বিশ্ব জুড়ে ইতিমধ্যেই দুই লক্ষাধিক মানুষের ঘাতক করোনা মহামারি পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে অচল করে দিয়েছে৷ সঠিকভাবে বরং বলা উচিত এই অচল ব্যবস্থার কঙ্কালটাকে যেন একেবারে হাটের মাঝে ঝুলিয়ে দিয়েছে৷ যে সব বিশাল বিশাল শক্তিধর দেশ একটা বোতাম টিপে পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে যে কোনও দেশকে পরমাণু বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ধরে তারা করোনা ভাইরাসের সামনে প্রায় নতজানু হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছে৷ ২৭ মে পর্যন্ত বিশ্ব করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬ লক্ষ, মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে ৩ লক্ষের গণ্ডিকেও৷ এর মধ্যে একা আমেরিকাতেই আক্রান্ত ১৭ লক্ষ ১৬ হাজারের বেশি, মৃত্যু ১ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে৷ মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশের মানুষকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়ে ঘোষণা করে দিয়েছেন, করোনা আড়াই লক্ষ নাগরিকের প্রাণ নেবে, তাঁর কিছু করবার নেই৷ মানুষকে করোনা মহামারির গ্রাসের মুখে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে দেশে দেশে পুঁজিবাদী শাসকেরা৷
এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়েই মানুষের মধ্যে আকুতি– এই ব্যবস্থা আর চলতে পারে না৷ চাই সমাজতন্ত্র৷ সমাজতন্ত্রের প্রতি মানুষের এই আকুতি যেন আজ ভুতের ভয়ের মতো পুঁজিবাদী দুনিয়ার কর্ণধারদের ঘুমের মধ্যেও তাড়া করে বেড়াচ্ছে৷ সেই ‘কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো’–র কাল থেকেই এর হাত থেকে তাঁদের একদিনের জন্য রেহাই মেলেনি, আজ তাঁদের সেই আতঙ্ক আরও চেপে বসছে৷ আজ দেখা যায় লকডাউনে শুনশান ব্রাসেলস (নেদারল্যান্ডসের রাজধানী) শহরের রাস্তার ধারের বাড়ির ব্যালকনি থেকে এক তরুণীর কন্ঠে ইতালির শ্রমিকদের গান যখন ঝঙ্কার তুলে বলে ‘কমিউনিজমের জয় অবশ্যম্ভাবী, লাল পতাকার বিজয় রুখতে পারবে না কেউ’– তার সাথে গলা মেলায় গোটা পাড়া৷ আমেরিকা ইউরোপের দেশে দেশে উঠছে স্লোগান, পুঁজিবাদ নয়, চাই সমাজতন্ত্র৷ তাই আজ সংবাদপত্র লেখে, ‘আর্থিক সমৃদ্ধি বন্টনে যে অসাম্য, তাহা দূর করিতে না পারিলে বিপদ গভীরতর হইবে৷ ইতিমধ্যেই ইতস্তত রব উঠিয়াছে সমাজতন্ত্রের অভ্যুত্থান অনিবার্য’ (আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬.০৪.২০২০)৷ কিন্তু এই অনিবার্যতাকে মানলে কি আর পুঁজিবাদের সেবকদের চলে? তাই তাঁরা লেখেন, ‘যে আর্থিক সংকট উপস্থিত হইয়াছে ধনতন্ত্রের আত্মশুদ্ধির অদম্য স্পিরিটেই তাহা হইতে নিস্তারের রাস্তা খুঁজিতে হইবে’ (ওই)৷
