এ রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে এক হাজার স্কুল বন্ধ হওয়ার মুখে৷ এর মধ্যে শুধু পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলাতেই ৭৩টি এবং কলকাতায় ৭৫টি স্কুল বন্ধ হওয়ার মুখে৷ ছাত্রের সংখ্যা কমে যাওয়াই এর কারণ৷ ছাত্ররা যাচ্ছে কোথায়? স্কুলশিক্ষা দপ্তর বলছে, তারা যাচ্ছে বেসরকারি স্কুলে৷
সর্বশিক্ষা মিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা কমেছে৷ বেড়ে চলেছে বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা৷ বেসরকারি স্কুলগুলির মধ্যে রয়েছে আইসিএসই, সিবিএসই বোর্ডের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল৷ এ ছাড়াও রয়েছে সেই স্কুলগুলি যারা নিজেদের খরচে চলে, কিন্তু পড়ানো হয় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম অনুসারে৷ প্রশ্ন হল, পাঠ্যক্রম এবং সুযোগ–সুবিধা একই হলে সরকারি ও সরকার পোষিত স্কুলের তুলনায় ছাত্ররা দলে দলে বেসরকারি স্কুলের দিকে ছুটছে কেন?
আসলে গলদ গোড়াতেই৷ অল্প কিছু সরকারি স্কুলে ইংরেজি মাধ্যম চালু হলেও শিক্ষকের অভাবে সেগুলি ধুঁকছে৷ শিক্ষক নিয়োগে রাজ্য ভয়াবহভাবে পিছিয়ে৷ এ ছাড়া গত তিন দশক ইংরেজি ভাষা না পড়ানোর কারণে এমনিতেই প্রাথমিকে ছাত্রসংখ্যা কমেছে সরকারি স্কুলে৷ সিপিএম সরকার ইংরেজি তুলে দেওয়ার কারণে বাবা–মায়েরা ঘটিবাটি বেচে হলেও উচ্চ বেতনের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন৷ একই সাথে এইসব স্কুলে পাশ–ফেল নেই৷ স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রসংখ্যা কমেছে সরকারি স্কুলে৷ পরে ইংরেজি ফিরে এলেও তা যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পড়ানো, ইংরেজি শিক্ষার সাথে সম্পর্কহীন ছাত্রদের মন থেকে ইংরেজি ভীতি দূর করা, ইংরেজির ভিত গড়তে উপযুক্ত বই, শিক্ষক নিয়োগ – কোনওটাই তৃণমূল শাসনে গুরুত্ব দিয়ে করা হয়নি৷ অনিবার্যভাবেই ছাত্ররা বেসরকারি স্কুলমুখী হচ্ছে৷
সরকারি স্কুলে পরিকাঠামোর অভাব– ছাত্রদের অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা কম, ক্লাস ভিত্তিক উপযুক্ত সিলেবাস না থাকা, লাইব্রেরি–ল্যাবরেটরি অনুন্নত মান, পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষা পর্ষদের খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত ছাত্রদের সরকারি স্কুলমুখী করার পরিবর্তে স্কুল থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে৷ এই মূল সমস্যাগুলি সমাধানের কোনও চেষ্টা না করে সরকার কার্যত শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিচ্ছে মালিকদের৷
(৭০ বর্ষ ৪১ সংখ্যা ১জুন, ২০১৮)