে মানুষজনকে সরাতে হবে।
মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী কমরেড বিশ্বনাথ সরদার পাথরপ্রতিমা ব্লকের হেরম্ব গোপালপুর, রায়দিঘি ব্লকের নগেন্দ্রপুর প্রভৃতি এলাকা জলমগ্ন হওয়ার খবর পেয়ে এলাকায় যান। দুর্গত মানুষদের সাথে কথা বলেন। স্থানীয় কর্মীরা জলমগ্ন মানুষকে উদ্ধার ও ত্রাণের কাজ শুরু করেন। প্রশাসনের কাছে প্রার্থী দাবি জানান, পর্যাপ্ত ত্রাণ দিতে হবে এবং অতি দ্রুত নদী বাঁধ সংস্কার করতে হবে।
জয়নগর কেন্দ্রের প্রার্থী কমরেড নিরঞ্জন নস্কর গোসাবা এবং কুলতলীর নদীবাঁধ এলাকাগুলির খোঁজখবর নেন। তিনি জানান, বাঁধগুলি খুবই জীর্ণ দশা, জোয়ারের জলে যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। প্রশাসনকে সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনীয় ত্রাণের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।
ডায়মন্ডহারবার কেন্দ্রের সাতগাছিয়া, বাওয়ালি, বজবজ এলাকায় বহু গাছ পড়ে গেছে, বিস্তীর্ণ অংশ বিদ্যুৎহীন। দলের প্রার্থী কমরেড রামকুমার মণ্ডল এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেন। দলের কর্মীরা বিপর্যস্ত মানুষদের সাহায্যের জন্য উদ্যোগ নেন। প্রার্থী এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।
উত্তর কলকাতা কেন্দ্রের প্রার্থী ডাঃ বিপ্লব চন্দ্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই ২৭ মে বিকেলে কলেজ স্ট্রিট বাটা, মুক্তারামবাবু স্ট্রিট, তারক প্রামাণিক রোড, রাজা রামমোহন সরণি প্রভৃতি জলমগ্ন এলাকায় পৌঁছে দুর্গত মানুষদের সাথে কথা বলেন এবং জমা জল দ্রুত অপসারণ, এলাকাবাসীদের প্রয়োজনীয় সাহায্যের জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের প্রার্থী কমরেড জুবের রব্বানি পার্ক সার্কাস এলাকার দিলখুশা স্ট্রিট, কড়েয়া থানার সামনে লোয়ার রেঞ্জ এলাকা, ৬৯ নং ওয়ার্ডের রোনাল্ড রোড প্রভৃতি জলমগ্ন এলাকাগুলিতে গিয়ে বিপর্যস্ত মানুষদের সাথে কথা বলেন এবং প্রশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।