পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের আস্ফালন ছাপিয়ে এগিয়ে এসেছে ভোট৷ টিভি চ্যানেলগুলিতে সারাক্ষণ এবং খবরের কাগজগুলিতে প্রথম থেকে শেষ পাতা পর্যন্ত জোট গঠন আর দলবদলের মুখরোচক খবর৷ ফলে পাবলিকও তা দেখে এবং পড়ে আড্ডায়, চায়ের দোকানের আলোচনায় সেগুলিই উঠে আসছে৷
তার মাঝেও সেদিন পাড়ার চায়ের দোকানে হঠাৎ দুই পরিচিত ব্যক্তির আলোচনা কানে এল৷ তপনবাবু খুব জোরের সাথে বলছিলেন, ক্ষমতায় আবার বিজেপিই আসবে৷ সঙ্গে সঙ্গে গোপালবাবু প্রশ্ন করলেন, কেন বিজেপি আসবে? গত পাঁচ বছরে দেশের মানুষের জন্য বিজেপি করেছেটা কী? তারপর রীতিমতো প্রশ্নবাণ– জিনিপত্রের দাম কমেছে? বেকাররা কাজ পেয়েছে? কৃষক ফসেলের ন্যায্য দাম পেয়েছে? দেশে কোনও শিল্প হয়েছে? তপনবাবু খানিকটা স্বর নামিয়ে বললেন, তা হলে আসবেটা কে শুনি? অমিতবাবু উত্তর দিলেন, ওই কংগ্রেসই আসবে, দেখে নিও৷ তপনবাবুর প্রশ্ন, কেন, কংগ্রেস সাধারণ মানুষের জন্য কী করেছে শুনি৷ গত সত্তর বছরে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের এই দুরবস্থার জন্য তো কংগ্রেসই প্রধানত দায়ী৷ পাশে বসা শ্যামলবাবু আর স্থির থাকতে পারলেন না৷ বলে উঠলেন, ছাড়ুন দাদা, সবাই সমান৷ আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য কংগ্রেসও কিছু করেনি, বিজেপিও কিছু করেনি৷ দুজনেরই রাজত্বে ধনী আরও ধনী হয়েছে, গরিব আরও গরিব হয়েছে৷ তপনবাবু খানিকটা খেদের সুরেই বললেন, এটাই আসল কথা৷ আমাদের জন্য কেউই কিছু করবে না৷ আমরা শুধু মারই খাব৷
গত সত্তর বছর ধরে ভোট রাজনীতির নির্যাসটা বোধহয় এই ছোট্ট আলোচনাটা থেকেই উঠে এল৷ পাঁচ বছর অন্তর কখনও লোকসভা কখনও বিধানসভার ভোট হয়েছে৷ একের পর এক সরকার বদলেছে৷ শাসক দলের রঙ বদলেছে৷ মানুষের দুরবস্থার কোনও পরিবর্তন হয়নি৷ মানুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছে, যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ৷ আমাদের জন্য কেউ কিছু করবে না৷
এবারের ভোটেও ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে সেই পুরনো নাটকেরই অভিনয় চলছে৷ সংবাদমাধ্যমগুলি তারই লাইভ সম্প্রচার শুরু করে দিয়েছে৷ কিন্তু শোষিত, নিপীড়িত, প্রতারিত মানুষ হিসাবে আমরা কি অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেব না? লঙ্কায় যাদের পাঠাচ্ছি তারা সেখানে গিয়ে রাবণ হচ্ছে নাকি রাবণদেরই পাঠাচ্ছি, তা একটু বিচার করে দেখব না?
গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি৷ দেশের সাধারণ মানুষ তিক্ত অভিজ্ঞতায় তাদের এখন রাবণ বলছে৷ সাধারণ মানুষকে আজ আর এ প্রশ্ন করার কোনও দরকার নেই যে, বিজেপি রাজত্বে আপনার জীবনের সমস্যাগুলির কী সুরাহা হয়েছে? এমন প্রশ্ন করলে নিশ্চিত তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করবেন, কেন আপনি কি এ দেশে থাকেন না? কারণ জনজীবনের এমন কোনও ক্ষেত্র নেই যেখানে বিজেপি সরকার এতটুকু সুরাহা আনতে পেরেছে৷
গত পাঁচ বছরের মোদি শাসনে মানুষের জীবনের সমস্যাগুলি আরও তীব্র আকার নিয়েছে৷ ২০১৪ সালে দেশের সাধারণ মানুষ যখন কংগ্রেসি অপশাসনে, নেতা–মন্ত্রীদের লাগামছাড়া দুর্নীতিতে, পুঁজিপতিদের দেদার লুঠতরাজে তিতিবিরক্ত অবস্থা থেকে রেহাইয়ের রাস্তা খুঁজছে, তখনই ভারতের পুঁজিপতি শ্রেণি, তাদেরই বিশ্বস্ত আর একটি দল বিজেপিকে চকচকে মোড়কে পুরে ‘অন্য রকমের দল’ হিসাবে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরল৷ নেতা হিসাবে নিয়ে এল নরেন্দ্র মোদিকে৷ পুঁজিপতিদের পরিচালিত সংবাদমাধ্যম তাঁকে ব্যাপক প্রচার দিয়ে তুলে ধরল ‘বিকাশ পুরুষ’ হিসাবে৷ তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে নাকি দেশের মানুষের আর কোনও দুঃখ থাকবে না, কষ্ট থাকবে না৷ তিনিও দেদার প্রতিশ্রুতি দিতে থাকলেন৷ বিজেপি জিতলে, তিনি প্রধানমন্ত্রী হলে সব হবে৷ বেকাররা কাজ পাবে৷ বছরে দু’কোটি বেকারের কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন৷ ক্ষমতায় বসামাত্র একশো দিনের মধ্যে জিনিসপত্রে দাম কমিয়ে দেবেন৷ চাষিরা ফসলের ন্যায্য দাম পাবেন৷ তাদের আর আত্মহত্যা করার দরকার হবে না৷ আর কী চাই? দুর্নীতি নিয়ে দেশের মানুষ জেরবার? দুর্নীতি দূর করে দেবেন৷ কালো টাকা দেশজুড়ে একটা সমান্তরাল অর্থনীতি চালাচ্ছে? তিনি তার মূল শুদ্ধ উপড়ে ফেলবেন৷ শুধু তাই নয়, বিদেশে গচ্ছিত সমস্ত কালো টাকা উদ্ধার করে এনে প্রতিটি ভারতবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে ভরে দেবেন৷ তিনি এমন রাজত্ব স্থাপন করবেন যেখানে সবার বিকাশ হবে৷ সবার জীবনে ‘আচ্ছে দিন’ চলে আসবে৷ কংগ্রেসের উপর বীতশ্রদ্ধ শোষিত বঞ্চিত মানুষ প্রতিশ্রুতি আর প্রচারের বন্যায় ভেসে গিয়ে আবার আশায় বুক বাঁধল৷ ভাবতে থাকল, আহা, এমন রাজত্ব এতদিন আসেনি কেন?
গত পাঁচ বছরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে৷ মানুষ তাদের অভিজ্ঞতায় বুঝেছে, কংগ্রেসের মতো বিজেপিও তাদের ডাহা ঠকিয়েছে৷ একটি প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করেনি৷ মুখে জনদরদের কথা বলেছে, আর তলে তলে দেশের পুঁজিপতি শ্রেণিরই সেবা করে গেছে৷ তাই গত পাঁচ বছরে ধনী–দরিদ্রের ফারাক আসমান–জমিন হয়েছে৷ মাত্র ১ শতাংশ ধনীর হাতে কুক্ষিগত হয়েছে দেশের ৭৩ শতাংশ সম্পদ৷ গরিবরা তলিয়ে গেছে আরও গভীর গরিবিতে৷ ৬০ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে দেশের সম্পদের মাত্র ৪.৮ শতাংশ৷ কংগ্রেস আমলের মতোই দেশের পুঁজিপতিদের মুনাফার দিকে লক্ষ্য রেখেই তৈরি হয়েছে নতুন আইন–কানুন, বদলানো হয়েছে পুরনোগুলিকে৷ এই ভাবেই ‘জনসেবা’ করে চলেছে বিজেপি৷
দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ এখনও কৃষির সঙ্গে যুক্ত৷ এই কৃষকদের দুরবস্থা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি৷ বলেছিলেন, চাষের খরচের উপর ৫০ শতাংশ লাভ রেখে ফসলের দাম নির্ধারণ করবেন৷ কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেবেন৷ অন্য প্রতিশ্রুতিগুলির মতো এর–ও লক্ষ্য ছিল শুধু মানুষের ভোট পাওয়া৷ তাই আজও চাষির আত্মহত্যার বিরাম নেই৷ এ রাজ্যে জলের দামে আলু বেচছেন চাষিরা, ৫০ পয়সা কেজি পিঁয়াজ বেচে নাসিকের চাষিরা আত্মহত্যা করছে৷ লঙ্কা, টমেটো রাস্তায় ফেলে দিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন চাষিরা৷ মধ্যপ্রদেশে বিক্ষোভরত চাষিদের গুলি করে হত্যা করেছে বিজেপি সরকার৷ তামিলনাড়ুর চাষিরা মৃত কৃষকদের মাথার খুলি নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন রাজধানী দিল্লিতে৷
