বিশ্বসাম্যবাদী আন্দোলনের মহান নেতা ও রুশ বিপ্লবের রূপকার কমরেড লেনিনের মৃত্যুশতবর্ষ উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে বর্ষব্যাপী কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে ভি আই লেনিনের ‘রাষ্ট্র ও বিপ্লব’ রচনাটি ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। এ বার শেষ কিস্তি।
পন্নেকয়েকের সাথে কাউটস্কির বিতর্ক
কাউটস্কির বিরোধিতা করতে গিয়ে পন্নেকয়েক১ ‘চরম বামপন্থার’ অন্যতম প্রতিনিধি হিসাবে আবির্ভূত হন। এই দলে রোজা লুক্সেমবার্গ, কার্ল রাদেক প্রভৃতিরাও ছিলেন। বিপ্লবী রণকৌশলের কথা বলতে গিয়ে তাঁরা সমস্বরে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, কাউটস্কি ক্রমাগত ‘মধ্যপন্থার’ দিকে ঢলে পড়ছেন। এর ফলে তিনি মার্ক্সবাদ ও সুবিধাবাদের মধ্যে অনৈতিক দোদুল্যমানতায় ভুগছেন। যখন এই মধ্যপন্থী প্রবণতা (যাকে ভুল করে মার্ক্সবাদী বলা হয়), বা কাউটস্কিবাদী প্রবণতা, যুদ্ধের সময় তার সমস্ত কদর্যতা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করল, তখন এই চিন্তার সত্যতা সম্পূর্ণ প্রমাণিত হল।
রাষ্ট্র সম্পর্কে ‘গণসংগ্রাম ও বিপ্লব’ শীর্ষক একটা নিবন্ধে (নিউ জেইট, ১৯১২, খণ্ড ৩০,২) পন্নেকয়েক কাউটস্কির দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘নিরুদ্যম প্রগতিশীলতা’, ‘নিষ্ক্রিয় প্রতীক্ষার তত্ত্ব’ বলে অভিহিত করেছেন। পন্নেকয়েক লিখেছেন, ‘‘বিপ্লবের প্রক্রিয়া বুঝতে কাউটস্কি অস্বীকার করেছেন’’ (পৃষ্ঠা ৬১৬)। বিষয়টাকে পন্নেকয়েক এমনভাবে উপস্থিত করেছেন যা নিয়ে আমাদেরও আগ্রহ আছে, যেমন, রাষ্ট্র সম্পর্কে সর্বহারা বিপ্লবের কর্তব্য।
তিনি লিখেছেন, ‘‘বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে সর্বহারার সংগ্রাম শুধুমাত্র রাষ্ট্রশক্তি দখলের জন্য নয়। বরং এই সংগ্রাম রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে।… সর্বহারা বিপ্লবের মর্মবস্তু হল সর্বহারার শক্তির উপকরণের সাহায্যে রাষ্ট্রযন্ত্রের শক্তিকে ধ্বংস করা, চূর্ণ-বিচূর্ণ করা।… এই সংগ্রাম তখনই থামবে, যখন এর ফলে, রাষ্ট্রশক্তি পুরোপুরি ধ্বংস হবে। সংখ্যালঘু শাসক শ্রেণির সংগঠনকে ধ্বংস করে তখন সংখ্যাগুরুর সংগঠন নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারবে’’ (পৃষ্ঠা ৫৪৮)।
যে তত্ত্বের সাহায্যে পন্নেকয়েক তাঁর চিন্তা প্রকাশ করেছেন তার গুরুতর ত্রুটি আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এর অর্থ পরিষ্কার। যে ভাবে কাউটস্কি এর বিরোধিতা করেছেন তা খুবই মজার।
তিনি লিখেছেন, ‘‘এখন পর্যন্ত, সোসাল ডেমোক্র্যাট ও নৈরাজ্যবাদীদের মধ্যে পার্থক্য হল, সোসাল ডেমোক্র্যাটরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে চায়, আর, নৈরাজ্যবাদীরা চায় রাষ্ট্রকে ধ্বংস করতে। পন্নেকয়েক দুটোই করতে চান।’’ (পৃষ্ঠা ৭২৪)
পন্নেকয়েকের তত্ত্ব সঠিক নয়। তাঁর প্রবন্ধের অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কথা ধরছি না, কারণ বর্তমান বিষয়ের সাথে তার কোনও সম্পর্ক নেই। পন্নেকয়েক যে নীতিগত প্রশ্ন তুলেছেন কাউটস্কিসেই প্রশ্নটাই আঁকড়ে ধরেছেন। এই মৌলিক নীতিগত প্রশ্নে কাউটস্কি মার্ক্সবাদী অবস্থানকে একেবারে পরিত্যাগ করে পুরোপুরি সুবিধাবাদের পক্ষে চলে গেছেন। সোসাল ডেমোক্র্যাট ও নৈরাজ্যবাদীর মধ্যে পার্থক্যের যে সংজ্ঞা তিনি দিয়েছেন তা একেবারেই ভুল। তিনি মার্ক্সবাদকে একেবারে দূষিত করেছেন, বিকৃত করেছেন।
