দু’বছর পর সরকার মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়াল। শুরু থেকেই মিড ডে মিলের বরাদ্দ যে প্রয়োজনের তুলনায় অনেকখানিই কম, তেমন অভিযোগ প্রায় সব মহল থেকেই উঠে আসছিল। গত দু-বছরে জিনিসপত্রের দাম, গ্যাসের দাম কী হারে বেড়েছে তা কারও অজানা নয়। তা সত্ত্বেও সরকারি কর্তাব্যক্তিরা কী করে মাথাপিছু মাত্র ৪৮ এবং ৭২ পয়সা যথাক্রমে প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকের জন্য বরাদ্দ বাড়ালেন তা ভেবে পাচ্ছি না। এই প্রকল্প তো চালু হয়েছিল দেশের বিরাট অংশের দরিদ্র নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির কথা ভেবে। এই নামমাত্র বরাদ্দে কি সেই পুষ্টি সম্ভব বলে কেন্দ্রীয় সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা নিজেরাও মনে করেন?
তা যদি না হয় তবে তো প্রকল্পের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে যায়! নাকি জনকল্যাণে সরকার কতখানি তৎপর শুধুমাত্র তা দেখানো এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য? জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা বলছে, দেশের এক তৃতীয়াংশ শিশু এখনও অপুষ্টির শিকার। এই শিশুরা তো আমাদের দেশেরই সন্তান, ভবিষ্যতের নাগরিক। তাদের এমন অপুষ্ট অবস্থায় ফেলে রেখে দেশ কি সত্যিই এগোতে পারে? এই অপুষ্টি দূর করা তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব কি রাষ্ট্র পরিচালকরা অস্বীকার করতে পারেন?
প্রধানমন্ত্রী ভারতকে অতি দ্রুত ৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশে পরিণত করার কথা অহরহ বলেন। বলেন, ভারত অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের অঙ্কে বিশ্বের বহু দেশকে টেক্কা দিয়েছে। যদি আমরা আমাদের শিশুদের প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগানটুকুও না দিতে পারি তা হলে এ-সব কোন প্রয়োজনে? তা কি কেবল দেশের বিরাট অংশের মানুষকে অর্ধাহার, অনাহার আর অপুষ্টিতে ফেলে রেখে মুষ্টিমেয় পুঁজিপতির সম্পদের পাহাড়কে আরও উঁচু করে তুলতে?
মাঝে মাঝে ভাবি, যাঁরা শিশুদের জন্য এই নামমাত্র বরাদ্দ বাড়ালেন তাঁদের কি একবারের জন্যও অভুক্ত, ক্ষুধার্ত সেই শিশুদের মুখগুলি মনে পড়েছিল? আচ্ছা, তাঁরা নিজেরাও তো পিতা-মাতা! তাঁরা কি নিজেদের সন্তানদের কখনও ওই শিশুদের জায়গায় বসিয়ে দেখেছেন? যখন তারা নিজেদের সন্তানদের আদর করে চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় যাবতীয় সামগ্রী খাওয়ান, তখন কি একবারের জন্যও এই সব অপুষ্ট, অভুক্ত শিশুগুলির কথা মনে পড়ে? যদি পড়ত তবে কি তাঁরা পারতেন এই শিশুদের সাথে এমন নির্মম পরিহাস করতে? নাকি তারা মনে করেন তাদের সন্তানরা সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছে, আর ওদের জন্মসঙ্গী দুর্ভাগ্য? ‘আমাদের সন্তান, ওদের সন্তান’-এই বিভাজন ভাবনাই কি তাঁদের এমন বরাদ্দে প্ররোচিত করেছে? যদি তাই হয়ে থাকে তবে তার থেকে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না।
শিলাই মণ্ডল
গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর