আক্ষরিক অর্থেই আসমুদ্রহিমাচল জুড়ে চলছে প্রস্তুতি। দক্ষিণের কর্ণাটক, কেরালার মতো যে রাজ্যগুলিতে দলের সংগঠন শক্তিশালী, সেগুলি ছাড়াও অন্য সব রাজ্য থেকেও কর্মী-সমর্থরা ব্রিগেডে আসার প্রস্তুতি চালাচ্ছেন জোর কদমে।
কমরেড শিবদাস ঘোষ ওড়িশার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘুরেছিলেন, সভা করেছিলেন আন্দোলন গড়ে তুলতে, সংগঠন গড়ে তুলতে। রাউরকেলা, কটক, সুকিন্দার বহু প্রবীণ মানুষের মনে সেই স্মৃতি উজ্জ্বল হয়ে আছে। এই সব এলাকায় কর্মীরা ৫ আগস্ট ব্রিগেড সমাবেশের প্রচার করতে গিয়ে এমন বহু মানুষের দেখা পাচ্ছেন যাঁদের স্মৃতিতে আজও বেঁচে আছে সেই দিনগুলোর কথা। ব্রিগেড সমাবেশের ডাক শুনে উজাড় করে দিচ্ছেন সে স্মৃতিভাণ্ডার। মহান নেতার জন্মশতবর্ষের কর্মসূচিতে অশক্ত শরীরেও তাঁরা আসতে চান। উল্লেখ্য, ওড়িশা দুটি গোটা ট্রেন রিজার্ভ করেছে ব্রিগেডে আসার জন্য। একটি ছাড়বে পুরী থেকে, অন্যটি সম্বলপুর থেকে। কোথাও ট্রেনের বেশ কিছু কামরা রিজার্ভ করা হয়েছে, এতেও কুলোবে না। তাই বহু জায়গায় কর্মী-সমর্থকরা আসবেন বাস ভাড়া করে কিংবা সাধারণ ট্রেনে। ফলে গোটা ওড়িশা জুড়েই চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। কর্মীরা জানাচ্ছেন, পুরোপুরি বৃষ্টিনির্ভর এই রাজ্যের চাষিরা এখন চাষের কাজে ভীষণ ব্যস্ত। তা সত্ত্বেও গভীর আবেগ থেকেই ব্রিগেডের সমাবেশে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
বিহারেও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গিয়েছেন কমরেড শিবদাস ঘোষ। গত শতকের সাতের দশকে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে আন্দোলনে এস ইউ সি আই (সি) সমস্ত শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এই রাজ্যে। পুরনো এলাকার সংগঠন ছাড়াও নতুন নতুন এলাকায় সংগঠন গড়ে উঠছে। ব্রিগেডের প্রচারে গিয়েও বহু নতুন জায়গায় যোগাযোগ গড়ে উঠছে। মজফফরপুর থেকে একটি রিজার্ভ ট্রেন আসবে ব্রিগেডের লক্ষ্যে। ভাগলপুর, জামালপুর প্রভৃতি জেলা থেকে বেশ কিছু কামরা রিজার্ভ করা হয়েছে। পাটনা, জাহানাবাদ প্রভৃতি জেলাগুলির কর্মী-সমর্থকরা আসবেন ট্রেনে। গোটা রাজ্য জুড়েই চলছে এ নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি। অসংখ্য সভা করছেন কর্মীরা, শ্রমিক মহল্লাগুলিতে চলছে নিবিড় প্রচার।
ঝড়খণ্ড জুড়েও চলছে ব্যাপক প্রচার। নতুন নতুন এলাকায় কর্মীরা গিয়ে সভা করছেন। গড়ে উঠছে নতুন সংগঠন। বস্তি এলাকাগুলিতে গিয়ে সভা করে ব্রিগেডের সভার প্রচার চলছে। রাজ্যে এই প্রথম কমরেড শিবদাস ঘোষ সম্পর্কে এমন সুনির্দিষ্ট ভাবে প্রচার চলছে। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ কমরেড শিবদাস ঘোষ কত বড় মানুষ ছিলেন জানার পর বলছেন, আমরাও ব্রিগেডে যাব এই মানুষটি সম্পর্কে আরও বেশি করে জানতে। কর্মীদের কাছ থেকে কমরেড শিবদাস ঘোষ সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছেন, তার আকর্ষণেই মানুষ ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের এলাকায় সভা করার জন্য। সভা থেকে পরিকল্পনা করছেন ব্রিগেডে আসার জন্য। রাজ্যের বুদ্ধিজীবীদের একটি অংশও সভার খবর জেনে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
উত্তরপ্রদেশ জুড়েও চলছে ব্রিগেডের প্রচার। নতুন নতুন জায়গায় গড়ে উঠছে সংগঠন। দিল্লির কৃষক আন্দোলন চলার সময়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সম্বল জেলার মতো এলাকাগুলিতে বহু কৃষক যোগাযোগ পাওয়া গিয়েছিল। সেই সব এলাকায় খেটে-খাওয়া মানুষ দলের নেতা-কর্মীদের ডেকে নিয়ে গিয়ে সভা করছেন। সেখান থেকে কৃষকরা যোগ দেবেন ব্রিগেডের সমাবেশে। বেনারসে গড়ে উঠছে নতুন সংগঠন। সেখানেও সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মানুষ ব্রিগেডে আসার। এ ছাড়াও জৌনপুর, লক্ষ্মৌ, এলাহাবাদ, মোরাদাবাদের মতো পুরনো সংগঠিত এলাকাগুলি থেকে আসবেন কর্মী-সমর্থকরা।
ত্রিপুরায় বিজেপির প্রবল সন্ত্রাসের পরিবেশের মধ্যেও কর্মীরা ব্রিগেড সমাবেশের জন্য প্রচার করছেন। পশ্চিম ত্রিপুরা, উত্তর ত্রিপুরা, গোমতী প্রভৃতি জেলা জুড়ে উদ্ধৃতি প্রদর্শনী, বুকস্টল, মিছিল প্রভৃতির মধ্য দিয়ে প্রচার চলছে। খোয়াই ও সিপাহিজলা জেলাতে ছাত্ররা প্রচার কাজ চালাতে গিয়ে নতুন নতুন যোগাযোগ পেয়েছেন। আগরতলা, ধর্মনগর সহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ছোট ছোট বৈঠক হয়েছে। কর্মী-সমর্থকরা ব্রিগেডে আসবেন ট্রেনে করে।
আসামের ১৯টি জেলা জুড়ে ব্রিগেডের প্রচার চালিয়েছেন কর্মীরা। বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, অন্য দলগুলির আঞ্চলিক মানসিকতা মোকাবিলা করেই দলের কর্মীরা কমরেড শিবদাস ষোষের চিন্তাকে ছড়িয়ে দিচ্ছেন রাজ্যের সর্বত্র। জেলায় জেলায় অজস্র ছোট বৈঠক, সভা করেছেন কর্মীরা। ব্রিগেড নিয়ে কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ উল্লেখ করার মতো। দীর্ঘ রেলযাত্রার অসুবিধার কথা কারও মনেও হচ্ছে না। বেশ কিছু এলাকাতে নতুন যোগাযোগ পেয়ে সংগঠনের কাজ শুরু হয়েছে।
এ ভাবেই মানুষের ঘরে ঘরে প্রচার চলছে ২৪টি রাজ্যে। ধারাবাহিক গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে শক্তিবৃদ্ধি ঘটছে এই দলের। সেই বর্ধিত শক্তিরই প্রকাশ ঘটবে ৫ আগস্টের ব্রিগেডে।