Breaking News

 মাশুল বাড়ানোর ছক সিইএসসি-র, প্রতিরোধের ডাক অ্যাবেকার

ফাইল চিত্র

আবার বিদ্যুৎ মাশুল বাড়িয়ে গ্রাহকদের ঘাড় ভেঙে তা আদায় করতে চায় সিইএসসি। এর জন্য ১০ মে তারা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে আবেদন করেছে। তারা দাবি করেছে, এফপিপিসিএ (ফুয়েল অ্যান্ড পাওয়ার পারচেজ কস্ট এ্যাডজাস্টমেন্ট), এপিআর (অ্যানুয়াল পারফরমেন্স রিভিউ), নেট ফিক্সড চার্জ ইত্যাদিতে ২০২০-’২১ ও ২০২১-’২২-এ মোট ২,৪৭,০৭৩ লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছে। কমিশন দেশের লোকসভা নির্বাচনে মধ্যেই একচেটিয়া পুঁজিপতি গোয়েঙ্কার বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি সিইএসসি-র এই আবেদন সম্পর্কে রাজ্যের গ্রাহক সহ স্টকহোষ্প্ররদের কাছে থেকে আপত্তি বা মতামত জানানোর জন্য সময় দেয় মাত্র ২১ দিন। অর্থাৎ ৩০ মে-র মধ্যেই স্টকহোষ্প্ররদের থেকে মতামত কমিশনের অফিসে পৌঁছানোর কথা। শেষ দফা নির্বাচন ছিল ১ জুন। ফল ঘোষণা ৪ জুন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের একমাত্র সংগঠন অ্যাবেকার পক্ষ থেকে আরও মাত্র ১৫ দিন সময় বাড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু কমিশন তাতে কর্ণপাত করেনি। স্বাভাবিক ভাবেই তা রাজ্য সরকারের দ্বারা মনোনীত এই বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে দেয়।

দেখা যাক বিদ্যুতের এই দাম বাড়ানোর আবেদনের কোনও গ্রহণযোগ্য যুক্তি আছে কি না। প্রথমত, বিদ্যুৎ আইন-২০০৩-এর ৬২(৪) ধারা অনুযায়ী যদি ফুয়েল (কয়লা) এবং পাওয়ার (বিদ্যুৎ) কেনার জন্য বাড়তি খরচ লাগে, তবে এই ধারায় বলা হয়েছে কোম্পানি এমভিসিএ (মান্থলি ভ্যারিয়েবল কস্ট অ্যাডজাস্টমেন্ট) খাতে সেই বাড়তি খরচ সেই সময়ের গ্রাহকদের বিলে আদায় করতে পারে। কিন্তু সেটা কোম্পানি করেনি। এটাই প্রমাণ করে ওই সময় কয়লার দাম ও বিদ্যুৎ কেনার খরচ বাড়েনি। দ্বিতীয়ত, বিদ্যুৎ আইন-২০০৩-এর ৬১(সি) ধারায় পরিষ্কার বলা হয়েছে, বিদ্যুতের মাশুল নির্ধারণের সময় কোম্পানিকে তার সমস্ত রিসোর্সের ইকোনোমিক্যাল ব্যবহার করতে হবে। এখন দেখা যাক সেটা কোম্পানি করেছে কি না।

কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে ২৫ শতাংশ কম দামে উৎকৃষ্ট মানের যে কয়লাখনি পেয়েছে সিইএসসি, যাকে ক্যাপটিভ কয়লাখনি বলা হয় সেখান থেকে তারা মাত্র ৩৯ শতাংশ কয়লা নিয়েছে। অথচ ৯০ শতাংশ কয়লা সেখান থেকেই নেওয়া যেত। কেন ক্যাপটিভ কয়লাখনি থেকে ৯০ শতাংশ কয়লা নেওয়া হল না? কোম্পানি তাদের এপিআর-এ বজবজ স্টেশনে ব্যবহৃত কয়লার যা দাম দেখিয়েছে (২০২১-২২ বর্ষে) তার সাথে ওই সময়ের (২৭-১১-২০২০) কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের কয়লার দামের তুলনামূলক তালিকা এই রকম।

