‘‘পুঁজিপতিরা ‘স্বাধীনতা’ কথাটি সর্বদা ব্যবহার করে ধনীদের আরও ধনী হওয়ার এবং শ্রমিকদের অনাহারে মৃত্যুর স্বাধীনতা বোঝাতে৷ পুঁজিবাদী পরিভাষায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কথাটির অর্থ হচ্ছে, সংবাদপত্রের মালিকদের ঘুষ দিতে ধনীদের স্বাধীনতা এবং তথাকথিত জনমত গঠন করার জন্য, জনমতের নামে গল্প বানাবার জন্য ধনীদের অর্থব্যয়ের স্বাধীনতা৷ এ ক্ষেত্রেও ‘খাঁটি গণতন্ত্রের’ প্রবক্তারা নিজেদের একটি চূড়ান্ত অন্যায় ও অসৎ ব্যবস্থার রক্ষক রূপে প্রমাণ করে– যে ব্যবস্থা সংবাদমাধ্যমের উপর ধনীদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে৷ এভাবে ঐ প্রবক্তারা নিজেদের জনগণের প্রতারক বলেও প্রমাণ করে, যাদের কাজ হল, আপাত যুক্তিগ্রাহ্য, শ্রুতিমধুর কিন্তু সর্বৈব মিথ্যা বাক্যজাল বিস্তার করে পুঁজিবাদের দাসত্ব থেকে সংবাদমাধ্যমকে মুক্ত করার সুনির্দিষ্ট ঐতিহাসিক কর্তব্য জনগণকে ভুলিয়ে দেওয়া৷… পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় প্রসিদ্ধ এই ‘পবিত্র গণতন্ত্রের’ আসল চেহারা কীরকম তা এমনকী যুদ্ধের পূর্বেও, ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর ইতিহাস আমাদের দেখিয়েছে৷… গণতন্ত্র যত আরও ‘পবিত্র’ হয়ে পরিণত রূপ নিয়েছে, শ্রেণীসংগ্রাম ততই আরও নগ্ন, তীব্র ও নির্মম হয়েছে এবং পুঁজিবাদী নিপীড়ন ও বুর্জোয়া একনায়কতন্ত্র তত ‘পবিত্রতর’ হয়ে ডঠেছে৷… বুর্জোয়ারা প্রধানত এই সত্যই গোপন করতে চাইছে যে, সবচেয়ে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রগুলিতে বাস্তবে সন্ত্রাস ও বুর্জোয়া একনায়কতন্ত্রই কায়েম রয়েছে এবং তা তখনই নগ্ন হয়ে দেখা দেয়, বুর্জোয়ারা যখনই মনে করে পুঁজির শাসন ক্ষমতা নড়বড়ে হয়ে পড়ছে৷’’
কমিডনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের প্রথম কংগ্রেসের থিসিস ও রিপোর্ট, ৪ মার্চ, ১৯১৯, রচনাবলি ২৮ খণ্ড