২০২০ সালের ২৮ নভেম্বর বিশ্ব সাম্যবাদী আন্দোলনের মহান নেতা ফ্রেডরিখ এঙ্গেলসের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ সমগ্র দেশের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে ইংরেজিতে একটি আলোচনা করেন যা অনলাইনে সম্প্রচারিত হয়। ৫ আগস্ট মহান এঙ্গেলসের ১২৬তম মৃত্যুদিবস উপলক্ষে সেই ইংরেজি আলোচনাটির বঙ্গানুবাদ ধারাবাহিকভাবে আমরা প্রকাশ করছি। অনুবাদে কোনও ভুলত্রুটি থাকলে তার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আমাদের। এবার ষষ্ঠ পর্ব। – সম্পাদক, গণদাবী
প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতা
১৮৭৩ সালে এঙ্গেলস মার্কসকে জানালেন যে, প্রকৃতি জগতে দ্বান্দ্বিকতা সম্পর্কে তিনি একটা বড় লেখা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি ১৮৭৫-৭৬ সালে এই লেখাটির প্রাথমিক রূপরেখা তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেননি। কারণ, ঠিক তার পরেই অন্য একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যেখানে সর্বহারা শ্রেণির বিপ্লবী আন্দোলনের স্বার্থে ড্যুরিং-এর সমালোচনা করার দায়িত্ব তাঁকে নিতে হয়েছিল এবং ‘প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতা’ নিয়ে সংগৃহীত তথ্যগুলি এই লেখায় ব্যবহার করতে হয়েছিল। এর পরে, ১৮৮২ সালে তিনি মার্কসকে জানালেন, তাঁর আশা, খুব তাড়াতাড়িই তিনি ‘প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতা’ বিষয়ে লেখাটা শেষ করতে পারবেন। কিন্তু ১৮৮৩ সালে মার্কসের মৃত্যুর পর ‘পুঁজি’ গ্রন্থের বাকি খণ্ডগুলি সম্পাদনা ও প্রকাশ করার জন্য এঙ্গেলস নিজে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করলেন। এই কারণে ‘প্রকৃতির দ্বান্দ্বিকতা’ লেখার কাজটা অসম্পূর্ণ থেকে গেল। তা সত্তে্বও তখন এটি প্রকৃতি-জগৎ নিয়ে মার্কসবাদী ধারণা গড়ে তুলতে খুবই সাহায্য করেছিল। এই বইয়ের ভূমিকায় এঙ্গেলস রেনেসাঁর যুগ থেকে ডারউইনের সময় পর্যন্ত প্রকৃতি বিজ্ঞানের একটা প্রজ্ঞাদীপ্ত রেখাচিত্র তুলে ধরেন। প্রকৃতি বিজ্ঞানের বিশাল অগ্রগতি–বিশেষ করে প্রাণী ও উদ্ভিদ কোষ, শক্তির নিত্যতা ও রূপান্তরের নিয়ম এবং প্রাণী ও উদ্ভিদের বিবর্তন সম্পর্কিত ডারউইনের তত্ত্ব– এই তিনটি আবিষ্কারের সাহায্য নিয়ে এঙ্গেলস দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে গড়ে ওঠা প্রকৃতি বিজ্ঞানের ভিত্তিটি উন্মোচিত করেন। তিনি দেখালেন যে, প্রকৃতিতে সবকিছুই ঘটে দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায়, বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড স্থান ও কালের নিরিখে অসীম, নিরবচ্ছিন্ন গতি ও পরিবর্তনের ধারায় চলমান এবং বস্তু ও গতি অবিনাশী– শুধু পরিমাণগত নয়, গুণগত ভাবেও। তাঁর কিছু মূল্যবান পর্যবেক্ষণ এই বই থেকে তুলে ধরছিঃ
‘‘সমস্ত আধুনিকতর ইতিহাসের মতোই আধুনিক প্রকৃতি বিজ্ঞানেরও শুরু হয়েছে এই মহান যুগটি থেকে, যে যুগটিকে আমরা জার্মানরা নাম দিয়েছি, সেই সময় যে নিদারুণ দুর্দশা আমাদের ঘিরে ধরেছিল, তা থেকে ‘উন্নতিসাধন’ বা ‘রিফরমেশন’, ফরাসিরা যাকে বলে থাকে ‘রেনেসাঁ’ এবং ইতালিয়রা বলে ‘চিনকুইসেন্টো’– যদিও এই নামগুলির কোনওটির দ্বারা এই যুগের তাৎপর্য পরিপূর্ণভাবে প্রকাশিত হয় না। এই যুগের উদ্ভব পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষার্ধে। শহরের সম্পদশালী নাগরিক (বার্গার)-দের সমর্থনপুষ্ট হয়ে রাজশক্তি ধবংস করল সামন্ত-অভিজাত সম্প্রদায়ের ক্ষমতাকে এবং প্রতিষ্ঠা করল মূলত জাতিসত্তা ভিত্তিক বড় বড় রাজতন্ত্র, তাদের মধ্যেই আধুনিক ইউরোপীয় জাতিগুলির এবং আধুনিক বুর্জোয়া সমাজের বিকাশ ঘটেছে।”
