ইজরায়েলের ভিতর থেকেই উঠছে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবি। ভারতের মোদি সরকারের মতো ইজরায়েলের নেতানিয়াহু সরকারও ইজরায়েলি নাগরিকদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর নির্মম পুলিশি আক্রমণ নামিয়ে আনছে। সম্প্রতি ইজরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে ‘হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চালাতে শুধুমাত্র ২০২৪ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে তাদের প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। ইজরায়েলি শাসকরা তাদের দেশের পুঁজিপতি শ্রেণি ও বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদের সর্দার মার্কিন শাসকদের স্বার্থে যুদ্ধব্যবসাকে ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে। তাই অস্ত্র পরীক্ষা ও খালাস দুইয়ের প্রয়োজনে সাম্রাজ্যবাদী ইজরায়েল বেছে নিয়েছে গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্যালেস্টিনীয় নাগরিকদের। ২০০৭-এর পর থেকে নানা অজুহাতে পাঁচ পাঁচটি যুদ্ধ চালিয়ে লক্ষাধিক প্যালেস্টিনীয়কে হত্যা করেছে ও গৃহহীন করেছে। কিন্তু সাথে সাথে ইজরায়েলের সাধারণ মানুষের পরিস্থিতিও সঙ্গীন। যুদ্ধ সব সময়তেই পুঁজিপতিদের সাময়িক একটা সঙ্কট থেকে বাঁচায়, সঙ্গে সঙ্গে ডেকে আনে বৃহত্তর সঙ্কট। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এই বিষচক্র থেকে কখনও বেরোতে পারে না। দেখা যাচ্ছে, গত পাঁচ মাসের যুদ্ধের প্রভাবে আজ ইজরায়েলের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার প্রায় ১৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি খোদ রাজধানী তেল-আভিভের বুকে হাজারে হাজারে ইজরায়েলি নাগরিক যুদ্ধাপরাধী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা বলেন যে, আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া এই যুদ্ধে হাজার হাজার সৈন্য আহত হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে কয়েকশো সৈন্য মারা গেছে। আমরা গাজায় এই গণহত্যা বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। সরকার জনগণের স্বার্থের কথা ভেবে সঠিক পদক্ষেপ নিলে এবং ঠিকমতো উভয়পক্ষের বন্দি-বিনিময় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে দেশের আর্থিক অবস্থা আজকের মতো এমন সঙ্কটজনক হত না। চরম ফ্যাসিবাদী ও জায়নবাদী নেতানিয়াহু সরকারের পুলিশ শান্তিপূর্ণ এই আন্দোলনকারীদের নির্মমভাবে জলকামান চালিয়ে দমন করে এবং শতাধিক প্রতিবাদী ইজরায়েলি নাগরিকদের গ্রেপ্তার করে।
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ‘ওয়ার্কার্স ওয়ার্ল্ড’ পত্রিকায় সাংবাদিক মনিকা মুরহেড একটি প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, বিশেষ ভাবে ইজরায়েলের এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী—ইজরায়েলের অর্থনীতির অন্যতম জোগানদার দখলীকৃত জেরুজালেম শহরের পর্যটন শিল্পে সংকট। ৭ অক্টোবর থেকে চলা যুদ্ধের ফলে বিদেশি ও ইজরায়েলি পর্যটক সংখ্যা প্রতি মাসে কয়েক মিলিয়ন থেকে কয়েক হাজারে নেমে এসেছে। শুধু তাই নয়, ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইজরায়েলি ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের হিসাব অনুযায়ী ৫ লাখের বেশি ইজরায়েলি নাগরিক দেশ ছেড়েছেন। রেস্টুরেন্ট, অন্যান্য সমস্ত দোকানপাট ও ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই ইজরায়েলের পর্যটন শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইজরায়েলের নির্মাণ শিল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ শ্রমিক ছিলেন প্যালেস্টিনীয়। কিন্তু বর্তমান যুদ্ধের ফলে এই শ্রমিকরা ইজরায়েল রাষ্টে্র কাজ করতে অনিচ্ছুক। তাই বাধ্য হয়ে ভারত সহ বিভিন্ন এশীয় দেশ থেকে ৭০ হাজার শ্রমিক আনছে ইজরায়েল।
বিশ্ব জুড়ে গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা গণআন্দোলনের চাপে আরব দেশ সহ দক্ষিণ আফ্রিকার বহু দেশের সরকার ইজরায়েলের সাথে তাদের অস্ত্র চুক্তি ও অর্থনৈতিক চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। ইতিমধ্যেই ইউরোপ সহ আরব দেশগুলিতে ইজরায়েলি দ্রব্য বয়কট আন্দোলন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ফলে চাপ বাড়বে জায়নবাদী ইজরায়েলি শাসক ও তাদের গুরু মার্কিন কর্তাদের উপরেও। খোদ ইজরায়েলের মানুষও আজ যুদ্ধ বন্ধ হোক চাইছেন।