মার্ক্সবাদী ও নৈরাজ্যবাদীদের মধ্যে পার্থক্য হল এই রকমঃ ১) মার্ক্সবাদের লক্ষ্য হল রাষ্ট্রের একেবারে বিলোপ। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দ্বারা শ্রেণি অবলুপ্ত হলেই একমাত্র এই লক্ষ্য অর্জন করা যেতে পারে। এই পথেই রাষ্ট্র বিলীন হয়ে যেতে থাকবে। নৈরাজ্যবাদ একেবারে রাতারাতি রাষ্ট্রের বিলোপ চায়। কোন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের বিলোপ হতে পারে তা তাঁরা বোঝেন না।
২) মার্ক্সবাদ মনে করে, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পর সর্বহারা শ্রেণিকে পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্র একেবারে ধ্বংস করতে হবে এবং তার জায়গায় নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র হবে সশস্ত্র শ্রমিকের সংগঠন, অনেকটা কমিউন ধরনের। অপর দিকে, নৈরাজ্যবাদীরা রাষ্ট্রযন্ত্র ধ্বংসের কথা বললেও, তার জায়গায় সর্বহারা শ্রেণি কী প্রতিষ্ঠা করবে সে সম্পর্কে তাঁদের পরিষ্কার ধারণা নেই, ধারণা নেই সর্বহারা শ্রেণি কী ভাবে বিপ্লবী ক্ষমতা ব্যবহার করবে। এমনকি, বিপ্লবী সর্বহারা শ্রেণির রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করা উচিত, এ কথাও তাঁরা অস্বীকার করেন। তাঁরা সর্বহারা শ্রেণির বিপ্লবী একনায়কত্বও স্বীকার করেন না। ৩) মার্ক্সবাদ মনে করে বর্তমান রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সর্বহারা শ্রেণিকে বিপ্লবের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। নৈরাজ্যবাদীরা তা প্রত্যাখ্যান করে।
এই বিতর্কে কাউটস্কি নন, পন্নেকয়েকই মার্ক্সবাদের পক্ষে। কারণ, মার্ক্স শিখিয়েছেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতবদল করে, সর্বহারা শ্রেণি রাষ্ট্রযন্ত্র দখল করতে পারবে না। বিপ্লব করতে হলে তাকে এই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করতে হবে, তার জায়গায় নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
কাউটস্কিমার্ক্সবাদকে পরিত্যাগ করে সুবিধাবাদীদের শিবিরে যোগ দিয়েছেন। কাউটস্কির যুক্তিধারা থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করার বিষয়টা একেবারেই অদৃশ্য হয়ে গেছে। কারণ সুবিধাবাদীদের কাছে তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি সুবিধাবাদীদের জন্য একটা যুক্তিতে ফাঁক রেখে দিয়েছেন। যার সুযোগে তারা ‘জয় করা’র অর্থকে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন হিসাবে ব্যাখ্যা করতে পারে।
মার্ক্সবাদের এই বিকৃতিকে ঢাকবার জন্য কাউটস্কি মুখস্থ বিদ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি নিজেই মার্ক্স থেকে একটা উদ্ধৃতি দিয়েছেন। ১৮৫০ সালে মার্ক্স লিখেছিলেন, ‘রাষ্ট্রের হাতে সুদৃঢ় কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা থাকা’ প্রয়োজন। এই উদ্ধৃতি দেখিয়ে বিজয়ীর মতো কাউটস্কি জিজ্ঞাসা করেছেন–পন্নেকয়েক কি ‘কেন্দ্রিকতাকে’ ধ্বংস করতে চান?
এ কৌশল ছাড়া কিছু নয়। বার্নস্টাইন যেমন কেন্দ্রিকতা ও ফেডেরালিজমের প্রশ্নে মার্ক্স ও প্রুধোঁকে এক করে দিয়েছিলেন, কাউটস্কিও সেই পন্থা গ্রহণ করেছেন।
কাউটস্কির উদ্ধৃতি ব্যবহার কোনও কাজেই লাগবে না। পুরনো ও নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র– এই দুই ক্ষেত্রেই কেন্দ্রিকতা সম্ভব। যদি শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় তাদের সশস্ত্র শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে, তাকেও কেন্দ্রিকতা বলা হবে।এই কেন্দ্রিকতা তৈরি হবে পুরনো কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রযন্ত্র, স্থায়ী সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আমলাতন্ত্রকে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংসের’ ভিত্তিতে। কাউটস্কিএকেবারে প্রতারকের মতো কাজ করছেন। তিনি কমিউন সম্পর্কে মার্ক্স-এঙ্গেলসের বিখ্যাত যুক্তিকে অবহেলা করে তাঁদের এমন একটা উদ্ধৃতি খুঁজে বের করেছেন, যার সাথে আলোচ্য বিষয়ের কোনও সম্পর্ক নেই।
কাউটস্কি আরও বলেছেন, ‘‘পন্নেকয়েক সম্ভবত আমলাদের রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম অবলুপ্ত করে দিতে চান? কিন্তু আমরা পার্টি বা ট্রেড ইউনিয়নে কর্মকর্তা ছাড়া কাজ চালাতে পারব না, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে তো পারবই না। রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের অবলুপ্তির কথা আমাদের কর্মসূচি বলে না। বরং বলে, তাঁরা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হবেন।… ‘ভবিষ্যতের রাষ্ট্রের’ প্রশাসনিক যন্ত্র কী রূপ নেবে, এখানে আমরা তা আলোচনা করছি না। আমরা আলোচনা করছি, আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম কি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের আগেই (মোটা হরফ কাউটস্কির) রাষ্ট্রযন্ত্রকে অবলুপ্ত করতে পারে? আমলা সমেত কোন কোন মন্ত্রীর দপ্তরকে অবলুপ্ত করা যেতে পারে’?’ তারপর নাম করা হয়েছে শিক্ষা, বিচার, অর্থ ও যুদ্ধ দপ্তরের। ‘‘না, সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রামের দ্বারা বর্তমান মন্ত্রিসভার কোনও মন্ত্রীই বরখাস্ত হবেন না। … ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে, আমি আবার বলছি, সোসাল ডেমোক্র্যাটরা বিজয় অর্জন করার ফলে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রূপ কী হবে তা আমরা আলোচনা করছি না। আমাদের বিরোধিতার ফলে বর্তমান রাষ্ট্রের কী পরিবর্তন হবে, আমরা সেটাই আলোচনা করছি।’’ (পৃষ্ঠা, ৭২৫)
নিঃসন্দেহে, এ একটা কৌশল। পন্নেকয়েক বিপ্লবের কথা তুলেছিলেন। এই প্রবন্ধের শিরোনাম এবং উপরের উদ্ধৃত অনুচ্ছেদ পরিষ্কার তাই বলছে। এই প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে ‘বিরোধিতার’ কথা তুলে কাউটস্কিবিপ্লবী মতবাদকে সুবিধাবাদ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেছেন। তিনি যা বলেছেন তার অর্থ দাঁড়ায়– এখন আমরা বিরোধী, ক্ষমতা দখলের পরে আমরা কী হব, তা আমরা পরে বিচার করে দেখব। বিপ্লব উবে গেল! ঠিক এই জিনিসটাই সুবিধাবাদীরা চাইছেন।
বিরোধী ভূমিকা ও সাধারণভাবে রাজনৈতিক সংগ্রাম এখানে আলোচ্য বিষয় নয়। আমাদের আলোচ্য বিষয় হল বিপ্লব। বিপ্লবের অর্থ হল, সর্বহারা শ্রেণি সমগ্র ‘প্রশাসনিক কাঠামো’ ও সমগ্র রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করে নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে তাকে প্রতিস্থাপিত করবে। এই নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র সশস্ত্র শ্রমিক নিয়ে গঠিত। কাউটস্কি‘মন্ত্রিসভার’ প্রতি একটা ‘কুসংস্কারমূলক শ্রদ্ধা’ দেখাচ্ছেন। কিন্তু কেন? সর্বশক্তিমান, সার্বভৌম শ্রমিক-সৈনিক সোভিয়েতের অধীনে কর্মরত বিশেষজ্ঞদের কমিটি কি তাঁদের প্রতিস্থাপিত করতে পারবে না?
