করোনা অতিরির দ্বিতীয় ঢেউ তছনছ করে দিচ্ছে সারা দেশকে। আক্রান্ত রোগীর ঠহি হচ্ছে না হাসপাতালে, বেড নেই। এ হাসপাতাল, ও হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে রাস্তাতেই রোগী ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। সামান্য অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে শয়ে শয়ে মানুষ। শ্মশানগুলোতে মৃতদেহের সারি দীর্ঘ। চিতার আগুন নিভছে না। গণচিতা জ্বলছে। কোথাও দাহ করতে না পেরে দু’দিন, তিনদিন রাস্তাতেই পড়ে থাকছে মৃতদেহ, কোথাও কুকুরে খুবলে নিচ্ছে মৃতদেহের মাংস। অতিমারির এক নির্মম, দুর্বিষহ চিত্র।
কথিত আছে, রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বেহালা জাচ্ছিলেন। আর এ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ যখন শ্বাস নিতে পারছে না, মৃত্যুমিছিল চলছে, তখন ভারতের ‘সম্রাট’ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে রাজধানী সাজাচ্ছেন। দেশের সব নাগরিককে ভ্যাক্সিন দিতে রাজি নয় সরকার, কারণ নাকি টাকার অভাব। অথচ রাজধানীর কেন্দ্রে নতুন সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বিলাসবহুল প্রসাদ সহ তৈরি হবে অট্টালিকার সারি। প্রাথমিক বরাদ্দ ২০ হাজার কোটি টাকা। ওয়াকিবহাল মহলের মতে শেষ পর্যন্ত এই খরচ গিয়ে দাঁড়াবে প্রায় ৬০ হাজার কোটিতে। কতটা অমানবিক, নির্মম হলে এভাবে জনসাধারণের টাকা জনস্বার্থে ব্যবহার না করে, এক ব্যক্তির দম্ভ, উচ্চাশা পূরণে ব্যবহার করা যায়। ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল তৈরি করতে খরচ হয় ৩০-৩৫ কোটি টাকা, ২০০ কোটি টাকা খরচ করলে ১৬০টিরও বেশি অক্সিজেন প্লান্ট তৈরি করা যায়। যা এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপুর্ণ কোভিত আক্রান্ত হাজার হাজার মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু এগুলো গুরুত্বহীন ভেবেই হয়ত সরকার অত্যাবশ্যকীয় কাজের তকমা দিয়ে দ্রুত বানাচ্ছে ‘সেন্ট্রাল ভিস্টা’।
দিল্লিতে করোনা প্রতিরোধের জন্য কারফিউ জারি হয়েছে। ঘরের বাইরে বেরোতে পারবে না সাধারণ মানুষ। সব কাজ বন্ধ। হায় রে ভারতবাসী! দমবন্ধ হয়ে মরতে বসা মানুষের কাছে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা নয়, করোনা অতিরির মধ্যে কারফিউ চলতে থাকা দিল্লিতে সেন্ট্রাল ভিস্তার কাজ নাকি অত্যাবশ্যকীয়। এ কাজ কি এতটাই জরুরি? যে সংসদ ভবন আছে, তা কি কাজের অযোগ্য হয়ে গেছে? জনসাধারণের সর্বাশের ব্লুপ্রিন্ট তৈরিতে কি এতোই অসুবিধা হচ্ছে? প্রধানমন্ত্রীর কি থাকার জায়গার অভাব হচ্ছিল? একদিকে করোনার থাবায় অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়ে পথে বসেছে, আর একদিকে সারা দেশের আকাশে বাতাসে স্বজন বিয়োগের আর্তনাদ, হাহাকার- এই কি রাজধানী সাজানোর উপযুক্ত সময় ?
এই নির্মমতা ইতিহাস কখন ক্ষমা করবে না। মৃত্যুস্তূপের উপর গড়ে ওঠা এই সৌধ এক নিষ্ঠুর ঔদ্ধত্বের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকবে। দেশজুড়ে সহৃদয় বিবেকবান মানুষের, প্রিয়জনের চিতার আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে অসহায় মানুষের তীব্র ঘৃণা, ধিক্কার আজ বর্ষিত হচ্ছে। আগে মানুষকে বাঁচাও। মানুষ না থাকলে ওই সেন্ট্রাল ভিস্টার কী মুল্য?