‘‘মানবজাতির এযাবৎকালের অভিজ্ঞতায় এ হল মহত্তম প্রগতিশীল বিপ্লব। এ এক সময় যা দাবি করেছিল মহামনীষার এবং মননক্ষমতা, আবেগ ও চরিত্রে, বিশ্বজনীনতা ও জ্ঞানের দিক দিয়ে সৃষ্টি করেছিল মহামনীষীদের। এই যে মানুষেরা বুর্জোয়া শ্রেণির আধুনিক শাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন, তাঁদের একেবারেই বুর্জোয়াসুলভ সীমাবদ্ধতা ছিল না। বরং সেই যুগের দুঃসাহসিক চরিত্রই তাঁদের কম-বেশি উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল। এই সময়কার গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের মধ্যে এমন কেউই প্রায় ছিলেন না যিনি ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেননি, যাঁর চার-পাঁচটা ভাষার উপর দখল ছিল না, যিনি একাধিক ক্ষেত্রে কৃতিত্ব দেখাননি।”
তিনি আরও বলেছেন, ‘‘কিন্তু তাঁদের যা সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য তা এই যে, তাঁদের প্রায় সকলেই সমসাময়িক জীবনস্রোতের গভীরে, ব্যবহারিক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে তাঁদের জীবন ও কার্যকলাপ চালিয়ে গিয়েছেন। তাঁরা পক্ষ অবলম্বন করেছেন, লড়াইয়ে যোগ দিয়েছেন – কেউ বত্তৃতা ও লেখার দ্বারা, কেউ তরবারি হাতে, অনেকেই দু’ভাবেই। এ থেকেই এসেছে তাঁদের চরিত্রের পরিপূর্ণতা ও শক্তিমত্তা, যা তাঁদের সম্পূর্ণ মানুষ করে তুলেছে।”
বিজ্ঞানকে ধর্ম ও চার্চ থেকে মুক্ত করা এবং সেই সময়ে তার অবিশ্বাস্য অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন– ‘‘ধর্মতত্ত্বের হাত থেকে প্রকৃতিবিজ্ঞানের মুক্তিসাধন সেই সময় থেকেই শুরু হয়, যদিও বিশেষ বিশেষ পারস্পরিক দাবিতে তর্কাতর্কি করে জয়লাভ আমাদের সময়কাল পর্যন্ত টেনে আনা হয়েছে এবং কারও কারও মনে এখনও সে সবের নিষ্পত্তি হয়নি।”
‘‘গতির ধবংস নেই– এই নীতিটি আধুনিক প্রকৃতি বিজ্ঞানকে নিতে হয়েছে দর্শন থেকে, এই নীতিকে বাদ দিলে প্রকৃতি বিজ্ঞানের অস্তিত্বই আর থাকে না। কিন্তু বস্তুর গতি শুধুমাত্র স্থূল যান্ত্রিক গতিই নয়, শুধুমাত্র স্থান পরিবর্তনের গতিই নয়; উত্তাপ, আলো, বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক শক্তি, রাসায়নিক সংযোজন ও বিয়োজন, জীবন ও সবশেষে চেতনা– এ সবই বস্তুর গতি।”
‘‘গতির অবিনশ্বরতাকে শুধুমাত্র পরিমাণগতভাবে নয়, গুণগতভাবেও বুঝতে হবে। বস্তুর নিছক যান্ত্রিক স্থান পরিবর্তনের মধ্যে, অনুকূল অবস্থা পেলে বাস্তবিক পক্ষেই থাকে তাপ, বিদ্যুৎ, রাসায়নিক ক্রিয়া ও জীবনে রূপান্তরিত হবার সম্ভাবনা…।” আদি-অন্তহীন অসীম বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং যা তৎকালীন দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের প্রস্তাবিত অবিভাজ্য পরমাণু দ্বারা গঠিত নয়, সেই প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন– ‘‘বিশ্বব্রহ্মাণ্ড স্থান ও কালের নিরিখে অসীম। এটা নিরবচ্ছিন্ন গতি ও পরিবর্তনের প্রক্রিয়ায় থাকে। … বস্তু ও গতি ধ্বংস করা যায় না, …।” সেই সময়, বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত করেছিলেন যে, পরমাণু হচ্ছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ক্ষুদ্রতম কণা এবং তা খণ্ডন করে এঙ্গেলস নিরীক্ষণ করলেন, ‘‘পরমাণুকে কোনওভাবেই সরল বা সাধারণভাবে পদার্থের জানা ক্ষুদ্রতম কণা মনে করা যায় না।” পরবর্তীকালে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করলেন, পরমাণু বিভাজ্য যা এঙ্গেলসের নিরীক্ষণকেই সঠিক প্রমাণ করেছে।
