মে দিবসের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা পাবেই

 

বছরে ২ কোটি নতুন চাকরির প্রতিশ্রুতি হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷ বেকারির অন্ধকারে ডুবে থাকা এই দেশে যাদের চাকরি আছে, যে কোনও মুহূর্তে সেটা হারাবার আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটে তাদের৷ সুযোগ নেয় মালিক৷ সামান্য টাকা ছুঁড়ে দিয়ে দিনে ১২ ঘন্টা এমনকী ১৪ ঘন্টা পর্যন্ত খাটিয়ে নেয় শ্রমিকদের৷ তাদের বাস করতে হয় নোংরা ঘিঞ্জি বস্তিতে৷ শ্রম–অধিকার আজ আকাশের চাঁদের মতোই ধরাছোঁয়ার বাইরে৷

এই অবস্থায় আবার এসেছে ১ মে– মেহনতি মানুষের রক্তঝরানো লড়াইয়ের গৌরবময় স্মৃতিমাখা ‘মে দিবস’৷ শত উত্থান–পতন, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তার মর্যাদা ও তাৎপর্য এতটুকু ম্লান হয়নি৷ মুমূর্ষু বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার মরিয়া চেষ্টায় দিনে দিনে আরও শোষণমূলক, উৎপীড়ক, বৈষম্যমূলক ও আগ্রাসী রূপ নিচ্ছে৷ এর বিরুদ্ধে বিশ্ব জুড়ে ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে উঠছে যেখানে শুধুমাত্র আর্থ–সামাজিক সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে নয়, স্লোগান উঠছে খোদ পুঁজিবাদী ব্যবস্থাটারই বিরুদ্ধে৷ শ্রমিক, চাষি, মধ্যবিত্ত এমনকী গোটা বিশ্বের বুদ্ধিজীবী মহলের একটি প্রধান অংশ মে দিবসের দাবি–দাওয়া ও তাৎপর্যের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন জানাচ্ছেন৷ তাই সময় এসেছে এই দিনটির মহত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার৷ বোঝার সময় এসেছে, মানুষের ইতিহাসে মে দিবসের সুবিশাল তাৎপর্য৷

১৮৮৬ সালের সেই মে দিবসে শ্রমিকরা দাবি করেছিল কাজের সময় হবে ৮ ঘন্টা৷  একেবারেই গণতান্ত্রিক দাবি৷ মালিক পুঁজিপতিরা ভাডাটে গুন্ডা আর পুলিশ সাথে নিয়ে বুলেট দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল তাদের৷ নেতাদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়েছিল৷ পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সেইসময় সবে বিশ্ব জুডে তার শিকড় বিস্তার করছে৷ আজ পুরোপুরি মরণের মুখে দাঁড়িয়ে আছে এই ব্যবস্থা৷ মানব জীবনের সব ক্ষেত্রে সমাজজীবন, ব্যক্তিজীবন, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক স্তরে সর্বাত্মক সংকট সৃষ্টি করছে৷ সংকট যত বাড়ছে, পুঁজিবাদ তত বেশি হিংস্র হয়ে উঠছে৷ পুঁজিবাদ–সাম্রাজ্যবা প্রগাঢ় সমর্থকরাও আজ এ কথা অস্বীকার করতে পারছে না যে, গোটা  বিশ্বপুঁজিবাদী ব্যবস্থাটাই ডুবছে ক্রমবর্ধমান অতল সংকটের গহ্বরে৷ পুঁজিবাদী বিশ্বের ইঞ্জিন বলে পরিচিত আমেরিকা গোটা বিশ্ববাজার দখলের উদ্দেশ্যে বিশ্বায়নের নীতি চালু করে দুনিয়া জুডে মুক্ত বাণিজ্যের স্লোগান তুলেছিল৷ সেই আমেরিকা আজ ‘আমেরিকা প্রথম’ আওয়াজ তুলে নিজের বাজারকে ঘেরাটোপে বাঁধতে চাইছে৷ অন্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির সঙ্গে ভয়ঙ্কর বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে আমেরিকা, যাতে তারা বাজার দখল করতে না পারে৷ এই সংকটের কারণ কী? ক্রমাগত শোষণের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা চূডান্ত অর্থনৈতিক মন্দা ও শিল্প কলকারখানায় বদ্ধ দশার জন্ম দিয়েছে যা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়ংকর বেকারি, আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি৷ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া আর ব্যাপক দারিদ্র এখন প্রায় সমস্ত পুঁজিবাদী দেশেরই বৈশিষ্ট্য, সে আমেরিকা হোক বা আফ্রিকার কোনও গরিব দেশ৷ সমস্ত পুঁজিবাদী দেশই আজ অবশ্যম্ভাবী রূপে বাজার সংকটের জালে জড়িয়ে পডছে৷ এর থেকে বেরনোর কোনও রাস্তা তাদের জানা নেই৷

