জনগণকে ভরতুকি দেওয়ার কথা উঠলেই সরকার বলে টাকা নেই৷ অথচ ব্যবসায়ী–পুঁজিপতিদের নেওয়া অনাদায়ী ঋণের কারণে ধুঁকতে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোকে বাঁচাতে ৭০,০০০ কোটি টাকা জোগাতে সরকারের টাকার অভাব হল না৷ বিগত কংগ্রেস সরকারের আমলে যখন গ্যাসের উপর থেকে ভরতুকি তুলে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল, তখন জনগণের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে তা থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হয় কংগ্রেস সরকার৷ পরে পরিবার পিছু বছরে ১২টি ভরতুকিযুক্ত সিলিন্ডার এবং প্রাপ্য ভরতুকির টাকা সরাসরি গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার নিয়ম চালু হয়৷ ঠিক হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দামের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে প্রতি মাসের প্রথম দিকে রান্নার গ্যাসের দাম সরকার ঘোষণা করবে৷ নিয়মানুসারে গ্রাহকদের ভরতুকিযুক্ত এবং ভরতুকি বিহীন গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হয় একই মূল্যে৷ ভরতুকির প্রাপ্য টাকা জমা পড়ে গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে৷ কংগ্রেস আমল থেকে শুরু করে বিজেপি আমলের গ্রাহকের প্রাপ্য ভরতুকির পরিমাণ কমতেই থাকছে৷ বাড়তে থাকছে রান্নার গ্যাসের দাম৷ টান পড়ছে গৃহস্থের পকেটে৷
বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পুঁজিপতিদের আর্শীর্বাদধন্য মোদি–২ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ বছর প্রায় প্রতিমাসেই দাম বেড়েছে রান্নার গ্যাসের৷ তবু জুলাই পর্যন্ত একই নিয়মে চললেও আগস্ট মাসে এসে ভরতুকিযুক্ত রান্নার গ্যাসের দামই ঘোষণা করেনি কেন্দ্রীয় সরকার৷ জুলাই মাস থেকে ভরতুকির পরিমাণ (১৬৫.০৩ টাকা) অর্ধেকের বেশি কমেছে আগস্ট মাসে (৭৪.০৫ টাকা)৷ উজ্জ্বলা যোজনায় প্রাপ্ত গ্রাহকদের ভরতুকির থেকে যা বেশ কম৷ তবে কি রান্নার গ্যাস, কেরোসিন তেলের মতো অবশ্যপ্রয়োজনীয় জ্বালানির উপর থেকে ভরতুকি তুলে দিয়ে বাজার মূল্যে আমজনতাকে কিনতে বাধ্য করার কংগ্রেসী নীতিকেই বহাল রাখতে বিজেপি সরকার চায়, আগে যতই মৌখিক বিরোধিতা করুক না কেন৷ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার সুফল মানুষের কাছে না দেওয়াতেও দড় বিজেপি৷ কিন্তু আর্থিক মন্দার হাত থেকে পুঁজিপতিদের বাঁচাতে বিপুল অঙ্কের বিভিন্ন সাহায্য প্রকল্প ঘোষণা করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ সেই টাকা আসবে কোথা থেকে? কেন– জনগণের উপর আরও ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়ে এবং ভরতুকি কমিয়ে বা তুলে দিয়ে৷
সাগর সাঁতরা, শিবরামপুর, কলকাতা