হায়দরাবাদের ঘটনা প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ৭ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে বলেন,
২৭ নভেম্বর রাতে হায়দরাবাদে এক চিকিৎসক তরুণীর নির্মম ধর্ষণ ও হত্যা এবং তার পরে পুলিশের হাতে সেই ঘটনায় অভিযুক্ত চার অভিযুক্তের মৃত্যুর ঘটনা গোটা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷ কিন্তু আমাদের দেশে আজ আর এ কোনও বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা নয়৷
শাসক বুর্জোয়া শ্রেণি ও তাদের সেবাদাস সরকারগুলি মদ, ড্রাগ, পর্নোগ্রাফি, ব্লু ফিল্মের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়ে যুবসমাজের এক বড় অংশকে অপরাধপ্রবণতা ও যৌনদাসত্বের শিকারে পরিণত করছে৷ এর ফলে যেকোনও বয়সের মহিলাদের ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও হত্যা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা ব্যাপক জনসাধারণের মধ্যে গভীর বেদনা, উদ্বেগ ও ক্রোধের সৃষ্টি করেছে৷
অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে মানুষ লক্ষ করছে যে এ ধরনের ঘটনা বার বার হওয়া সত্ত্বেও, কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকারগুলি, তাদের পুলিশ–প্রশাসন ও বিচারবিভাগ মহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুরক্ষা এবং অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হচ্ছে৷ এমনকি কিছু কিছু অপরাধী শাসক দলগুলির মদতে রক্ষাও পেয়ে যাচ্ছে৷
হায়দরাবাদের ঘটনায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর পুলিশ–প্রশাসন সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়ায় গোটা দেশ জুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়৷ পুলিশ বাধ্য হয় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে৷ পরে ৬ ডিসেম্বর রাত তিনটের সময় ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য ওই অভিযুক্তদের পুলিশ অকুস্থলে নিয়ে যায় এবং পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে চার অভিযুক্তেরই মৃত্যু হয়৷
লক্ষণীয় পুলিশ কর্তৃক চার অভিযুক্তের হত্যার ঘটনায় জনসাধারণের একাংশ যেমন উল্লাস প্রকাশ করছে, তেমনই অন্য একটি অংশ এ সম্পর্কে সংশয় প্রকাশ করে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে– (১) দিনের আলোয় না করে কেন পুনর্নির্মাণের ঘটনা গভীর রাতে, নিরপেক্ষ সাক্ষীদের অনুপস্থিতিতে করা হল? (২) দশ জন সশস্ত্র পুলিশের উপস্থিতিতে কী করে একজন নিরস্ত্র অপরাধী এক পুলিশের রিভলবার কেড়ে নিয়ে গুলি চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করতে পারল? (৩)পুলিশের গুলিতে চার অপরাধীর মৃত্যু হল, অথচ একজনও পুলিশ কর্মীর শরীরে গুলির আঘাত হল না কেন? (৪) আত্মরক্ষার প্রয়োজনে গুলি চালাতে হয়ে থাকলে পুলিশ কেন অপরাধীদের হাঁটুর নিচে গুলি চালালো না? এসব প্রশ্ন থেকেই মানুষের অনুমান, নিজেদের পূর্বেকার অপদার্থতা ও অবহেলা চাপা দিয়ে জনগণের চোখে ‘হিরো’ সাজার চেষ্টাতেই হয়তো এক্ষেত্রে পুলিশ ভুয়ো সংঘর্ষ ঘটিয়েছে৷ আমাদের দেশে ইতিপূর্বে বেশ কিছু ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনা থাকায় মানুষের এই অনুমান আরও জোরদার হয়েছে৷
আমাদের দাবি, সত্য প্রকাশের জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত হোক এবং যদি পুলিশ কর্মীরা দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক৷ আমাদের আরও দাবি, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলিকে অতি অবশ্যই মহিলাদের নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং ধর্ষণ ও হত্যায় অপরাধীদের তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার করতে ও কঠিন শাস্তি দিতে হবে৷ যৌনতা, ড্রাগ ও মদের নেশা ইত্যাদির প্রসার ঘটিয়ে মানুষকে ‘অমানুষ’ করার শাসক দলগুলির ষড়যন্ত্র ক্রমাগত ঘটে চলা ধর্ষণ–হত্যার মতো ঘটনাগুলির মূল কারণ৷ এর বিরুদ্ধে দেশজোড়া গণআন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি৷