বেকারি, বৈষম্য, বাধ্যতামূলক শ্রম আজকের পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্য

 স্পষ্টত আজ দুনিয়া জুডে প্রতিটি পুঁজিবাদী দেশেই জনজীবনের সবচেয়ে বড সমস্যা হল কোটি কোটি মানুষের বেকারি, যা ক্রমাগত বাড়ছে৷ পাশাপাশি শিল্পায়নের অব্যাহত ধারা আজ অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ পরিবর্তে তীব্র ও ক্রমবর্ধমান মন্দা, শিল্পে বদ্ধ দশা, মজুরি না বাড়া, চাকরির অনিশ্চয়তা এবং কারখানা বন্ধ  হওয়া, ছাঁটাই, লে–ফ ইত্যাদির কারণে ব্যাপক বেকারি অন্ধকার ছায়া ফেলেছে৷ শ্রমিকদের দুর্দশা আরও বাডিয়েছে কাজের কঠিন শর্ত৷

ভারতেও বেকার সমস্যা গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে৷ পুঁজিবাদী সরকারগুলি গরিব চাষিদের উর্বর জমি কেড়ে নিয়ে এসইজেড তৈরি বা রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার জন্যে পুঁজিমালিকদের তা উপহার দিচ্ছে৷ এর জন্যে চালু আইন পর্যন্ত তারা পাল্টে ফেলছে৷ এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ তো বটেই, মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও হারাচ্ছে৷

আজকের দিনে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অপর অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য যা শ্রমিকের দুরবস্থা আরও বাড়িয়ে তুলেছে, তা হল আয় বৈষম্য৷ মুষ্টিমেয় কিছু ধনী এই সমাজে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা,আরাম আয়েশ ভোগ করছে, আর মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে ক্রমাগত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার বাইরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে৷ বিশেষত সাম্প্রতিক বিশ্বজোড়া মহামন্দার পর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে৷  লিঙ্গবৈষম্য, জাত–পাত–ধর্মের বৈষম্য ইত্যাদি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে এবং শ্রমিক শ্রেণির মানুষের ঐক্যে তা ভাঙন ধরাচ্ছে, মজুরে মজুরে দ্বন্দ্ব বাড়িয়ে তুলছে৷ অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত ও পিছিয়ে পড়া– সমস্ত দেশেই অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের দ্বারা মানবিকতা লঙিঘত হচ্ছে৷