‘মন্ত্রিসভা’ থাকবে কি না, বা ‘বিশেষজ্ঞদের কমিটি’ বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হবে কি না, এ সব একেবারেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। বিষয়টা হল পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্র (যা বুর্জোয়াদের সাথে হাজারো বন্ধনে আবদ্ধ, যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে গতানুগতিকতা ও জড়ত্ব জমাট বেঁধে আছে) থাকবে কি না, অথবা নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা তাকে ধ্বংস ও প্রতিস্থাপিত করা হবে কি না। বিপ্লব মানে এ নয় যে, নতুন শ্রেণি পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্রের সাহায্যে দমন ও শাসন করবে। বরং বিপ্লবের অর্থ হল, নতুন শ্রেণি পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করবে এবং নতুন রাষ্ট্রযন্ত্রের সাহায্যে দমন ও শাসন করবে। কাউটস্কি মার্ক্সবাদের এই মূল ধারণাকে চেপে গেছেন বা একেবারেই তিনি তা বুঝতে পারেননি।
আমলাদের সম্পর্কে তাঁর প্রশ্ন পরিষ্কার দেখিয়ে দেয়, মার্ক্সের বা কমিউনের শিক্ষাকে তিনি বুঝতে পারেননি। ‘কর্মকর্তাদের ছাড়া এমনকি পার্টিতে বা ট্রেড ইউনিয়নে আমরা কাজ চালাতে পারব না।’
বুর্জোয়া শাসনে, পুঁজিবাদে আমরা আমলা ছাড়া কাজ চালাতে পারব না। সর্বহারা শ্রেণি নিপীড়িত, শ্রমজীবী জনগণ পুঁজিবাদের দাসত্ব বন্ধনে আবদ্ধ। পুঁজিবাদে মজুরি দাসত্বের নানাবিধ শর্ত এবং জনগণের অভাব-দারিদ্রের জন্য গণতন্ত্র সীমাবদ্ধ, সংকুচিত, খণ্ডিত, বিকৃত। রাজনৈতিক সংগঠন ও ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তারা একমাত্র এই কারণেই দুর্নীতিগ্রস্ত বা আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে তাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার দিকে ঝোঁকে। পুঁজিবাদী পরিবেশের জন্য তাঁরা আমলায় অর্থাৎ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, জনগণের ঊর্ধ্বে, বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যক্তিতে পরিণত হওয়ার দিকে ঝোঁকেন।
এই হল আমলাতন্ত্রের মর্মবস্তু। এবং যতদিন পুঁজিপতিদের সম্পদ কেড়ে নেওয়া না যাবে, যতদিন বুর্জোয়াদের উচ্ছেদ করা না যাবে, ততদিন এমনকি সর্বহারা শ্রেণির কর্মকর্তারাও অবশ্যম্ভাবী রূপে কিছুটা হলেও ‘আমলাতান্ত্রিক’ হয়ে পড়বে।
কাউটস্কির মতে যেহেতু সমাজতন্ত্রের নির্বাচিত কর্মকর্তা থাকবে, সরকারি কর্মকর্তা থাকবে, তাই আমলাতন্ত্রও থাকবে! ঠিক এইখানেই তিনি ভুল করেছেন। কমিউনের উদাহরণ দিয়ে মার্ক্স দেখিয়েছেন, সমাজতন্ত্রের সরকারি কর্মকর্তারা আর ‘আমলা’ থাকবে না। সরকারি কর্মকর্তাদের নির্বাচন এবং তাদের ফিরিয়ে আনার নিয়ম যে অনুপাতে কার্যকর করা যাবে, তাদের বেতন গড়পড়তা একজন মজুরের বেতনের পর্যায়ে যে অনুপাতে নামিয়ে আনা যাবে, এবং সংসদীয় প্রতিষ্ঠানকে আইন ও প্রশাসন এই দুই ক্ষেত্রেই কার্যকর একটা প্রতিষ্ঠান দ্বারা যে অনুপাতে প্রতিস্থাপিত করা যাবে, সেই অনুপাতে সরকারি কর্মকর্তারা আর আমলা থাকবে না।
