মৈপীঠ সন্ত্রাস কিছু কম দেখেনি৷ বিশেষত সিপিএম আমলে ’৮০ দশকের শেষভাগ থেকে যে অবর্ণনীয় নারকীয় অত্যাচার মৈপীঠে চলেছে তার তুলনা কোথাও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ৷ গরিব মানুষের জমি থেকে জোর করে ধান কেটে নেওয়া, পুকুরে বিষ ঢেলে দেওয়া, মারধর, শাসকদলের বিরুদ্ধে গেলেই মিথ্যা মামলায় হেনস্থা, এসব তো ছিলই, এর সাথে মাঝে মাঝেই শাসকদল আশ্রিত দুষ্কৃতী ও জলদস্যু বাহিনীর হাতে খুন, ধর্ষণ অসংখ্যবার হয়েছে৷ যে অশ্বিনী মান্নার নাম এখন উঠে এসেছে, তিনি সেই সময় ছিলেন সিপিএমের আশ্রয়ে৷ ১৯৮৯ সালের ৯ ডিসেম্বর মৈপীঠের নগেনাবাদ গ্রামে সিপিএমের এই বাহিনীর হাতে এলাকার গ্রামীণ চিকিৎসক এবং গরিব মানুষের আন্দোলনের নেতা সুষেণ মাইতি সহ ৯ জন নৃশংসভাবে খুন হন৷ এর মধ্যে ৫ জনকে অপহরণ করে নদীতে ভাসিয়ে দেয় এই দুষ্কৃতী দল৷ তার আগে ১৯৮৮ সালের ২০ নভেম্বর নগেনাবাদে বন্দুকধারী দুষ্কৃতীরা ১৩ বছরের কিশোরী পূর্ণিমা ঘড়ুইকে মাথায় গুলি করে হত্যা করে৷ কারণ এলাকার সিপিএম নেতার বাড়িতে লুকিয়ে থাকা বহিরাগত বন্দুকধারী দুষ্কৃতী বাহিনীকে দেখে চিৎকার করে সে মানুষকে সাবধান করেছিল৷ এর পরেও মৈপীঠে যে মারাত্মক অত্যাচার চলেছে তার একটা অংশ মাত্র বাইরের মানুষ জানতে পেরেছে৷ প্রত্যন্ত এলাকা হওয়ার সুযোগে সুন্দরবনের নদী ঘেরা দ্বীপাঞ্চল মৈপীঠের চোখের জলকে ওখানকার নোনা জলেই ডুবিয়ে দিতে চেয়েছে তৎকালীন শাসকদল৷ বিপ্লবী দল এস ইউ সি আই (সি)–কে নিশ্চিহ্ণ করার বাসনায় বৃহৎ পুঁজি নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমও বেশিরভাগ সময় নীরব থেকে আক্রমণ বাড়তেই সাহায্য করেছে৷ পুলিশ–প্রশাসনও চাপা দিয়েছে অসংখ্য হত্যা, বিষ খাইয়ে হত্যা, নারীর সম্ভ্রম লুঠের ঘটনাকে৷ মিথ্যা মামলায় এলাকার সংগ্রামী মানুষ শুধু নয় জেল খাটতে হয়েছে কুলতলির সর্বজনশ্রদ্ধেয় বিধায়ক বিশিষ্ট জননেতা প্রবোধ পুরকায়েতকেও৷ জয়নগর এবং কুলতলি মিলিয়ে খুন হয়েছেন তেভাগা আন্দোলনের অন্যতম নেতা আমির আলি হালদার সহ ১৭০ জনের বেশি এস ইউ সি আই (সি) নেতা–কর্মী এবং সমর্থক৷
ভোট রাজনীতির মধুভাণ্ডের লোভে কংগ্রেসী জোতদার এবং তাদের আশ্রিত গুণ্ডা যারা সিপিএমের আলখাল্লা পরেছিল, তৃণমূল ক্ষমতায় আসতেই আবার জামা পাল্টেছে৷ একজোট হয়ে ওরা ভোটে হারাতে চেয়েছে এস ইউ সি আই (সি)–কে৷ কিন্তু সংগ্রামের এই শক্তিকে মুছে ফেলতে পারেনি কুলতলির মানুষের মন থেকে৷ তাই একক শক্তিতেই লড়ছে এই দল৷ মৈপীঠের মানুষ আবার দেখালেন, বোমা–বন্দুক–পুলিশ– আস্ফালন শেষ কথা বলে না৷