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শ্রমিক–কর্মচারীরা মজুরি–দাস ছাড়া অন্য কিছু নয়৷ বিশ্বায়নের নীতি এর সঙ্গে যোগ করেছে অমানবিক বাধ্যতামূলক শ্রম ও দাস শ্রমিকের সমস্যা৷ লক্ষ লক্ষ শ্রমিক যে কোনও জায়গায় যে কোনও রকম একটা কাজ খুঁজতে গিয়ে দাস শ্রমিক বনে যাচ্ছে৷ এদের অনেকেই ‘উন্নয়নে’র অজুহাতে উচ্ছেদ হওয়া, কিংবা যুদ্ধ বা দাঙ্গাপীড়িত দেশের মানুষ৷ চরম দারিদ্র মানুষকে, বিশেষত চাষিদের ভয়ঙ্কর ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে দিচ্ছে৷ পরিণতিতে তারা হয় দাস–শ্রমিক, নয়ত পরিযায়ী শ্রমিকে পরিণত হচ্ছে৷ তা না হলে আত্মহত্যাই শেষ বিকল্প হিসাবে পড়ে থাকছে তাদের জন্য৷ বিশ্ব জুড়ে নারী ও শিশুপাচার ভয়ঙ্কর ভাবে বাড়ছে, পাশাপাশি নাইজেরিয়া, লিবিয়া সহ আফ্রিকার নানা দেশ থেকে পাচার হওয়া দরিদ্র মানুষকে নিয়ে দাস–ব্যবসার রমরমা হচ্ছে (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৫ এপ্রিল ২০১৯)৷ উদ্বাস্তু মানুষের স্রোত আটকাতে মেক্সিকো সীমান্তে পাঁচিল তৈরি করতে একদিকে লক্ষ লক্ষ ডলার বরাদ্দ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, অন্যদিকে লেভিস, ফোর্ড, নাইকে, জেনারেল মোটর্সের মতো দৈত্যাকার মার্কিন বহুজাতিক ও তাদের অধীনস্থ সংস্থাগুলির কারখানা বহাল তবিয়তে ব্যবসা করছে এই মেক্সিকো সীমান্তেই৷ মার্কিন মালিকরা মেক্সিকোর শ্রমিকদের কম মজুরিতে জঘন্য পরিবেশে খাটিয়ে নেয়৷ আউটসোর্সিং, চুক্তি ও ঠিকা শ্রমিক প্রথা পরিস্থিতি আরও ভয়ানক করে তুলছে৷ ন্যূনতম মজুরিটুকুও না দিয়ে কিংবা কোনওরকম সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা না রেখে কাজ করানো হয় যাদের, তারাও এক ধরনের দাসশ্রমিক, ভারতের মতো দেশে ব্যাপক সংখ্যায় যাদের দেখা মেলে৷ এমনকী তথ্যপ্রযুক্তির মতো তথাকথিত ‘বড় চাকরি’র জায়গাতেও অন্যায্য মজুরি, বাধ্যতামূলক ওভারটাইম, সরকারি ছুটি ছাঁটাই ও কাজের জায়গার অস্বাস্থ্যকর অসুবিধাজনক পরিবেশ সহ চাকরির আরও নানা অন্যায় শর্ত কর্মচারীদের কার্যত দাস শ্রমিকে পরিণত করছে৷ সংবাদসূত্রে জানা যাচ্ছে, পূর্বতন সমাজতান্ত্রিক দেশ চীন যা বর্তমানে একটি সাম্রাজ্যবাদী দেশ, সেখানে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে কর্মরত অনেকরই অকালমৃত্যু ঘটছে৷ কারণ এই মানুষগুলিকে দীর্ঘ সময় ধরে অমানুষিক কাজের চাপ সহ্য করতে হচ্ছে৷ এদিকে চীনের সবচেয়ে বড় ই–কমার্স সংস্থার শতকোটিপতি মালিক তাঁর কর্মীদের জন্য সপ্তাহে ছয় দিন ধরে দিনে ১২ ঘন্টা করে কাজের আদেশ জারি করেছেন৷

পুঁজিবাদ–সাম্রাজ্যবাদ আজকের দিনে শুধু নির্মম শোষণমূলক একটি ব্যবস্থা নয়,  এই ব্যবস্থা চূড়ান্ত শয়তানিতে ভরা৷ শোষিত শ্রমজীবী মানুষ যাতে প্রতিবাদ করতে না পারে, সেই উদ্দেশ্যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সমাজ থেকে সংস্কৃতি, নীতি–নৈতিকতা ধ্বংস করে নোংরামি, ভোগবাদ, চূড়ান্ত ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ও সমাজবিমুখতা সৃষ্টি করে মানবিকতা ধ্বংসের সমস্ত রকম অপচেষ্টা চালাচ্ছে৷

