গণআন্দোলনের প্রবল চাপে প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকার এবং সম্প্রতি রাজ্য সরকার পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ–ফেল চালুর ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে৷ সঠিক দাবি, যোগ্য নেতৃত্ব এবং ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে আদায় সম্ভব, তা আবারও প্রমাণিত হল৷
এই জয়ের উপর দাঁড়িয়েই জনজীবনের জ্বলন্ত অন্যান্য সমস্যাগুলি সমাধানের দাবিতে আন্দোলন আরও তীব্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)৷ ডাক দিয়েছে ১৩ নভেম্বর নবান্ন ও উত্তরকন্যা অভিযান এবং রাজ্যপালের কাছে ডেপুটেশনের কর্মসূচির৷ সারা রাজ্য থেকে শ্রমিক–কৃষক–সাধারন মানুষ সহ জীবিকার প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে হাজার হাজার মানুষ সেদিন নিজ নিজ জীবনের দাবি নিয়ে সমবেত হবেন কলকাতার হেদুয়া পার্কে৷ এরই প্রস্তুতি চলছে রাজ্য জুড়ে৷ প্রচার চলছে চাষির খেতে, শ্রমিকের কারখানায়, হাটে–বাজারে–স্টেশনে– সর্বত্র৷ সেদিন কৃষকরা উপস্থিত হবেন ফসলের ন্যায্য দামের, সার–বীজ–তেল–জল– দাম কমানোর দাবি নিয়ে৷ অসংগঠিত শ্রমিকরা আসবেন ন্যূনতম মজুরি, কাজের স্থায়িত্ব আর নিরাপত্তার দাবি নিয়ে৷ মহিলারা আসবেন তাঁদের উপর বেড়ে চলা নির্যাতন, খুন ধর্ষণের প্রতিকার চেয়ে৷ চা–বাগান থেকে শ্রমিকরা আসবেন তাঁদের উপর মালিকী শোষণ–জুলুমের প্রতিকার আর ন্যায্য মজুরির দাবি নিয়ে৷ আশা, অঙ্গনওয়াড়ি, মিড–ডে মিল কর্মী, আইসিডিএস এবং পৌর স্বাস্থ্যকর্মীরা আসবেন তাঁদের সরকারি কর্মীর স্বীকৃতি, ন্যূনতম মজুরির দাবি নিয়ে৷ ছাত্ররা আসবে বিজ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক শিক্ষাকে ধ্বংসের এবং বেসরকারিকরণের প্রতিবাদ জানিয়ে৷ যুবকরা আসবেন তাঁদের যোগ্যতার উপযুক্ত কাজের দাবি নিয়ে৷ মূল্যবৃদ্ধি–বেকারি–শোষণ-বঞ্চনার জ্বালায় জ্বলতে থাকা হাজার হাজার মানুষের দৃপ্ত পদসঞ্চার, উচ্চকিত স্লোগান তুলবে গণআন্দোলনের নতুন ঢেউ৷ দাবি উঠবে, ‘মুখ্যমন্ত্রী দাবি মানো’৷ রাজ্যপালের উদ্দেশ্যে স্লোগান উঠবে, ‘মানুষে মানুষে বিভাজন তৈরির ষড়যন্ত্র এনআরসি চালুর পরিকল্পনা বাতিল করো’৷
শোষিত মানুষ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই ধরতে পারছে, বছর বছর ভোট দিয়ে সরকার বদলে, শাসকের রঙ বদলে জীবনের দুর্দশা ঘুচবে না৷ এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট) তার দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস মানুষের সামনে তুলে ধরে দেখাচ্ছে, শাসকরা শোষিত মানুষকে বঞ্চনা–প্রতারণা ছাড়া আর কিছু দেবে না৷ শ্রমজীবী তথা সাধারণ মানুষ সমাজের সমস্ত সম্পদের স্রষ্টা হওয়া সত্ত্বেও যুগে যুগে শাসকরা সাধারণ মানুষকে তাদের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু থেকেও বঞ্চিত করে এসেছে৷ সাধারণ মানুষ তাদের থেকে যা কিছু আদায় করেছে তা লড়াই করে, রক্ত ঝরিয়ে– অনিচ্ছুক শাসকরা এমনি এমনি কিছু দেয়নি, কোনও দিন দেবেও না৷ আজও বেঁচে থাকার ন্যায্য দাবি, তা সে মূল্যবৃদ্ধি রোধ হোক, কাজের দাবি হোক, ন্যায্য মজুরি হোক, মহিলাদের উপর নির্যাতন রোধই হোক কিংবা এনআরসি বাতিলের দাবি– যদি শাসক শ্রেণির কাছ থেকে এগুলি আদায় করতে হয় তবে সংগঠিত আন্দোলনই একমাত্র রাস্তা৷ প্রাথমিকে ইংরেজি চালুর দাবি আদায় কিংবা পাশ–ফেল চালু, বিদ্যুতের নানা সমস্যার প্রতিকার, স্কুল–কলেজে ফি বৃদ্ধি রোধ এবং অন্য বহু দাবি যা আদায় হয়েছে, তার কোনওটিই ভোট দিয়ে সরকার পাল্টে আদায় হয়নি, এমএলএ–এমপি–র সংখ্যা দিয়েও হয়নি, হয়েছে গণআন্দোলনের রাস্তায়৷ তাই আসুন, নিজেদের জীবনের দাবিগুলি আদায়ের আন্দোলনকে তীব্রতর করতে ১৩ নভেম্বর সুবিশাল এই মিছিলে পা মেলাই৷