* ছ’জনকে বাঁচিয়ে অগ্নিদগ্ধ প্রেম। প্রেমকান্ত বাঘেল। উত্তর-পূর্ব দিল্লির শিববিহার এলাকায় দুষ্কৃতীরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে বেশ কিছু মুসলিম বাড়িতে। আগুনের ব্যুহে আটকে পড়ে তাঁর প্রতিবেশী একটি পরিবার। প্রেমকান্ত আগুনের ভিতর থেকে একের পর এক সদস্যকে বার করে আনতে গিয়ে নিজে অগ্নিদগ্ধ হন। তবুও আটকে ছিলেন এক বৃদ্ধা। তাঁকে বাইরে নিয়ে আসতে গিয়ে তাঁর শরীরের ৭০ শতাংশই পুড়ে যায়। হাসপাতালে তিনি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। শরীরে তাঁর তীব্র দহন জ্বালা। কিন্তু মনে প্রতিবেশীকে বাঁচানোর পরম তৃপ্তি।
* মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল মুস্তাফাবাদ। সেখানে একটি মসজিদে আগুন লাগিয়েছে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু মসজিদ জ্বলতে দেখেও কোনও প্রতিক্রিয়ার শিকার হননি মুসলিম ধর্মাবলম্বী নাগরিকরা। এই এলাকায় রয়েছে একটি শিবমন্দির। মন্দির থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে থাকেন কামরুদ্দিন। স্থানীয় চায়ের দোকানে খাবার সরবরাহ করে সংসার চালান তিনি। কামরুদ্দিন বললেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা একসঙ্গে রয়েছি। কখনও সংঘর্ষের কথা ভাবতেই পারিনি। এই কঠিন সময়ে মানবতা রক্ষা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদ জ্বলে গিয়েছে জানি, কিন্তু মন্দিরে কোনও আঁচ লাগতে দেব না”।
* শিববিহার এলাকায় প্রায় পাঁচশো জনের একটি হিংস্র দল ঢুকে আগুন লাগায়। সালিম কাসারের মাথায় বজ্রাঘাত। চোখের সামনে দেখলেন তাঁর দাদাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারল দুষ্কৃতীরা। প্রাণ বাঁচাতে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে ঢুকে পড়লেন পড়শি এক হিন্দুর বাড়িতে। উন্মত্ত জনতার হাত থেকে তাঁদের বাঁচাতে হিন্দু দম্পতি সালিমের মাথায় কেটে দেন তিলক, আর স্ত্রীর সিঁথিতে দিয়ে দেন সিঁদুর। এভাবেই পরিবারটিকে বাঁচান তাঁরা।
সম্প্রীতির এমন দৃষ্টান্ত দেখা যাচ্ছে একতরফা গণহত্যায় বিধ্বস্ত রাজধানীর অলিতে গলিতে। ভস্মের মাঝে যেন মুক্তো! সভ্যতার সঙ্কট দেখে রবীন্দ্রনাথ গভীর ব্যথায় লিখেছিলেন, ‘মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ’। গণহত্যাকারীরা মানুষে মানুষে বিশ্বাসের ভিতে অনেকখানি ফাটল ধরালেও ঐক্যের রূপোলি রেখাও আছে।