আসল কথা হল, পন্নেকয়েকের বিরুদ্ধে কাউটস্কির সমস্ত যুক্তি, বিশেষ করে তাঁর অপূর্ব বক্তব্য, এমনকি পার্টি ও ট্রেড ইউনিয়নেও আমরা আমলা ছাড়া চলতে পারবো না– সাধারণভাবে মার্ক্সের বিরুদ্ধে বার্নস্টাইনের পুরনো ‘যুক্তির’ পুনরাবৃত্তি ছাড়া কিছু নয়। তাঁর দলত্যাগের সাক্ষ্য বহনকারী গ্রন্থ ‘দি প্রেমিসেস অব সোসালিজম’-এ বার্নস্টাইন ‘আদিম’ গণতন্ত্রের ধারণার বিরোধিতা করেছেন। এই আদিম গণতন্ত্রকে তিনি ‘তত্ত্বসর্বস্ব গণতন্ত্র’ বলেছেন। তাঁর মতে এই গণতন্ত্রের রূপ হল– অবশ্যপালনীয় হুকুম, বিনা বেতনের কর্মচারী, অক্ষম কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সংস্থা, ইত্যাদি। এই ‘আদিম গণতন্ত্র’ অকার্যকর, তা প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি ওয়েব দম্পতির ব্যাখ্যা মোতাবেক ব্রিটিশ ট্রেড ইউনিয়নের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বিরক্তির সাথে বলেছেন, ‘চরম স্বাধীনতায়’ সত্তর বছরের বিকাশ ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে এই বিষয়ে প্রত্যয়ী করেছে, আদিম গণতন্ত্র কোনও কাজের নয়। তাই তারা এই গণতন্ত্রকে আমলাতন্ত্র সহ সংসদীয় ব্যবস্থা দ্বারা অর্থাৎ সাধারণ গণতন্ত্র দ্বারা প্রতিস্থাপিত করেছে।
বাস্তব ঘটনা হল, ট্রেড ইউনিয়নের বিকাশ ‘চরম স্বাধীনতার মধ্যে’ হয়নি। ট্রেড ইউনিয়নের বিকাশ হয় চরম পুঁজিবাদী দাসত্বে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই ব্যবস্থায় বর্তমান পাপাচার, হিংসা, মিথ্যাচারকে উৎসাহিত করা হয়, ‘উচ্চ আমলাতন্ত্র’ থেকে গরিবদের বাদ দেওয়াকে ‘এড়িয়ে যাওয়া যায় না’। সমাজতন্তে্র ‘আদিম’ গণতন্ত্রের অনেকটাই নিশ্চিতরূপে ফিরিয়ে আনা হয়। কারণ, সভ্য সমাজের ইতিহাসে এই প্রথম, জনগণ স্বাধীন ভূমিকা গ্রহণ করার স্তরে উঠবে। উঠবে শুধু ভোট দেওয়া আর নির্বাচনী ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নয়, দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজকর্ম করার যোগ্যতাও তারা অর্জন করবে। সমাজতন্ত্রের সবাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরিচালনা করবে, এবং কোনও শাসক ছাড়াই তারা কাজেকর্মে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে।
মার্ক্সের বিচার-বিশ্লেষণী প্রতিভা অনুধাবন করতে পেরেছিল, কমিউনের ব্যবহারিক পদক্ষেপই হল ইতিহাসে নতুন দিনের সূচনা। এই নতুন দিনকেই সুবিধাবাদীরা ভয় পায়, একে তারা স্বীকার করতে চায় না। কারণ তারা ভীরু, তারা কখনওই বুর্জোয়াদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় না। এই কথা নৈরাজ্যবাদীরা অনুধাবন করতে চায় না। কারণ, হয় তাদের খুব তাড়া আছে, আর না হয় তারা মহান সামাজিক পরিবর্তনের শর্তগুলো আদৌ বোঝে না। ‘আমরা এমনকি পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভাঙার চিন্তা করব না, আমাদের মন্ত্রী আমলা না হলে চলবে কী করে’?– সুবিধাবাদীদের যুক্তি হল এই রকম। এই সুবিধাবাদীরা সম্পূর্ণ রূপে কূপমণ্ডুক চিন্তায় নিমজ্জিত। এরা শুধু বিপ্লবে বিশ্বাস করে না, বিপ্লবের সৃজনী ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না তাই নয়, তারা বিপ্লবকে মৃত্যুর মতো ভয় পায় (আমাদের মেনশেভিক ও সোসালিস্ট রেভলিউশনারিদের মতো)।
