ভাঁজ করা কাগজটা সুইসাইড নোট৷ তাতে সরাসরি অভিযোগ করা হয়েছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’৷ দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে তাঁর দেশের এক চাষি ইতিপূর্বে এমনভাবে অভিযোগ করেছেন কিনা আমাদের জানা নেই৷
ঘটনা মহারাষ্ট্রের ইয়তমল জেলার৷ রাজুরাওয়াদি গ্রামের চাষি শঙ্কর ভাওরাও ছায়ারে৷ বছর পঞ্চাশেক বয়স৷ ১০ এপ্রিল তিনি আত্মহত্যা করেন৷ প্রথম চেষ্টা ফাঁসিতে৷ কিন্তু দড়ি ছিঁড়ে পড়ে যাওয়ায় শেষে বিষ খান৷ সুইসাইড নোটে তিনি লিখেছেন, ‘প্রচুর টাকা ঋণ নিয়ে তিনি তুলো চাষ করেছেন৷ কিন্তু গোলাপী পোকায় তা নষ্ট করে দিয়েছে৷
কিন্তু শঙ্কর তো এই অবস্থায় সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি করতে পারতেন৷ তা করলেন না কেন? কেন তিনি চরম পথ বেছে নিলেন?
এ প্রশ্নের উত্তর আর আত্মঘাতী চাষির কাছে পাওয়া যাবে না৷ এর উত্তর দিয়েছেন ওই গ্রামের এক চাষি৷ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, গত বছর মঙ্গাওকর নামে এক চাষি যখন আত্মহত্যা করেছিল, সরকার বলেছিল চাষি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবে৷ কিন্তু আজও ওই পরিবার ক্ষতিপূরণ পাননি৷ ক্ষোভের সাথে তিনি বলেন, ‘এই সরকার কৃষককে শেষ করে দিচ্ছে৷ এমন নিষ্ঠুর সরকার আমি কখনও দেখিনি৷’
অভিযোগের তীর যে কেন্দ্রে ও রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের দিকে তা বলাই বাহুল্য৷ শঙ্কর বুঝেছিলেন, সরকারের কাছ থেকে কোনও ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না৷ অভিজ্ঞতায় তিনি এও দেখেছিলেন, সরকার কোনও ফসলের ক্ষেত্রেই ন্যায্য দাম পাওয়ার ব্যবস্থা করেনি৷ তা হলে কীসের ভিত্তিতে তিনি ভবিষ্যতে এই ঋণ শোধ করবেন? এই ঋণ শোধ করার জন্য যে জমিজমা বিক্রি করে দিয়ে সপরিবারে পথে বসতে হবে এটা বুঝেই সম্ভবত তিনি এই চরম পথ বেছে নিয়েছেন৷
গ্রামের কৃষকরা শঙ্করের মরদেহ পোস্টমর্টেম করতে দেননি৷ তাঁদের বক্তব্য মৃত্যুর কারণ যখন জানাই তখন পোস্টমর্টেম কী প্রয়োজন? তাঁরা রুখে দাঁড়িয়ে পুলিশকে মৃতদেহ নিতে দেননি৷ প্রধানমন্ত্রীকে অভিযুক্ত করে এফ আই আর করেছেন গ্রামবাসীরা৷ একটা মানুষের বেঁচে থাকা বা মৃত্যু কীভাবে সরকারি নীতি বা পরিচালন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত, মহারাষ্ট্রের এই চাষির সুইসাইড নোট দেশবাসীকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়ে গেল৷
(৭০ বর্ষ ৩৫ সংখ্যা ২০ এপ্রিল, ২০১৮)