একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যাচ্ছেন দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে ছাত্র–ছাত্রীদের সাথে তাঁর ব্যবহার কী রকম হবে? তাঁর সামনে ছাত্র–ছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখালে তিনি অভব্য ব্যবহার করবেন, গালাগালি দেবেন, মেয়েদের কনুই দিয়ে মারবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সৌজন্যবশত দেখা করতে এলে মন্ত্রীমশাই তাঁকে উদ্ধত ভঙ্গিতে আদেশ করবেন আজ্ঞা পালনের জন্য আর তাঁর সঙ্গী একদল বহিরাগত দুষ্কৃতী কুৎসিত অঙ্গভঙ্গি করে গালাগালির বন্যা বইয়ে দেবে আর কেন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ছাত্ররা বিক্ষোভ করল সেই অজুহাতে মন্ত্রীমশাইয়ের দলবল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর চালাবে, বিদ্যাসাগরের ছবি ও উদ্ধৃতি সম্পন্ন প্ল্যাকার্ড ছিঁড়বে, আগুন লাগাবে এর নাম নাকি বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির ‘নবীন বরণ উৎসব’!
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ সেপ্টেম্বর বিজেপির মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় যাওয়ার পর যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার, পুরো ঘটনাটা ছিল বিজেপির পূর্বপরিকল্পিত৷ হতে পারে ছাত্ররা এই ধূর্ত পরিকল্পনাটি বুঝতে না পেরে তাদের পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে৷ এ ঘটনা আরও স্পষ্ট হল যখন দেখা গেল এবিভিপি নেতৃত্ব এই ঘটনায় অত্যন্ত উল্লসিত বোধ করছেন, এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতিও তাণ্ডবের জন্য তাদের উৎসাহিত করেছেন (আনন্দবাজার পত্রিকা, ২২ সেপ্টেম্বর,২০১৯)৷ পরিকল্পনা আরও বোঝা গেল যখন বিজেপি মন্ত্রীকে ‘উদ্ধার’ করতে রাজ্যের রাজ্যপাল দৌড়োদৌড়ি শুরু করলেন৷
কী পরিকল্পনা ছিল বিজেপির? পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার জন্য তাদের এখন দরকার খবরে থাকা৷ তার জন্য কিছু গোলমাল, হইচই, বিশৃঙ্খলা ভাঙচুর করে তাদের ছবি তোলা দরকার৷ বেশ কিছুদিন বিজেপি তৃণমূলে মারামারি–খুনোখুনির খবর তাদের সংবাদমাধ্যমে ভাসিয়ে রেখেছিল৷ কাশ্মীর, এনআরসি এই সব নিয়ে কিছু গরম গরম কথা বলে বিজেপির রাজ্য নেতারা খবরে থাকার চেষ্টা করছেন৷ তার সাথে সুযোগ বুঝে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার অজুহাতে তারা বিশৃঙ্খলা, ভাঙচুর, আগুন লাগানোর মতো কাজ করে আবার খবরের শিরোনামে উঠতে চেয়েছেন৷ এই প্রসঙ্গে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যাদবপুরের ছাত্রীদের উদ্দেশে যে অতি নোংরা মন্তব্য করেছেন তা করতে দাগি সমাজবিরোধীরাও লজ্জা পেত৷ অবশ্য যে দলের একের পর এক এমএলএ ধর্ষণে অভিযুক্ত, যে দলের মন্ত্রী পর্যন্ত একজন শিশুকন্যার ধর্ষণকে সমর্থন করে মিছিল করতে পারে, তাদের পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি তাঁর কন্যাসম ছাত্রীদের নিয়ে এই রকম উক্তি করতেই পারেন৷ এটা তাঁর দলীয় সংস্কৃতির মধ্যেই পড়ে৷
পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে ভাবতে হবে, এইরকম একটি দল, যাদের লাঠিধারী ফেট্টিবাঁধা গুণ্ডাবাহিনীর বীভৎস রূপ ১৯ সেপ্টেম্বর যাদবপুরের রাস্তায় দেখা গেছে তাদের কোনও অজুহাতে, কোনও কারণে এ রাজ্যে ভোটে জিতে আরও সাংঘাতিক হয়ে উঠতে দেওয়া চলে কি? এই মারাত্মক শক্তিকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জোয়ারের ধাক্কায় ইতিহাসের আঁস্তাকুড়েই ছুঁড়ে ফেলা দরকার৷