কিন্তু কী সেই অদম্য স্পিরিট, কেমনই বা তার আত্মশুদ্ধির রূপ? অদম্য স্পিরিটের একটি রূপ দেখা যাক– এশিয়ার ধনীতম ব্যক্তিরূপে পরিগণিত মুকেশ আম্বানি সাহেব লকডাউনের মধ্যে শুধু এপ্রিল মাসেই ৯২ হাজার ২০২ কোটি টাকারও বেশি ঘরে তুলেছেন (আনন্দবাজার পত্রিকা, ০৬.৬.২০২০ )৷ বিশ্বে ধনকুবেররা অনেকেই এই সময় মহামারির দৌলতেই বিপুল মুনাফা করেছেন৷ মহামারিকে কাজে লাগিয়ে বিপুল এই মুনাফা নিয়ে খোদ আমেরিকার বুকেও প্রশ্ন উঠছে৷ দাবি উঠছে, মার্কিন কংগ্রেস (সে দেশের সংসদ) ‘প্যান্ডেমিক প্রফিটিয়ারিং ওভার সাইট কমিটি’ গঠন করুক, যাতে মহামারিকে কাজে লাগিয়ে বিশাল মুনাফাকে নিযন্ত্রণ করা যায়৷ কিন্তু তাতেই বা কি এসে যায়? ১২ মার্চ, করোনা মহামারির কারণে মার্কিন শেয়ার বাজারে ধসের জন্য যে দিনটিকে ‘ব্ল্যাক থারসডে’ বলা হয়, সেই দিনে লক্ষ লক্ষ শেয়ার লগ্নিকারি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন, সেই দিনে কয়েকজনধনকুবের ফাটকার কারবারে ঘরে তুলেছেন প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি ডলার৷ লকডাউনের দেড়মাসে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে পণ্য সরবরাহ করার কোম্পানি আমাজনের মালিক জেফ বেজোস লাভ করেছেন ২৫০০ কোটি ডলার, টেসলা কোম্পানির মালিক এলন মাস্ক্ মুনাফা করেছেন ১০০০ কোটি ডলার৷ অনলাইন পড়াশোনা, ভিডিও কনফারেনসিং ইত্যাদি চালিয়ে ‘জুম’ কোম্পানির এরিক ইউয়ানের মুনাফা হয়েছে ৩৫০ কোটি ডলার প্রায়, মাইক্রোসফটের বিল গেটস, ফেসবুকের জুকেরবারগ কেউই কম যাননি (ফোর্বস ম্যাগাজিন, ১ মে ২০২০)৷ ভারতের ‘এড টেক’ কোম্পানি অনলাইন ক্লাস মিটিং ইত্যাদি বেচে লকডাউনে ৪০ কোটি ডলার তোলার পরিকল্পনা নিয়ে নেমে ১০০ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার রোজগার করে ফেলেছে৷ অনলাইনে জিনিসপত্র বেচার কোম্পানি ‘এভিনিউ সুপারমার্ট’ কোম্পানির মালিক রাধাকৃষ্ণ দামানি কামিয়েছেন প্রায় ১০০০ কোটি ডলার৷ তার থেকে তিনি ১০০ কোটি ডলার বিজেপি নেতাদের তহবিল ‘পিএম কেয়ারসে’ দান করে শুদ্ধ হয়েছেন (ইন্ডিয়া নিউজ.কম ৮.০৪.২০২০)৷ যখন সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ একমুঠো খাবার, দু–চার টাকা রোজগারের চিন্তায় আকুল, সেই সময় ধনকুবেররা ‘অদম্য স্পিরিট’ দেখিয়েছেন বটে তাঁরা যাতে এমন ‘স্পিরিট’ দেখাতে পারেন তার জন্যই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প, চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন থেকে শুরু করে ইতালি, রাশিয়া ফ্রান্স, জার্মানি ইত্যাদি পুঁজিবাদী–সাম্রাজ্যবাদী দেশের শাসকরা কেউই কোভিড–১৯ ভাইরাস জনিত মহামারি প্রায় হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগে দেশে লকডাউন করেননি৷ যাতে ধনকুবেররা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারে৷ আবার যখন লকডাউনও করেছেন, তখন তাঁদের আসল প্রভু ধনকুবেরদের মুনাফার পথটা ঠিক করে দিয়েছেন৷ আর সব কিছু বন্ধ রেখেও লকডাউনের সময়েই দেশের মানুষের পয়সায় ভারত সরকার একের পর এক যুদ্ধাস্ত্র কিনে গেছে৷ কারণ আম্বানি, আদানি, টাটা ইত্যাদি ধনকুবেরদের অন্য দেশের বাজার দখলের তাকত বাড়াতে হবে৷ একই সাথে দেশীয় পুঁজিপতিদের জন্য অস্ত্র তৈরির বরাত ধরার দালালির কাজে ঢিলে দেননি নরেন্দ্র মোদিরা৷ অথচ দেশের চিকিৎসকরা, নার্সরা সুরক্ষা পোশাক (পিপিই)–র অভাবে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন৷ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ তৈরি করতে পারত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেঙ্গল কেমিক্যাল৷ কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বসিয়ে রেখে ওষুধের অর্ডার দিয়েছে মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটের কর্পোরেট কোম্পানিকে৷ যাতে তাদের মুনাফা হয়৷
ট্রাম্প সাহেব আবার এর মধ্যেই একদিকে অস্ত্র বেচার কাজ করে গেছেন অন্যদিকে মোটর গাড়ি কোম্পানিদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে তাদের জন্য বিশ্ব ঢুঁড়ে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র বা ভেন্টিলেটর মেশিন তৈরির অর্ডার জোগাড় করতে কোমর বেঁধে নেমেছেন৷ ‘বন্ধু’ নরেন্দ্র মোদিকে হুমকি দিয়ে তিনি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ ভারতের মানুষকে বঞ্চিত করে প্রায় লুঠ করেছেন, সেই ওষুধ নিয়ে ব্যবসা করছে ট্রাম্প সাহেবের কোম্পানি সহ আরও কয়েকটি মার্কিন বহুজাতিক৷ মার্কিন সংবাদ মাধ্যমই লিখেছে, ফরাসি ওষুধ কোম্পানি সানফিতে ঘুরপথে ট্রাম্প সাহেব বিনিয়োগ করেছেন৷ সেই কোম্পানি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বেচছে৷ আয়ারল্যান্ডকে মার্কিন সরকার চাপ দিচ্ছে সেখানে মার্কিন ওষুধ কারখানা খুলতে দেওয়ার জন্য (ভক্স.কম, ৭.০৪.২০২০)৷ ট্রাম্প সাহেব এখন মার্কিনভেন্টিলেটর কিনতে ভারত সহ নানা দেশকে চাপ দিচ্ছেন৷ মহামারি যত বাড়বে তত ব্যবসা জমবে স্পিরিটের তুলনা নেই
‘আত্মশুদ্ধি’র একটা অসাধারণ উদাহরণ অবশ্য ভারতের বুর্জোয়া ব্যবস্থার কর্ণধাররা রেখেছেন৷ আজকের দিনের পুঁজিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য যে সীমাহীন দুর্নীতি তা সকলেরই জানা৷ আগে অসাধু পুঁজি মালিকদের সাথে রাষ্ট্রের কর্ণধারদের যোগসাজশকে বলা হত ‘ক্রোনি ক্যাপিটালিজম’ বা স্যাঙাৎতন্ত্র৷ আজকের দিনে আলাদা করে ‘ক্রোনি’ হওয়ার দরকার নেই৷ পুরো ব্যবস্থাটাই ‘ক্রোনি’৷ সরকার থেকে রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিটি মেশিনারি এবং পুঁজিমালিক সকলেই এই চক্রে অঙ্গীভূত৷ এই লকডাউনের মধ্যেই চীন থেকে করোনা পরীক্ষার কিট আমদানি করার বরাত নিয়েছিল গুজরাটের এক সংস্থা৷ দেখা গেল তার প্রত্যেকটিই জাল৷ ফলে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের করোনা পরীক্ষায় ত্রুটি থেকে গেছে৷ এর ফলে ‘স্পিরিট’ কিংবা ‘আত্মশুদ্ধির’ যে অভাব হয়নি তার প্রমাণ কয়েকদিনের মধ্যেই দিয়েছে আর একটি সংস্থা, তারা দেশজ ভেন্টিলেটর বলে যে মেশিন গুজরাট সরকারকে দিয়ে কিনিয়েছে, তার একটিও কোনও কাজ করে না৷ টাকা তারা পেয়ে গেছে অবশ্যই৷ কী করে? এই দুটি সংস্থাই প্রধানমন্ত্রীর খুব ঘনিষ্ঠ মালিকের৷ দ্বিতীয়জন সেই বিখ্যাত ১০ লাখ টাকা দামের সোনার সুতো দিয়ে সর্বাঙ্গে নরেন্দ্র মোদি লেখা কোটটি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিয়েছিলেন (আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৪.০৫.২০২০)৷ মানুষ জাল ভেন্টিলেটরে খাবি খেয়ে মরুক৷ ‘আত্মশুদ্ধি’র ঘাটতি যেন না পড়ে
২১ এপ্রিল ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরু, বলিভিয়া, কলম্বিয়া সহ ল্যাটিন আমেরিকার বিস্তীর্ণ এলাকার এক মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেছে৷ কোভিড–১৯–এর থেকেও এই সব দেশের কোটি কোটি মানুষের সামনে প্রধান বিপদ অনাহার আর বেকারি৷ ফলে মানুষ আর লকডাউন মানতে নারাজ৷ বলিভিয়ার সরকার মিলিটারি দিয়ে লকডাউন চালানোর চেষ্টা করেছে, সেখানে সাংবাদিকরা দেখেছেন বাড়িতে বাড়িতে জানলায় লাগানো লাল ফিতের ক্রশ৷ এর অর্থ হল, বাড়িতে আটকে থাকা মানুষরা যে অনাহারে আছে, তা জানিয়ে সেনা জওয়ানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মরিয়া চেষ্টা করছেন বাসিন্দারা ৷ ব্রাজিলের মহামারি বিশেষজ্ঞ ইভান ফ্রাঙ্কা গার্ডিয়ানের সাংবাদিকের কাছে বলেছেন, ‘স্টে হোম’ ‘স্টে সেফ’ এইসব কথাগুলি সাধারণের কানে শোনায় বুদ্ধিজীবীদের কিছু পোশাকি বুলির মতো৷ এসব তাদের কাছে অর্থহীন৷ বেঁচে থাকার ন্যূনতম উপকরণগুলিই তো সরকার তাদের দেয়নি৷ মে মাসের শেষে বিশ্ব দেখেছে ব্রাজিল সহ গোটা ল্যাটিন আমেরিকা করোনার হটস্পটে পরিণত হয়েছে৷ সারি সারি কবর খোঁড়া হয়েছে ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়া, মেক্সিকোর মতো দেশে (বিবিসি নিউজ, ২২.০৫.২০)৷
আর আমেরিকা? এপ্রিল মাসেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত এবং মৃতের দেশ বলে পরিচিতি পেয়েছে আমেরিকা৷ কৃষ্ণাঙ্গ, আফ্রো–আমেরিকান, হিস্পানিক, এশিয়ান বংশোদ্ভুত আমেরিকান নাগরিকরাই সবচেয়ে বেশি করে করোনা ভাইরাসের শিকার হয়েছেন৷ এই জনগোষ্ঠীর মানুষই আমেরিকা জুড়ে কম বেতনের কায়িক শ্রম, ড্রাইভারি, রেস্টুরেন্টের রাঁধুনি, ওয়েটার, সাফাইকর্মী ইত্যাদি কাজ করে থাকেন৷ আমেরিকা জুড়ে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এতটাই ব্যবসায় পরিণত যে জনস্বাস্থ্য বিষয়টাই লোপ পেয়ে গেছে৷ ফলে চিকিৎসার কোনও সুযোগই গরিব মানুষের নেই৷ তাঁরা দলে দলে মরেছেন, বিনা চিকিৎসায়৷ ধনতন্ত্রের ‘অদম্য স্পিরিট’ নিয়ে মার্কিন সরকার কী করেছে? মালিকরা লকডাউনের মধ্যে যথেচ্ছ ছাঁটাই করেছে৷ সরকার নীরব দর্শক হয়েই থেকেছে৷ এপ্রিল মাসের মধ্যেই সাড়ে চার কোটির বেশি মার্কিন শ্রমিক বেকার হয়েছেন (এএফপি ২৪.০৪.২০২০)৷ আর মার্কিন সরকারের ভূমিকা? তারা কাজ হারানো মানুষকে কিছুই দেয়নি৷ কিন্তু পুঁজির স্টিমুলাস হিসাবে বড় বড় একচেটিয়া মালিককে ৫ হাজার কোটি ডলারের প্যাকেজ দিয়েছে৷
তাহলে ধনতন্ত্রের ‘অদম্য স্পিরিট’–এর মানে কী দাঁড়াচ্ছে? লুঠ, সীমাহীন লুঠ৷ মানুষের শ্রমশক্তি, প্রকৃতির সম্পদ সব কিছুকে লুঠ করাই তার ‘স্পিরিট’৷ এর প্রয়োজনে কোনও নীতি–নৈতিকতার ধার সে ধারে না৷ এ কাজে মানুষের জীবন জীবিকা ধ্বংস, প্রকৃতির চরম ক্ষতি সাধনে, যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতেও এতটুকু পিছপা নয় ধনতান্ত্রিক ব্যস্থার রক্ষক গণতন্ত্রের ধ্বজাধারীরা৷
একশো বছরেরও বেশি আগে মার্কস–এঙ্গলসের যথার্থ উত্তরসূরী দুনিয়ার প্রথম সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার রূপকার লেনিন দেখিয়েছিলেন, ‘‘পুঁজিবাদের বিকাশ আজ এমন একটা স্তরে পৌঁছেছে যখন আগের মতোই পণ্যোৎপাদনের ‘রাজত্ব’ চললেও এবং সমগ্র অর্থনীতির বনিয়াদ বলে তা বিবেচিত হলেও বাস্তবক্ষেত্রে তাতে ফাটল ধরেছে৷ এবং প্রধান মুনাফাটা যাচ্ছে ফিনান্স কারচুপির ‘প্রতিভাবানদের’ হাতে৷ এইসব কারচুপি ও ঠগবাজির ভিত্তিতে রয়েছে উৎপাদনের সামাজিকীকরণ৷ কিন্তু এই সামাজিকীকরণ করতে মানবজাতি যে বিপুল অগ্রগতি ঘটিয়েছে তা কাজে লাগছে… ফাটকাবাজদের’’ (সাম্রাজ্যবাদ–পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ পর্যায়)৷ আজ সারা দুনিয়ায় কী দেখা যাচ্ছে? শিল্প উৎপাদন, মানুষের ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন যখন পুরোপুরি তলানিতে, সেই পরিস্থিতিতে ফাটকার কারবার এবং তথাকথিত ডিজিটাল ব্যবসা করে ফেসবুক, গুগল, জিও, আলিবাবার মতো কোম্পানিগুলো বিপুল মুনাফা লুটছে৷ আমাজন, জিও, ফেসবুক, জুম কোটি কোটি মানুষের তথ্য বেচেই কামাচ্ছে হাজার হাজার কোটি কোটি ডলারের মুনাফা৷
এই লুঠেরা ব্যবস্থার স্বরূপ আজ অনেক চড়া মূল্যে চিনতে হচ্ছে মানুষকে৷ এ শিক্ষা ব্যর্থ হতে দিতে না চাইলে এই ব্যবস্থাটাকে উপড়ে ফেলার কাজে হাত লাগাতে হবে সকল নিপীড়িত মানুষকে৷