‘‘আমরা অবশ্যই শুধু পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করার কথা ভাবব, আগের সর্বহারা বিপ্লবের সুনির্দিষ্ট শিক্ষা কী বা যা ধ্বংস করা হল তার জায়গায় কী বসাতে হবে, এবং কেমন করে বসাতে হবে, এ সব অনুসন্ধান করে কোনও লাভ নেই।’’ এই হল নৈরাজ্যবাদীদের যুক্তি। (এই যুক্তি সর্বোত্তম নৈরাজ্যবাদীদের। এ যুক্তি ক্রপটকিন ও তাঁর অনুগামীদের নয়, যাঁরা কোনওক্রমে বুর্জোয়াদের পিছনে পিছনে চলে) স্বাভাবিকভাবে, নৈরাজ্যবাদীদের রণকৌশল হতাশার রণকৌশলে পরিণত হয়। তা গণআন্দোলনের ব্যবহারিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে সুনির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য নির্মম সাহসী বিপ্লবী উদ্যমে পরিণত হয় না।
এই দুই ধরনের ভ্রান্তিকে এড়িয়ে চলার শিক্ষা মার্ক্স আমাদের দিয়েছেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, সমগ্র পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভাঙার কাজে চূড়ান্ত সাহসের সাথে এগিয়ে যাও। সাথে সাথে তিনি শিখিয়েছেন, প্রশ্নটিকে সুনির্দিষ্ট ভাবে রাখোঃ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কমিউন নতুন সর্বহারা রাষ্ট্র গঠনের কাজ শুরু করে দিয়েছিল। বিস্তৃত গণতন্ত্র অর্জন করার জন্য এবং আমলাতন্ত্রকে সমূলে উৎপাটিত করার জন্য কমিউন এই এই কাজ করেছিল। আসুন, আমরা কমিউনার্ডদের কাছ থেকে বিপ্লবী সাহসিকতার শিক্ষা গ্রহণ করি।
আসুন আমরা দেখি, বাস্তব কার্যক্রম গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁরা দ্রুত ও তখনই করা যায়, এই ধরনের কী কী পদক্ষেপের রূপরেখা গ্রহণ করেছিলেন। আর তারপর সেই পথ অনুসরণ করে আমরা আমলাতন্ত্রকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করব।
এইভাবে আমলাতন্ত্রকে ধ্বংসের সম্ভাবনা নিশ্চিত। নিশ্চিত এই কারণে, সমাজতন্ত্র কাজের দিন কমিয়ে দেবে, জনগণকে একটা নতুন জীবনে উন্নীত করবে, এবং এমন একটা পরিবেশ রচনা করবে যেখানে অধিকাংশ জনগণের প্রত্যেকেই ‘রাষ্ট্রীয় কাজকর্ম’ করতে পারবে। এর কোনও ব্যতিক্রম থাকবে না। এই পরিবেশ সাধারণভাবে সব ধরনের রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণ বিলোপের পথে নিয়ে যাবে।