শ্রমিকদের ক্ষমতা কাড়তে শ্রম আইন সংশোধন করা হচ্ছে

একই সঙ্গে পুঁজিবাদী শাসকদের প্রয়োজন খেটে–খাওয়া মানুষের চিন্তাপ্রক্রিয়ার পরিবর্তন ঘটিয়ে তাদের চেতনার দিক দিয়ে নিরস্ত্র করে তোলা৷ সেই উদ্দেশ্যে প্রতিটি দেশেই তারা তথাকথিত ‘অর্থনৈতিক সংস্কার’–এর গুণগান গাইছে৷ মিথ্যার জাল ছড়িয়ে তারা বলছে, সংস্কার হলে বিনিয়োগ বাড়বে, ফলে উন্নয়ন হবে৷ বাস্তবে সংগঠিত হওয়া, ধর্মঘট ডাকা কিংবা যৌথ দরকষাকষির মতো বহু সংগ্রামের দ্বারা অর্জিত অধিকারগুলি কেড়ে নিয়ে শ্রমিকদের নিরস্ত্র করে দেওয়ার আগ্রাসী অপচেষ্টা ছাড়া এ আর কিছু নয়৷ পাশাপাশি, এইসব সংস্কার একচেটিয়া ও বহুজাতিক সংস্থার মালিকদের সব ধরনের সুবিধা করে দিচ্ছে৷

উদাহরণ হিসাবে ভারতের কথা উল্লেখ করা যায়৷ নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি পরিচালিত বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার একচেটিয়া কারবারিদের বিশ্বস্ত প্রতিনিধি হিসাবে তথাকথিত সংস্কারের নামে অত্যন্ত কৌশলে শ্রমিকদের উপর আক্রমণ নামিয়ে আনছে৷ এইসব সংস্কারের মধ্যে আছে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট্স অ্যাক্ট, ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট, ফ্যাক্টরিজ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০১৪, কন্ট্র্যাক্ট লেবার (রেগুলেশন অ্যান্ড অ্যাবোলিশন) অ্যাক্ট ইত্যাদি৷ এই পদক্ষেপ শ্রমিকদের অধিকার হরণ করার পাশাপাশি পুঁজিমালিকদের হাতে ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’ নীতি অর্থাৎ ইচ্ছামতো ছাঁটাই করার অধিকার তুলে দিয়েছে৷ এই সংস্কার এমনকী ফ্যাক্টরির সংজ্ঞা পর্যন্ত পাল্টে দিয়েছে যাতে আধুনিক প্রযুক্তি, আউটসোর্সিং, চুক্তিশ্রমিক প্রথা ইত্যাদির সাহায্য নিয়ে মালিকরা শ্রমিকের সংখ্যা কমাতে পারে৷ এভাবেই শ্রমিকদের সমস্ত আর্থিক দায়দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে পুঁজিপতিদের সাহায্য করছে এই সংস্কার নীতি৷ এক কথায় বলতে গেলে, প্রধান শ্রম আইনগুলির মাধ্যমে শ্রমিকরা এতদিন যেসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করত সংস্কারের মধ্য দিয়ে সেগুলি ছাঁটাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷

