রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সোচ্চার হল শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী-বুদ্ধিজীবী মঞ্চ। ১৯ এপ্রিল কলকাতা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে মঞ্চের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষের কারবার ও চরম দুর্নীতি চলছে। খুন, ধর্ষণ, দৈনন্দিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীর নিরাপত্তা চূড়ান্ত বিঘ্নিত। ৩ মার্চ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে অসংখ্য ধর্ষণের ঘটনার উল্লেখ করে মঞ্চের নেতৃবৃন্দ বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযুক্তরা শাসকদলের আশ্রিত। অভিযুক্ত পুলিশকর্মীও। হাঁসখালিতে ধর্ষিতাকে খুন করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে সব প্রমাণ লোপাট করতেই। সেই ধর্ষিতার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীর অসংবেদনশীল মন্তব্য রাজ্যবাসীকে হতবাক করেছে। মুখ্যমন্ত্রীর এরূপ মন্তব্য অপরাধকে লঘু করা এবং অপরাধীকে আড়াল করার নামান্তর, যা তাঁর সাংবিধানিক পদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
এ দিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিভাস চক্রবর্তী, বিমল চ্যাটার্জী, সুজাত ভদ্র, ধ্রুবজ্যোতি মুখোপাধ্যায়, তরুণ মণ্ডল, দিলীপ চক্রবর্তী, আলোক চট্টোপাধ্যায়, অনিতা রায়, কুন্তলা ঘোষ দস্তিদার, সুদীপ্ত দাশগুপ্ত, রূপশ্রী কাহালী, অশোক সামন্ত, অজয় চ্যাটার্জী প্রমুখ। লিখিত বক্তব্য পাঠান মীরাতুন নাহার, শ্যামল চক্রবর্তী, শতরূপা সান্যাল, পল্লব কীর্তনিয়া।
রাজ্যে নির্বাচনী সন্ত্রাস উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শাসকদল জনগণের উপর স্বৈরতন্ত্রের স্টিমরোলার চালিয়ে দেয়। নির্বাচনের আগে শাসক দলের ভূমিকা সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুকূল নয়–লোকসভা, বিধানসভা, পৌরসভা, পঞ্চায়েত নির্বাচনগুলিতে বারবার তা নগ্নভাবে দেখা গেছে। শুধু বিরোধীদের উপরই নয়, শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, খুন প্রভৃতি ঘটনা ঘটে চলেছে। পুলিশ প্রশাসনের দাসসুলভ আচরণ, নীতিহীন রাজনীতি, রাজ্যকে দুর্নীতি-দুর্বৃত্ত-সিন্ডিকেট ও পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে। এসব নিয়ে প্রশ্ন তুললেই এ রাজ্য ‘যোগীরাজ্য’ থেকে ভাল–এই তুলনা টেনে এই ভয়ঙ্কর সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুভব করে মঞ্চের নেতৃবৃন্দ ১০ দফা দাবি কার্যকর করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আহ্বান রেখেছেন। দলীয় রঙ বিচার না করে ধর্ষকদের শাস্তি, পুলিশ প্রশাসনের নিরপেক্ষভাবে কাজ করা, মানবাধিকার রক্ষা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা, চাকরিতে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ, আদালতের বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ না করা ইত্যাদি তার মধ্যে অন্যতম।