কাউটস্কিআরও বলেছেন, ‘‘জনগণের ধর্মঘটের উদ্দেশ্য কোনওমতেই রাষ্ট্রকে ধ্বংস করা হতে পারে না। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হল, নির্দিষ্ট বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে জোর করে দাবি আদায় করা বা সর্বহারা শ্রেণির প্রতি খানিকটা সহানুভূতিসম্পন্ন সরকার দিয়ে একটা শত্রু ভাবাপন্ন সরকারকে অপসারিত করা।… কিন্তু কোনও পরিস্থিতিতেই (অর্থাৎ, শত্রুভাবাপন্ন সরকারের উপর সর্বহারা শ্রেণির বিজয়) তা রাষ্ট্রকে ধ্বংস করার দিকে যেতে পারে না। শুধু রাষ্ট্রের মধ্যেই শ্রেণি সম্পর্কের খানিকটা অদল বদল হতে পারে। এখানে আমাদের রাজনৈতিক সংগ্রামের লক্ষ্য হল, সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং সংসদকে সরকারের পরিচালক হিসাবে রূপান্তরিত করে, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা।’’ (পৃষ্ঠা ৭২৬,৭২৭,৭৩২)
এ একদম খাঁটি ও নিকৃষ্ট সুবিধাবাদ ছাড়া কিছু নয়। নামেই বিপ্লব, কার্যক্ষেত্রে বিপ্লবকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া। ‘‘সর্বহারার প্রতি নমনীয় সরকার’’ ছাড়া কাউটস্কিআর বেশি কিছু চিন্তা করতে পারেননি। যেখানে ১৮৪৭ সালে কমিউনিস্ট ইস্তাহার ঘোষণা করেছিল, ‘‘শাসক শ্রেণি হিসাবে সর্বহারার সংগঠন’’ প্রয়োজন, এই পণ্ডিতমূর্খ সুলভ উদ্ভট কল্পনা তার থেকে এক ধাপ পিছিয়ে গেল।
কাউটস্কিকে শিয়েডমান, প্লেখানভ, ভান্ডারভেল্ডদের সাথে তাঁর পরমপ্রিয় ‘‘ঐক্য’’ গড়ে তুলতে হবে। এঁরা সবাই ‘‘সর্বহারার প্রতি অনেক নমনীয়’’ সরকারের জন্য লড়াই করতে রাজি আছেন। কিন্তু সমাজতন্ত্রের প্রতি এই সব বিশ্বাসঘাতকদের সাথে আমাদের সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্রকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করার জন্য আমরা সংগ্রাম করব। সংগ্রাম করব, যাতে সশস্ত্র সর্বহারারা নিজেরাই সরকারে পরিণত হয়। এই দুটি বিষয় অনেক অনেক আলাদা।
কাউটস্কিকে লেগিয়েনস ও ডেভিড, প্লেখানভ, পত্রেসভ, সেরেতেলি ও চার্নভদের আরামদায়ক সঙ্গ উপভোগ করতে হবে। এঁরা ‘সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে’ সংসদকে ‘সরকারের পরিচালক’ হিসাবে রূপান্তরিত করে ‘রাষ্ট্রের মধ্যে শ্রেণি সম্পর্কের অদল বদল’ করতে খুবই রাজি আছেন। খুবই মহান উদ্দেশ্য! এর পুরোটাই সুবিধাবাদীদের কাছে গ্রহণযোগ্য। এটা বুর্জোয়া প্রজাতন্ত্রের সংসদীয় ব্যবস্থার সীমার মধ্যে সমস্ত কিছুকে বেঁধে রাখে।
কিন্তু আমরা সুবিধাবাদীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো। আর এই সংগ্রামে সমস্ত শ্রেণি সচেতন সর্বহারা আমাদের সাথে থাকবেন। থাকবেন, ‘শ্রেণি সম্পর্ক অদল বদল করার জন্য নয়’, থাকবেন বুর্জোয়াদের উচ্ছেদ করার জন্য, বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য, কমিউন ধাঁচের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের জন্য, বা শ্রমিক সৈনিকদের ডেপুটিদের সোভিয়েতের জন্য, থাকবেন সর্বহারার বিপ্লবী একনায়কত্বের জন্য।