একদিকে নোট বাতিল, অন্য দিকে জিএসটি চালু দেশের ক্ষুদ্র শিল্পকে ধ্বংস করেছে, মাঝারি শিল্পে ডেকে এনেছে চরম সংকট৷ কাজ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ৷ বৃহৎ শিল্পগুলিতে চাহিদার অভাবে উৎপাদন ক্ষমতার বিরাট অংশ অব্যবহৃত হয়ে পড়ে রয়েছে৷ চাহিদার অভাবের কারণ দেশের বেশির ভাগ মানুষের রোজগার নেই৷ তাই কেনার ক্ষমতা নেই৷ ফলে বৃহৎ শিল্পেও বিনিয়োগ হচ্ছে না৷ স্বাভাবিক ভাবেই নতুন কলকারখানা তো হচ্ছেই না, পুরনোগুলোও বন্ধ হচ্ছে৷ ফলে নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না৷ লকআউট–লেফ বাড়ছে৷ বাড়ছে ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকের সংখ্যা৷ ফলে দেশজুড়ে হুহু করে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা৷
প্রতি বছর দু’কোটি বেকারের চাকরির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ বাস্তবে বেকারদের পকোড়া ভেজে বিক্রি করার পরামর্শের বেশি তিনি কিছু করতে পারেননি৷ ঠিক যেমন পশ্চিমবাংলার তৃণমূল সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বেকার সমস্যা সমাধানের নিদান হিসাবে বেকারদের তেলেভাজা বিক্রির পরামর্শ দিয়েছেন৷ জনবিরোধী হলে বোধহয় শাসকদের চরিত্র একই রকমের হয়৷ কেন্দ্রীয় লেবার বুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশে কর্মক্ষম মানুষের প্রায় চল্লিশ শতাংশ বেকার৷ বিজেপি রাজত্বেই স্থায়ী চাকরির পরিমাণ সবেচেয়ে কমেছে৷ বেড়েছে চুক্তিভিত্তিক অস্থায়ী কাজের সংখ্যা৷ কর্মক্ষম মানুষকে কাজ দেওয়ার কোনও ব্যবস্থাই এই সরকার করতে পারেনি৷ কারণ কংগ্রেস সরকারের মতো বিজেপি সরকারও যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ম্যানেজারি করছে তার একমাত্র উদ্দেশ্য পুঁজিপতি শ্রেণির মুনাফার ব্যবস্থা করে দেওয়া, দেশের মানুষের প্রয়োজন মেটানো নয়৷ দেশের ১৩০ কোটি মানুষের প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে উৎপাদন হলে হাজার হাজার নতুন কলকারখানা স্থাপন করতে হত৷ তার জন্য প্রয়োজন হত লক্ষ লক্ষ শ্রমিক–কর্মচারীর, যা মানুষকে বেকার থাকতেই দিত না৷ পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার আসল সংকটটা এখানেই৷ সেই ব্যবস্থারই ম্যানেজারি করে যাচ্ছে বিজেপি কংগ্রেস এবং সমস্ত ভোটবাজ আঞ্চলিক দলগুলি৷
কালো টাকা উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি৷ বলেছিল নোট বাতিলের উদ্দেশ্য নাকি দেশ থেকে কালো টাকা নির্মূল করা৷ সবাই আজ জানে, নোট বাতিলের পর ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু আর লক্ষ লক্ষ মানুষের চরম দুর্ভোগ ছাড়া এতে লাভ কিছু হয়নি৷ একজন কালো টাকার মালিকও গ্রেপ্তার হয়নি৷ বরং নীরব মোদি, মেহুল চোকসি, ললিত মোদির মতো কালো টাকার মালিকদের বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে বিজেপি সরকারের নেতা–মন্ত্রীরা৷ ব্যাঙ্কগুলি থেকে প্রায় ১১ লক্ষ কোটি টাকা মেরে দিয়ে দিব্যি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে শিল্পপতি–পুঁজিপতির৷ হাজার হাজার চিটফান্ডে লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে পথের ভিখারিতে পরিণত হয়েছে, অথচ এখনও পর্যন্ত একজনও না পেল টাকা ফেরত, না দিল সরকার একজন দোষীকেও শাস্তি৷