ওয়েজ কোড বিল নামক একটি অদ্ভুত আইন আনারও চেষ্টা করছে এই সরকার৷ মিনিমাম ওয়েজেস অ্যাক্ট–১৯৪৮, পেমেন্ট অফ ওয়েজেস অ্যাক্ট–১৯৩৬, পেমেন্ট অফ বোনাস অ্যাক্ট–১৯৫৬ এবং ইকুয়াল রেমুনারেশন অ্যাক্ট–১৯৭৬– এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ আইনের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি করা এই কোড বিলের সুপারিশ হল, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ন্যূনতম মজুরির হার বিভিন্ন রকম রাখা৷ এ আশঙ্কা অমূলক নয় যে, এই আইন চালু হলে প্রভু পুঁজিপতিদের খুশি করতে বিভিন্ন রাজ্যের বুর্জোয়া ও পেটি–বুর্জোয়া সরকারগুলি ন্যূনতম মজুরির হার কতটা কমানো যায়, তার প্রতিযোগিতায় নামবে৷ ১৯৫৭ সাল থেকে ইন্ডিয়ান লেবার কনফারেন্স ও সুপ্রিম কোর্টের একাধিক সুপারিশ সূত্র মান্য করে ভারত সরকার ন্যূনতম মজুরির হার বেঁধে দিতে বাধ্য৷ এর ভিত্তিতে বর্তমান সরকারেরই বসানো খোদ সপ্তম পে–কমিশন ১৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মাসিক মজুরির সুপারিশ করেছে৷ তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার মজুরির এই হার ওয়েজ কোড বিলের অন্তর্ভুক্ত করছে না৷ মালিকের সংস্থার হিসাবপত্র পরীক্ষা করার যে আইনি অধিকার শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলির রয়েছে, যা যৌথ দর–কষাকষির জন্য প্রয়োজন, প্রস্তাবিত কোড বিলে তা–ও না রাখার চক্রান্ত হচ্ছে৷ ফলে, এই বহুল প্রচারিত ওয়েজ কোড বিল খেটে–খাওয়া মানুষের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক এক অন্যায় আক্রমণ ছাড়া কিছু নয়৷

শোষণের কালো মেঘের পিছনে আশার রুপালি রেখা

আজ পুঁজিবাদ–সাম্রাজ্যবাদ যখন তার সমস্ত নখ–দাঁত বের করে আক্রমণ করছে, তখন হতাশা ঝেড়ে ফেলে সংগ্রামী মানুষকে উঠে দাঁড়াতে হবে এবং এই অন্ধকার পরিস্থিতির পিছনে আশার রুপালি রেখার দিকে চোখ ফেরাতে হবে৷ কিন্তু তার আগে ইতিহাসের দিকে ফিরে দেখা জরুরি৷ দীর্ঘ সংগ্রাম, বহু ত্যাগস্বীকার ও শহিদদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে শ্রমিক শ্রেণি ধর্মঘটের অধিকার সহ তাদের অন্যান্য অধিকারগুলি অর্জন করেছে৷ মে দিবসের ইতিহাস সেই সত্যেরই সাক্ষ্য দেয়৷ আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন আইএলও–র আইনগুলি পায়ে মাড়িয়ে আজ শাসক পুঁজিপতি শ্রেণি সেগুলি কেড়ে নিতে চাইছে৷ তা সত্ত্বেও ব্যাপক শোষণ–বঞ্চনা–বিভ্রান্তির অন্ধকার কাটিয়ে আশার আলো উঁকি দিচ্ছে৷

দিকে দিকে গড়ে উঠছে প্রতিবাদী গণআন্দোলন

সাম্প্রতিক অতীতে, বিশেষ করে গত এক দশকে শোষিত নিপীড়িত খেটে–খাওয়া মানুষ বার বার নিজের দেশের বুর্জোয়া, পেটি–বুর্জোয়া সরকারগুলির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তীব্র আন্দোলনে ফেটে পড়েছে৷ ২০১০ থেকে শুরু হয়ে ২০১১ ধরে এশিয়া–আফ্রিকা–ইউরোপ– বার বার ভেসেছে সহস্র প্রতিবাদী জনতার আন্দোলনের স্রোতে৷ মিশরের তাহরির স্কোয়ার, টিউনিসিয়া, গ্রিসের সিনটাগমা স্কোয়ার, ফ্রান্সের নানা শহর, ইয়েমেন, আফ্রিকার আলজিরিয়া, মাদ্রিদের সেন্ট্রাল স্কোয়ার হয়ে নিউইয়র্কের টাইমস স্কোয়ার– ৮২টি দেশের দেড় হাজারের বেশি শহরে আছড়ে পড়েছে বিক্ষোভের ঝড়৷ সর্বত্রই বিক্ষুব্ধ মানুষ ফুঁসে উঠেছে ভয়ঙ্কর বেকারি, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, ব্যয়সঙ্কোচের অজুহাতে শিক্ষা, চিকিৎসা, পেনসন ইত্যাদির মতো সমাজকল্যাণমূলক খাতগুলিতে সরকারি বরাদ্দ ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে৷ বহু জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, রাজনৈতিক দমন–পীড়ন, ব্যাপক দুর্নীতি ও পুলিশি বর্বরতার প্রতিবাদে৷ এভাবেই মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় শত্রু সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মদতপুষ্ট দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্টদের দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে টিউনিসিয়া ও মিশরের মানুষ৷ ফ্রান্সের জনগণ লড়েছে তাদের সরকারের প্রস্তাবিত নতুন শ্রম–আইনের বিরুদ্ধে, যে আইন চালু করে শ্রমিকদের বহু কষ্টার্জিত অধিকার কেড়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছিল সে দেশের সরকার৷