আন্তর্জাতিক সমাজতন্ত্রের কাউটস্কির দক্ষিণ হস্ত হিসাবে কাজ করা নানা ধারা আছে। যেমন, জার্মানিতে সোসালিস্ট মান্থলি (লেগিয়েন, দাভিদ, কোলব ও অন্যান্য অনেকে। এদের সাথে আছেন স্ক্যান্ডিনেভিয়ার স্টানিং ও ব্রান্টিং), ফ্রান্স ও বেলজিয়ামে জুরেস ও ভ্যান্ডারভেলডদের অনুগামীরা, তুরাতি, ট্রেভেস সহ ইতালির পার্টির দক্ষিণপন্থীদের অন্যান্য প্রতিনিধিরা, ইংল্যান্ডের ফেবিয়ান ও ‘‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট’’রা (দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি, বাস্তবে যারা সব সময় লিবারেলদের উপর নির্ভরশীল)। এই রকম আরও অনেকে আছেন। এই সব ভদ্রমহোদয়েরা তাঁদের দলের সংসদীয় কাজকর্ম ও প্রেসের সাথে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই উল্লেখযোগ্য ও কখনও কখনও মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এরা সরাসরি সর্বহারা একনায়কত্বকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং খোলাখুলি সুবিধাবাদী নীতির পক্ষে ওকালতি করেন। এই সব ভদ্রমহোদয়দের চোখে, সর্বহারা ‘একনায়কত্ব’ গণতন্ত্রের‘বিরোধিতা’ করে!! এদের সাথে বাস্তবে পেটি বুর্জোয়া গণতন্ত্রীদের মর্মবস্তুতে কোনও পার্থক্য নেই।
এই পরিস্থিতিকে বিচার করে, আমরা সঠিকভাবেই সিদ্ধান্ত করেছি, দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের ঘোষিত প্রতিনিধিদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সম্পূর্ণ সুবিধাবাদের পাঁকে ডুবে গেছে। কমিউনের অভিজ্ঞতা শুধু ভুলে যাওয়া হয়নি, তাকে বিকৃত করা হয়েছে। শ্রমিকদের সংগ্রামে নামার সময় এগিয়ে আসছে, সংগ্রামে তাঁদের নামতেই হবে, পুরনো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করে তাকে নতুন রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে হবে। এইভাবে তাঁদের শাসন হবে সমাজের সমাজতান্ত্রিক পুনর্গঠনের ভিত্তি। শ্রমিকদের অন্তরে এই সব চিন্তার নিরন্তর অনুশীলন করানো তো দূরের কথা, এর বিপরীত উপদেশই তাঁরা বাস্তবে শ্রমিকদের দিচ্ছেন এবং ‘ক্ষমতা জয়ের’ বিষয়টা এমনভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বর্ণনা করছেন যাতে তার মধ্যে সুবিধাবাদের জন্য হাজার গণ্ডা পলায়নের রাস্তা খোলা থাকে।
রাষ্ট্রের সাথে সর্বহারা বিপ্লবের সম্পর্কের প্রশ্নকে বিকৃত করা বা গোপন করার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন না করে পারে না। কারণ, এই সময় রাষ্ট্রের হাতে সামরিক যন্ত্র আছে। সাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতার ফলে এই সামরিক যন্ত্র বিস্তৃত হয়ে সামরিক দানবে পরিণত হয়েছে। এই সামরিক দানব লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করছে। হত্যা করছে, ইংল্যান্ড না জার্মানি, এই লগ্নি পুঁজি না ওই লগ্নি পুঁজি দুনিয়াকে শাসন করবে, তা নিষ্পত্তির জন্য। (শেষ)
১। পন্নেকয়েকঃ ডাচ সমাজতন্ত্রী লেখক। এক সময় মার্ক্সবাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি জার্মান পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ লিখতেন। পরবর্তীকালে তাঁর চিন্তার অনেক পরিবর্তন ঘটে।