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ১০০ দিনে জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেবেন৷ বাস্তবে জিনিসপত্রের দাম কীভাবে লাফিয়ে বেড়েছে তা সাধারণ মানুষের থেকে আর কেউ বেশি জানে না৷ অথচ বিজেপি জমানাতেই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতে কমতে অবিশ্বাস্য রকমের তলানিতে এসেছিল৷ চাইলেই সরকার দেশের বাজরে তেলের দাম কমিয়ে জিনিসপত্রের দাম কমাতে পারত, পরিবহণের ভাড়া কমিয়ে মানুষের জীবনে কিছুটা সুরাহা নিয়ে আসতে পারত৷ তা তো করেইনি, উপরন্তু, তেলের উপর লাগামছাড়া কর বসিয়ে জনগণের ঘাড় ভেঙে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আদায় করেছে৷ আর সেই টাকা থেকে দেশের পুঁজিপতিদের যথেচ্ছ ভর্তুকি দিয়েছে, ছাড় দিয়েছে৷ তাই তো ২০১৭ সালে যেখানে দেশের ধনকুবেরদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৩ লক্ষ ১৮ হাজার কোটি টাকা, সেখানে এক বছরেই তা বেড়ে ২০১৮–তে তা হয়েছে ৩১ লক্ষ ৩৪ হাজার কোটি টাকা৷
স্বাভাবিক ভাবেই শোষিত মানুষের বিক্ষোভ ফেটে পড়ছে দেশজুড়ে৷ বেশ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ে সেই ক্ষোভের প্রকাশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু এই বিক্ষোভ যাতে সংগঠিত রূপ নিতে না পারে, শেষপর্যন্ত পুঁজিবাদী এই সমাজ ব্যবস্থাটাকেই বদলে দেওয়ার আন্দোলনে রূপান্তরিত না হয়ে যায়, সেই লক্ষ্যেই পুঁজিপতি শ্রেণির বিশ্বস্ত এজেন্ট হিসাবে বিজেপি সমাজে যুক্তিবাদী চিন্তাপ্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে ধর্মীয় অন্ধতা এবং উগ্রতাকে চাগিয়ে তুলছে৷ শোষিত মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে, বর্ণের ভিত্তিতে বিভক্ত করে, পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়ে তাদের ঐক্যকে ভাঙতে চাইছে৷ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ধ্যানধারণাগুলিকে ধ্বংস করছে৷ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করছে৷ সিবিআই, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সুপ্রিম কোর্টের মতো আপাত স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলিকে কুক্ষিগত করতে চাইছে৷ এই প্রথম সুপ্রিম কোর্টের চারজন বিচারপতি প্রকাশ্যে সাংবাদিক সম্মেলন করে ঘোষণা করেছেন যে গণতন্ত্র আজ বিপন্ন৷
গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচার আর এ বারের প্রচারের একটা মূলগত পার্থক্য দেশের মানুষের খুবই চোখে পড়ছে৷ এ বার আর মানুষের জীবনের সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়গুলি প্রচারের মধ্যে বিজেপি নেতারা নিয়ে আসছেন না৷ কারণ, নতুন করে বিজেপির মানুষকে বলার কিছুই নেই৷ বিজেপি নেতারা জানেন, একই প্রতিশ্রুতিতে মানুষকে বার বার ভোলানো যাবে না৷ তা হলে মানুষকে ভোলানোর উপায় কী হবে? উপায় জাতীয়তার জিগির৷ সেই জিগির তুলতেই এতজন জওয়ানের মৃত্যুর তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করার পরিবর্তে বিজেপির নেতা–মন্ত্রীরা, তাঁদের অনুগৃহীত সংবাদমাধ্যমগুলি নেমে পড়ল পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের অলীক সাফল্যকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে৷ কিন্তু এর দ্বারা তো জওয়ানদের নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের চরম ব্যর্থতাকে ঢাকা দেওয়া যাবে না৷ তা ছাড়া, সাধারণ মানুষের জীবনের মূল সমস্যাগুলির সমাধানে বিজেপি সরকার যে পুরোপুরি ব্যর্থ, এই কঠিন সত্যটাকেও এই যুদ্ধ জিগিরের দ্বারা ঢেকে ফেলা যাচ্ছে না৷ কারণ মানুষ এটা খুবই ভাল বোঝে যে জীবনের মূল সমস্যাগুলিকে অবহেলা করে পাকিস্তানের দিকে গোলা ছুঁড়লে তাদের পেট ভরবে না৷ তাই গত পাঁচ বছরে বিজেপি সরকার সাধারণ মানুষের জন্য কী করেছে, নির্বাচনের মুখে এ প্রশ্ন বিজেপি নেতাদের রীতিমতো তাড়া করছে৷