কিছুদিন আগেই মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা উত্তাল হয়ে উঠেছিল জঙ্গি ‘আরব বসন্ত’ আন্দোলনে৷ সেখানকার মানুষের ক্ষোভ ফেটে পড়েছিল নিজের নিজের দেশের শাসকদের স্বৈরাচার ও আমেরিকা সহ অন্য সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির অন্যায় হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে৷ গ্রিস, ইটালি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন সহ ইউরোপের দেশে দেশে আন্দোলন হয়েছে৷ সর্বত্রই মহামন্দার ধাক্কায় টলতে থাকা দেশের অর্থনীতি রক্ষা করতে সরকারি ব্যয়সঙ্কোচের নীতি, যা মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ করে তুলেছে, তার বিরুদ্ধে রোষ আছড়ে পড়েছে৷ প্রতিবাদ আন্দোলন বহু জায়গায় ব্যারিকেড লড়াইয়ের রূপ নিয়েছে৷ এই সময়ে আমেরিকার নিউইয়র্কে ঘটেছে প্রখ্যাত ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ আন্দোলন৷ ২০১১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া এই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ৷ মাসের পর মাস ধরে অবস্থান চালিয়ে গেছেন তাঁরা৷ স্লোগান তুলেছেন, ‘আমরা ৯৯ শতাংশ মানুষ ১ শতাংশের লোভ আর দুর্নীতি সহ্য করব না’, ‘আমেরিকায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে মিশর, গ্রিস, স্পেন ও আইসল্যান্ডে আন্দোলনকারী ভাই–বোনদের মতো আমরাও আন্দোলনে নেমেছি’৷

বিশ্বের দেশে দেশে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়া এই আন্দোলন খুব স্বাভাবিক ভাবেই দুনিয়ার খেটে–খাওয়া মানুষের বুকে বিরাট আশার সঞ্চার করেছিল৷ গণআন্দোলন ও সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে আমাদের দল এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) এই আন্দোলনগুলির প্রতি অভিনন্দন জানিয়েছিল৷ কিন্তু সাথে সাথে এই সতর্কবাণীও দল উচ্চারণ করেছিল যে, পুঁজিবাদবিরোধী বিপ্লব গড়ে তোলার দায়িত্ব ঐতিহাসিক ভাবে যে শ্রমিক শ্রেণির উপর ন্যস্ত, তাদের সর্বব্যাপী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নিজের নিজের দেশে বিপ্লবী দল গড়ে তুলতে হবে৷ কারণ একমাত্র প্রকৃত কমিউনিস্ট নেতৃত্বই মেহনতি মানুষকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তুলতে পারে, যার দ্বারা তারা গণআন্দোলনকে সঠিক পরিণতিতে নিয়ে যেতে পারে৷ দুঃখের বিষয়, ইতিহাস নির্ধারিত এই দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হওয়ার সুযোগ শেষপর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদীরাই নিয়েছে৷

মানবসভ্যতার ইতিহাস থেকে দেখা যায়, সমাজপরিবর্তনের অমোঘ নিয়ম অনুসরণ করে ভবিষ্যতে দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে ব্যর্থতা কখনওই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি৷ তাই এক দশক পরে আবার বিশ্বের নানা প্রান্তে আবার ব্যাপক আন্দোলনের স্পন্দন লক্ষ করা যাচ্ছে৷ সমাজের নানা স্তরের মেহনতি মানুষ আবার এককাট্টা হচ্ছেন আরও দীর্ঘস্থায়ী, আরও সংগঠিত আন্দোলনে৷ স্পেনের পেনশনভোগীরা হাজারে হাজারে সমবেত হয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন৷ ফ্রান্সের ‘ইয়েলো ভেস্ট’ আন্দোলন চলছে টানা ২২ সপ্তাহ ধরে৷ এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন গ্রাম, শহর, মফস্সলের শ্রমিক, কৃষক, অফিস কর্মচারী, ছাত্র এমনকী গৃহবধূরা পর্যন্ত৷ ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক নিপীড়ন ও পড়তে থাকা জীবনযাত্রার মানের প্রতিবাদে রাশিয়ার নানা শহরে ২৩ মার্চ বিক্ষোভ দেখিয়েছেন হাজার হাজার মেহনতি মানুষ৷ কয়েক মাস আগে সেখানকার পুতিন সরকারের চালু করা পেনশন সংস্কারের বিরুদ্ধেও ব্যাপক প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল৷

 অন্য দিকে আমেরিকার নানা শহরে শিক্ষার দাবিতে এবং কম মজুরি, চাকরির কঠিন শর্ত, দামবৃদ্ধি ইত্যাদির বিরুদ্ধে মার্কিন জনতা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন৷ লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে ৩০ হাজারের বেশি পাবলিক সুক্লের শিক্ষক ধর্মঘট করেছেন৷ ২০১৯–এর মার্চ–এপ্রিল মাসে ফিলাডেলফিয়া, মায়ামি, শিকাগো, ওহিও ইত্যাদি শহর সাক্ষ্য থেকেছে বহু আন্দোলনের৷ নর্থ ক্যারোলিনায় এক বছরের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন মানুষ৷ পুঁজিবাদী বিশ্বের ইঞ্জিন বলে কথিত আমেরিকায় বেকারির হার ঊর্ধ্বমুখী, ৬ জনের মধ্যে একজন মার্কিন নাগরিক দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন৷ ধর্মঘটরত এক গাড়ি–ড্রাইভার দুঃখ করে বলেছেন, ‘‘আজ আমি গৃহহারা … প্রয়োজনমতো রোজগার আমার নেই৷ সমস্যার জালে জড়িয়ে গেছি, বেরোবার পথ জানা নেই’’৷ ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন’–এর এক ছাত্র মন্তব্য করেছেন, ‘‘পড়ার খরচ মিটিয়ে দেওয়ার পর হাতে আর কিচ্ছু থাকে না৷ খাবার কেনার পয়সা নেই, ঘরভাড়া দেওয়ারও না’’৷

মেক্সিকোতে, টেক্সাসে মার্কিন সীমান্তের কাছে ৪৫ হাজার শ্রমিক বেশ কয়েকটি কারখানার চাকা কার্যত বন্ধ করে রেখেছিলেন৷ রাস্তার মোড়ে প্রতিদিন বিশাল জনতার সমাবেশ হত৷ লক্ষণীয় হল, মূলত অর্থনৈতিক দাবিদাওয়া নিয়ে লড়লেও, শ্রমিকরা বুঝতে পেরেছেন শুধু নিজের নিজের কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে নয়, সমস্ত মেহনতি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দীর্ঘস্থায়ী লড়াই চালাতে হবে৷ দেশের দুটি শ্রমিক সংগঠন, কয়েকটি বামপন্থী গোষ্ঠী এবং প্রায় ৬০টি সামাজিক–রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে আর্জেন্টিনার হাজার হাজার নারী–পুরুষ মার্চ মাসে মশাল হাতে পথে নেমেছিলেন গ্যাস, বিদ্যুৎ, জল ও পরিবহণ পরিষেবার দামবৃদ্ধির বিরুদ্ধে৷

বিশ্ব জুড়ে সংগ্রামী মানুষ বুর্জোয়া ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলছেন

এগুলি হল গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা অজস্র দৃষ্টান্তের কয়েকটি, যেগুলি অনুপ্রেরণা দেয়৷ পুঁজিবাদী–সাম্রাজ্যবাদী শোষণ যত চূড়ান্ত নগ্ন রূপ নিচ্ছে, মানুষ চুপচাপ তা বরদাস্ত করছে না, তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে৷ ফলে, সমাজতন্ত্রের সাময়িক বিপর্যয়ের পরেও হতাশাকে জয় করে মানুষ আবারও সংঘবদ্ধ হচ্ছে, সংগঠিত হচ্ছে৷ মাসের পর মাস এমনকী বছরের পর বছর ধরে আন্দোলন চলছে৷ এই উদ্যম ও উৎসাহ প্রতিফলিত হচ্ছে মে দিবস উদযাপনেও৷ মে দিবস উপলক্ষ্যে জনজীবনের বিভিন্ন দাবি নিয়ে, শ্রমিকের অধিকার রক্ষার দাবি নিয়ে কিউবার হাভানায়, রাশিয়ার মস্কোয়, এশিয়া–ইউরোপের শহরগুলিতে বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হচ্ছেন হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ৷ এই জনজোয়ার মে দিবসের যথার্থ মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অত্যুজ্জ্বল রূপালি রেখার মতো৷

উদাহরণ স্বরূপ, ফ্রান্সের জনগণ কেবল মাসের পর মাস ধরে আন্দোলনই চালাচ্ছে না, বরং স্লোগান তুলছে ‘পুঁজিবাদ নিপাত যাক’৷ এও পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, সেখানকার বিভিন্ন বামপন্থী গোষ্ঠীও শ্রমজীবী নারী–পুরুষের ঐক্যকে সুদৃঢ় করার উদ্যোগ নিচ্ছে গণআন্দোলনকে জোরদার করার জন্য৷ তারা বুঝতে পারছে যে, বামপন্থীদের সবসময়ই জনগণের সাথে থাকা কর্তব্য৷ রাশিয়ার পরিস্থিতি এখন এতটাই খারাপ যে সেখানকার দুই–তৃতীয়াংশ মানুষ সোভিয়েতের পতনের জন্য আক্ষেপ করছেন৷ মহান লেনিন–স্ট্যালিনের ছবি হাতে নিয়ে রাশিয়ার পথে–পথে জনতার ঢল নামছে সমাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আকাঙক্ষায় (পিপল’স্ ডেসপ্যাচ– পাবলিশড বাই নিউজ ক্লিক, ২৮ মার্চ ২০১৯)৷

তাই, এই হল সময় যখন গোটা বিশ্বের সংগ্রামী জনতার প্রয়োজন যথার্থ রাজনৈতিক সচেতনতা৷ এ কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ব্যাপক জঙ্গি আন্দোলনও শোষণ–অত্যাচার বিলোপ করার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে পারে৷ সে–কারণে সশস্ত্র রাষ্ট্রের পৈশাচিক আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজন যথার্থ বিপ্লবী নেতৃত্ব৷ সাম্রাজ্যবাদ ও সর্বহারা বিপ্লবের এই যুগে সেই নেতৃত্ব একমাত্র দিতে পারে একটি প্রকৃত কমিউনিস্ট পার্টি, যে পার্টি মার্কসবাদ–লেনিনবাদকে জীবনদর্শন হিসেবে গ্রহণ করেছে৷

এই উপলব্ধির ভিত্তিতে যেদিন শ্রমিকশ্রেণি উঠে দাঁড়াবে সেদিন আর মে দিবসের মহান গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহাসিক ঐতিহ্যকে গোটা বিশ্বে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে কোনও বাধা ও বিভ্রান্তি থাকবে না৷ মার্কসবাদ–লেনিনবাদের বৈজ্ঞানিক দর্শনে সমৃদ্ধ জনগণ দৃঢ় ভাবে জানে, বিপ্লব অনিবার্য৷ জনসাধারণ যত দ্রুত এই সত্য উপলব্ধি করবে, ততই আসন্ন হবে তাদের শোষণমুক্তির ভোর৷

(গণদাবী : ৭১ বর্ষ ৩৭ সংখ্যা)