পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার কৃতী ছাত্র বিনয় সন্ধ্যার সময় বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়৷ রাত বারোটা বেজে গেলেও সে বাড়ি ফেরেনি৷ পরে তার নিথর দেহটির খোঁজ পাওয়া যায় রাস্তার ধারে৷ অনেকের অনুমান, সারা রাত ধরে বন্ধুদের সাথে অত্যধিক মদ্যপানেই এই নির্মম পরিণতি তদন্তে প্রকৃত কারণ উঠে আসবে হয়ত৷
অনেকেরই মনে আছে কলকাতার বালিগঞ্জে কয়েক বছর আগে (২০১৬) আবেশ দাশগুপ্ত নামে এক স্কুলছাত্র মদ খেয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে যায় এবং বোতলের কাচ ভেঙে তার শরীরে ঢুকে যায়৷ রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে৷ এমন পরিণতির কথা প্রকাশ্যে এলে শিহরিত হয়ে ওঠেন সবাই৷ কিন্তু শুধু একজন বিনয় ঘোষাল বা আবেশ দাশগুপ্ত নয়, এমন লক্ষ হাজার তরতাজা ছেলেমেয়ে প্রতিদিন জীবন্ত লাশে পরিণত হচ্ছে৷ এর দায় কার?
আজকের একটা ছোট্ট শিশু যখন দেখছে মদ্যপানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি অনুমোদন রয়েছে তখন সেটা তার কাছে স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ আপনার কাছে যা গ্রহণযোগ্য নয় বা প্রশ্ন চিহ্ণ তৈরি করে, ছোটদের কাছে তা অত্যন্ত স্বাভাবিক হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে৷ কৈশোর থেকে তাই বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম৷ রক্ষা করার দায় যাদের তারাই আজ তাদের ঠেলে দিচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে৷
আগামী প্রজন্মের কিশোর–কিশোরীদের কাছে আদর্শ চরিত্র, অনুকরণ করবার মতো নিঃস্বার্থ মানুষের দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে হবে৷ শুধু অর্থ রোজগারের জন্য নয়, পডাশুনা করে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার শিক্ষা তুলে ধরতে হবে৷ মদ–জুয়া–সাট্টা–অশ্লীল ছবি প্রদর্শনের সমস্ত রকমের ঢালাও ব্যবস্থা রেখে বিনয় বা আবেশদের মানুষ করা যাবে কি? এ সমস্ত ব্যবস্থা সাজিয়ে রেখে যতই তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করি না কেন, প্রাণে বেঁচে গেলেও তাদের রক্ষা করা যাবে না৷ শাসককুল কোনওদিনই এ দায়িত্ব গ্রহণ করবে না৷ এ সত্য উপলব্ধি করে সঙঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে সে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে সাধারণ মানুষকেই৷
কিংকর অধিকারী,
বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর