যুদ্ধবাজ ইজরায়েলের সাথে ফুটবল ম্যাচ বাতিল করল বেলজিয়াম

প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলি হানাদারির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ব্রাসেলসে

দেশে দেশে যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ঢেউ উঠেছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সঙ্গীত-চলচ্চিত্র জগত, রাস্তাঘাটে সর্বত্র। এ বার তার প্রভাব পড়ল ফুটবল জগতেও। রাজধানী ব্রাসেলসে আগামী সেপ্টেম্বরে হতে চলা ইজরায়েলের সাথে উয়েফা নেশনস লিগের ম্যাচ বাতিল করতে বাধ্য হল বেলজিয়াম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন। প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের একতরফা আক্রমণের বিরুদ্ধে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বারবার। বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে– সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ‘প্যালেস্টাইনকে অবিলম্বে মুক্ত করো, ইজরায়েল প্যালেস্টাইন থেকে হাত ওঠাও’ ইত্যাদি পোস্টার প্রদর্শন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ছাত্র-গবেষকরা। পুলিশের সাথে রাস্তায় ব্যারিকেড ফাইট করেছেন অসংখ্য মানুষ।

যুদ্ধের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের প্রকাশ ফুটবল মাঠেও ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় বেলজিয়াম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন এই ম্যাচ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল। কর্তৃপক্ষ আঁচ করছেন, ব্রাসেলসে ৬ সেপ্টেম্বর ইজরায়েলের সাথে এই ম্যাচ হলে রাস্তা, গ্যালারি কিংবা মাঠে যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ অবশ্যম্ভাবী। তাতে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে। আর প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলের হানাদারির প্রতিবাদে স্থানীয় দর্শকরা যদি এই খেলা বয়কট করে, তা হলে আর্থিক ক্ষতি হবে বিরাট।

প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদী ইজরায়েলের বর্বর আক্রমণের প্রতিবাদে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের মতো বেলজিয়ামের সাধারণ মানুষও বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। ইউরোপের এই দেশটিতে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে। তাতে যোগ দিয়েছেন শত শত মানুষ।

খেলোয়াড়রাও যে নিজস্ব জগৎ ছাড়া অন্য বিষয়ে সচেতন ভাবে ভাবনা-চিন্তা করেন, তার সাম্প্রতিক উদাহরণ ফ্রান্সের ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপে। তিনি নিজের দেশের দক্ষিণপন্থী শক্তিকে রুখে দেওয়ার ডাক দিয়েছেন সাধারণ মানুষকে। বলেছেন, ‘সবার আগে আমি দেশের নাগরিক। অনেকে বলেন, ফুটবলের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলা ঠিক নয়। কিন্তু আমরা কেউ দেশের পরিস্থিতি থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকতে পারি না।’

এর আগেও বিশ্বের লড়াকু মানুষের সমর্থনে বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে দেখা গেছে আর্জেন্টিনার বিশ্বখ্যাত ফুটবলার দিয়েগো মারাদোনাকে। তিনি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এবং বামপন্থী মনোভাবাপন্ন ছিলেন। তিনি তাঁর খেলার বুট তুলে ধরে প্যালেস্টাইনের মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের মতো আর্জেন্টিনার প্রতিটি মানুষ খেলার প্রতিটি পাস এবং গোল উৎসর্গ করছি প্যালেস্টাইনের মানুষের সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে। আমি নিশ্চিত, বিশ্বের প্রতিটি শিশুই ফুটবলে শট মারে সেই লক্ষ্য নিয়েই।’

খেলোয়াড়, গায়ক, কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক-শিক্ষাবিদরা যে দেশেরই নাগরিক হোন, নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাদের পরিচয়ের ঊর্ধ্বে রয়েছে মানুষ হিসেবে তাদের সচেতন ভূমিকা। নিজ দেশের বা অন্য দেশের মাটিতে ঘটে চলা অন্যায়ের প্রতিবাদে তাঁরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারেন, তা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলে সব দেশের শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু তা ব্যর্থ প্রমাণ করে দিয়ে ইতিহাস রচনা করে সচেতন মানুষ।

(সূত্রঃ বিবিসি, স্পোর্টসস্টার-১৯ জুন, ২০২৪)