                বজবজ স্টেশন  কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড

ক্যাটেগরি        প্রতি মেট্রিক টন          প্রতি মেট্রিক টন

জি-৩           ৪৭৪৮ টাকা     ৩১৫৪ টাকা

জি-৪            ৪৫৬৩ টাকা     ৩০১০ টাকা

জি-৮           ২৭৪৬ টাকা     ১৪৭৫ টাকা

জি-১২          ১৮১৭ টাকা     ৮৯৬ টাকা

এ ছাড়াও কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ (অক্টোবর ২০১৯ থেকে মার্চ ২০২০ পর্যন্ত) ই-অকশনে দ্বিতীয় ফেজে জি-৪ ক্যাটেগরির কয়লা বিক্রি করেছে ৩০০০ টাকা প্রতি মেট্রিক টন।

এ বার পাওয়ার পারচেজের বিষয়ে দেখা যাক সিইএসসি বিদ্যুৎ আইনের ৬১(সি) ধারা মেনেছে কি না। সিইএসসি তাদের এপিআর-এ দেখিয়েছে, ক্রিসেন্ট পাওয়ার প্রাইভেট লিমিটেড গত ৩১-৭-২০২০তে জানিয়েছে, তারা ২৪ ঘন্টা ধরে ৩৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৬৫ পয়সা দরে দেবে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি ওই সময় প্রতি ইউনিট ২ টাকা ১৬ পয়সা থেকে ২ টাকা ৭০ পয়সা দরে তা দিয়েছে। কিন্তু এই সিইএসসি তার প্রয়োজনের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ কিনেছে তাদেরই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র হলদিয়া এনার্জি থেকে গড়ে প্রায় সাড়ে পাঁচ টাকা প্রতি ইউনিট দরে। তারা দেখিয়েছে ২০২১-২২ বর্ষে গ্রীষ্মকালে হলদিয়া এনার্জি থেকে মোট ১৪১৯ মেগা ইউনিট বিদ্যুৎ কিনেছে প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ২০ পয়সা দরে। বর্ষাকালে তারা হলদিয়া এনার্জি থেকে মোট ১৪৮৬ মেগা ইউনিট বিদ্যুৎ কিনেছে প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ২০ পয়সা দরে। শীতকালে তারা হলদিয়া এনার্জি থেকে মোট ৯৯২ মেগা ইউনিট বিদ্যুৎ কিনেছে প্রতি ইউনিট ৫ টাকা ২১ পয়সা দরে। যে কেউ বুঝবেন, এই হিসাব কারচুপিতে ভরা।

এই হিসাব দেখিয়ে সিইএসসি তার গ্রাহকদের ঘাড়ে বাড়তি বিদ্যুতের দামের বোঝা চাপাতে চেয়ে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের কাছে যে আবেদন করেছে তা যুক্তিগ্রাহ্য নয়। অ্যাবেকা এই অযৌক্তিক বিদ্যুতের মাশুল বৃদ্ধির আবেদনের তীব্র বিরোধীতা করে ২৯ মে অনলাইনে (ই-মেল) এবং ৩০ মে হার্ড কপি স্পিড পোস্টে কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছে। এখন দেখার, কমিশন কী ভূমিকা পালন করে। যদি কমিশন সিইএসসি-র এই আবেদন মেনে নিয়ে বিদ্যুতের মাশুল বাড়িয়ে দেয়, তা হলে সিইএসসির বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বর্তমান বিদ্যুৎ বিলের সাথে এই ব্যাপক বর্ধিত মাশুল বকেয়া হিসাবে মাসে মাসে দিতে হবে। যদিও গ্রাহকরা বিগত ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ বর্ষের প্রতি মাসের বিদ্যুতের বিলের টাকা সেই সময়েই পরিশোধ করেছেন। কলকাতা ও তার সংলগ্ন সিইএসসির বিদ্যুৎ গ্রাহকরা এই চরম অন্যায় মেনে নিতে পারেন না। অ্যাবেকা এই অযৌক্তিক মাশুল বৃদ্ধির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য গ্রাহকদের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।