অবশেষে ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ল৷ রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা সংক্রান্ত বিতর্কে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ফ্রান্সের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ৷ বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা সংক্রান্ত পুরনো চুক্তিকে বদল করে নয়া চুক্তি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ পুরনো চুক্তিতে প্রতিটি যুদ্ধবিমানের দাম ছিল ৫২৬ কোটি টাকা৷ নতুন চুক্তিতে দাম তিনগুণের বেশি বাড়িয়ে ১,৬৭০ কোটি টাকা করা হয়েছে৷ সাথে সাথে পুরনো চুক্তি থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)–কে বাদ দিয়ে নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি অনিল আম্বানির সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়েছে৷ অভিযোগ ছিল, নরেন্দ্র মোদি নতুন করে চুক্তি করার মাত্র দশ দিন আগে আম্বানি রাতারাতি রিলায়েন্স ডিফেন্স ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন৷
কোম্পানিটি এ বিষয়ে একেবারেই অনভিজ্ঞ এবং আর্থিকভাবে দেউলিয়া৷ কোম্পানিটিকে হঠাৎ করে তৈরি করাই হয়েছে শিল্পপতি আম্বানিকে এই বিরাট অঙ্কের বরাত পাইয়ে দেওয়ার জন্যই৷ অভিযোগ থেকে বাঁচতে দু’দেশের সরকারি মহল থেকে জানানো হয়েছিল, ফ্রান্সের দাসাউ অ্যাভিয়েশন (যে সংস্থাটির সঙ্গে ভারত সরকারের রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয় সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল) নিজেরাই রিলায়েন্স গোষ্ঠীকে তাদের ভারতীয় অংশীদার হিসেবে বেছে নিয়েছে৷ এর সাথে সরকারের কোনও যোগ নেই৷ কিন্তু একথা যে মিথ্যা, তা প্রমাণ হয়ে গেল ওলাঁদের সাম্প্রতিক মন্তব্যে৷ পর পর দু’দিন দু’টি সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, দাসাউ–এর ভারতীয় সহযোগী হিসেবে আম্বানির সংস্থার নাম ঠিক করে দিয়েছিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি৷ উল্লেখ্য, রাফাল চুক্তির সময় ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ছিলেন ওলাঁদ৷ রাফাল দুর্নীতিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদির জড়িত থাকার অভিযোগ ওলাঁদের এই বিবৃতিতে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল৷ এই ঘটনায় দেশের নেতা–মন্ত্রী–কর্ণধার সাথে শিল্পপতি পুঁজিপতিদের সংযোগ আবার দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেল৷ এ ঘটনা আরও পরিষ্কার হয় যখন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং বিজেপির তাবড় মুখপাত্ররা একযোগে দাবি করতে থাকেন হ্যাল–এর এই উন্নত প্রযুক্তির বিমান তৈরির পরিকাঠামো নেই বলেই দাসাউ কোম্পানি আম্বানিদের বেছে নিয়েছে৷ যা শুনে তীব্র প্রতিবাদ করেছে হ্যালের প্রাক্তন ডিরেক্টর এবং একাধিক এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার৷ তাঁদের বক্তব্য, হ্যাল অত্যন্ত উচ্চমানের যুদ্ধবিমান তৈরিতে যথেষ্ট দক্ষ৷ সে জায়গায় বরাত পাওয়ার ১০ দিন আগে হঠাৎ গজিয়ে ওঠা আম্বানির কোম্পানি একেবারেই আনাড়ি৷ বাস্তব তথ্যও তাই– আম্বানিরা বহু যন্ত্রাংশই হ্যাল থেকে করিয়ে নিয়ে নিজেদের নামে বিমানে জুড়বে৷ এটাই পরিকল্পনা৷ অর্থাৎ দেশের মানুষের রক্ত জল করা ট্যাক্সের টাকার অবাধ লুঠের ব্যবস্থা হয়েছে৷
মুখে জনদরদের কথা বলতে বলতে কীভাবে এরা শিল্পপতিদের সেবা করে যায়৷ মোদি দেশের নিরাপত্তার জন্য দু’বেলা মড়াকান্না কাঁদছেন, প্রতিবেশী পাকিস্তানের আক্রমণের জিগির তুলে প্রতিরক্ষা বরাদ্দ বাড়াচ্ছেন আর জনগণের ট্যাক্সের সেই টাকা বন্ধু শিল্পপতির পকেটে ঢোকানোর ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন৷ তার জন্য নিজে থেকেই আগবাড়িয়ে যুদ্ধ বিমানের দাম বাড়াচ্ছেন আর গোপনে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে চুক্তি থেকে হঠিয়ে দিচ্ছেন প্রিয় শিল্পপতির স্বার্থে৷ এই পদলেহনের পুরস্কার হিসাবে ‘কাটমানি’র প্রসাদেই বিজেপি নেতারা ফুলে ফেঁপে উঠছেন৷
(৭১ বর্ষ ১১ সংখ্যা ১২ – ১৮ অক্টোবর, ২০১৮)