গত চার বছরের মধ্যে পেট্রোল–ডিজেলের দাম এ দেশে এই এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ উচ্চতায় চলে গিয়েছে৷ ফলে মূল্য বৃদ্ধিতে জর্জরিত সাধারণ মানুষ আবারও নতুন করে কর–দর–মূল্যবৃদ্ধি আশঙ্কা করছেন৷ কেন না, পেট্রোপণ্যে মূল্যবৃদ্ধির অর্থই হল পরিবহণ খরচ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি– যার সরাসরি আঘাত এসে পড়ে গরিব–মধ্যবিত্ত–নিম্নবিত্ত সাধারণ মানুষের উপর৷ অথচ পূর্বাপর সকল সরকারের মতোই কেন্দ্রের মোদি সরকার এই ব্যাপারে নির্বিকার৷
সরকার ও পেটোয়া সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে এই দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা বোঝাতে আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের বর্তমান দাম বৃদ্ধিকেই নিশানা করা হচ্ছে৷ অথচ ২০১৪–র নভেম্বর মাস থেকে ২০১৬–র জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু ১০৫ ডলার থেকে কমতে কমতে ২৯ ডলার হয়ে গেলেও ওই সময়ে মোদি সরকার তেলের উপর ক্রমাগত উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে (১৫ মাসে ৯ বার) সেই সুফল জনগণকে পেতে দেয়নি৷ ‘পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস সেল’–এর তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, মে–২০১৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৭ অবধি পেট্রোল ও ডিজেলের উপর আবগারি শুল্ক ১২ বার যথাক্রমে ৫৪ শতাংশ ও ১৫৪ শতাংশ বেড়েছে৷ ভ্যাট বেড়েছে ৪৬–৪৮ শতাংশ৷ পেট্রোল–ডিজেলের উৎপাদন শুল্ক খাতে যেখানে মোদি সরকারের রাজস্ব আয় ২০১৪–২০১৫–তে ছিল ৯৯ হাজার কোটি টাকা, ২০১৬–২০১৭–র শেষে সেটাই দ্বিগুণের বেশি বেড়ে দাঁড়ায় ২, ৪২,০০০ কোটি টাকা৷ এই পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট কীভাবে জনমতের তোয়াক্কা না করে নাগাড়ে তেলের উপর শুল্প–সেস–ভ্যাট চাপিয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার৷ ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দ্বিগুণের বেশিও দাম আদায় করা হচ্ছে, জনসাধারণের থেকে৷
জনসাধারণের থেকে এত বিপুল, পরিমাণ রাজস্ব আদায়কৃত অর্থে জনজীবনের সংকটের কি কিছু মাত্র সুরাহা হয়? হয় না৷ কেন না তেল কোম্পানি সরকারের যোগসাজসে তেলের দাম বৃদ্ধির পুরো কোপটাই জনগণের উপর এসে পড়ে৷ শিক্ষা–স্বাস্থ্য–পরিব আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম উত্তরোত্তর বাড়ে৷ ব্যাঙ্কের সুদ কমে৷ আর অপরদিকে মুনাফাবাজ তেল কোম্পানিগুলির মুনাফার পাহাড় বাড়ে৷ মন্ত্রী–এম পি–এম এল এ সহ আমলাদের ব্যাপক হারে বেতন ও ভাতা বৃদ্ধি হয়৷ আইন করে পুঁজিপতিদের প্রভূত অনাদায়ী ঋণে ছাড় দেওয়া হয়৷
প্রশ্ন আসে, সরকার যদি সত্যই জনদরদি হত তবে করের অংশ কমিয়ে জনসাধারণের জন্য কিছু সুরাহা কি করতে পারত না এ ক্ষেত্রে বিগত কংগ্রেস ও বর্তমান মোদি সরকার কিংবা এ রাজ্যের তৃণমূল বা পূর্বতন সিপিএমের মধ্যে বাস্তবে কোনও ফারাক নেই৷
দাম কমানোর দাবি উঠলেই তারা পরস্পরকে দোষারোপের রাজনীতি করে৷ বাস্তবে শুল্ক্ কমিয়ে পেট্রোপণ্যের দাম কমানোর প্রশ্ন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এই অভিন্ন নীতি তাদের চূড়ান্ত জনবিরোধী রূপকেই প্রকট করে তোলে৷
(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)