বানর থেকে মানুষে উত্তরণে শ্রমের ভূমিকা
এই প্রজ্ঞাদীপ্ত লেখাটিতে এঙ্গেলস দেখিয়েছেন, কত শত সহস্র বছর আগে খুবই উন্নত একটি মানবাকৃতির বানর প্রজাতি, যারা গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের কোথাও বসবাস করত, বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় তারা মানুষে রূপান্তরিত হল। তিনি ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছেন, কীভাবে শ্রমের ভূমিকা এখানে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। এঙ্গেলসের মূল্যবান এই অবদান থেকে আমরা আরও বহু কিছুই জানতে পারি। আমি এখন তাঁর এই লেখা থেকে কিছু অংশ পড়ে শোনাব। ‘‘সমস্ত সম্পদের উৎস হল শ্রম – অর্থতত্ত্ববিদরা এই কথাই বলেন। যে প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া উপাদানকে শ্রম রূপান্তরিত করে সম্পদে, সেই প্রকৃতির পরেই শ্রমের স্থান। কিন্তু শুধু এই নয়, এর চাইতেও তার গুরুত্ব অপরিসীমভাবেই বেশি। সমস্ত মানবিক অস্তিত্বের প্রাথমিক মূলগত শর্ত হল শ্রম এবং তা এতটা পরিমাণে যে একদিক থেকে বলতে হবে, স্বয়ং মানুষই হল শ্রমের সৃষ্টি।”
‘‘অনুমান করা যায়, তাদের যে জীবনধারায় গাছে ওঠা-নামার ব্যাপারে হাতের কাজ ছিল পা থেকে ভিন্ন, তারই প্রত্যক্ষ পরিণাম হিসাবে ভূমির উপর দিয়ে হাঁটাচলার সময় তারা হাতের সাহায্য নেবার অভ্যাস থেকে ক্রমে নিজেদের মুক্ত করতে এবং সোজা হয়ে দাঁড়াবার ভঙ্গি আয়ত্ত করতে শুরু করল। এই হল বানর থেকে মানুষে উত্তরণে চূড়ান্ত পদক্ষেপ।”
‘‘কিন্তু তারই মধ্যে চূড়ান্ত পদক্ষেপটা নেওয়া হয়ে গিয়েছিলঃ হাত হল মুক্ত, তখন থেকে তা অর্জন করে যেতে পারল ক্রমেই বেশি বেশি নৈপুণ্য ও কৌশল এবং এইভাবে অর্জিত উন্নততর নমনীয়তা সঞ্চারিত হল বংশপরম্পরায়, বৃদ্ধি পেল পুরুষানুক্রমে।
তাই হাত শুধু শ্রমের অঙ্গ নয়, শ্রমের সৃষ্টিও। কেবলমাত্র শ্রম, নিত্যনতুন কর্মপ্রক্রিয়ার সঙ্গে অভিযোজন, এইভাবে অর্জিত পেশী, রগ এবং দীর্ঘতর কালক্রমে হাড়েরও বিশেষ বিকাশের উত্তরাধিকার, এবং জটিল থেকে জটিলতর নতুন নতুন কর্মপ্রক্রিয়ায় উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এই নৈপুণ্য প্রয়োগের ফলেই মানুষের হাত হয়েছে এত উচ্চ মাত্রায় নিখুঁত যে, সে যেন মায়াজালে সৃষ্টি করতে পেরেছে রাফায়েলের চিত্রকলা, তুরভাল্দসনের ভাস্কর্য আর পাগানিনির সঙ্গীত।
কিন্তু হাত শুধু নিজে নিজেই বেঁচে থাকেনি। অত্যন্ত জটিল এক সমগ্র জীবনসত্তার একটি মাত্র অঙ্গ হল এই হাত। যা কিছু হাতের উপকারে এসেছে তা, সেই হাত যার সেবা করে, সেই সমগ্র দেহেরও উপকারে এসেছে। আর তা হয়েছে দু’ভাবে।
প্রথমত ডারউইন কথিত বিকাশের পরস্পর-সম্পর্কের নিয়ম অনুযায়ী। এই নিয়ম অনুসারে জীবদেহের পৃথক পৃথক অংশের বিশেষ বিশেষ আকৃতির সঙ্গে সর্বদাই অন্যান্য অংশের কতকগুলি আকৃতির নিবিড় সম্পর্ক থাকে– বাহ্যত এই দুইয়ের মধ্যে কোনও যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও।” ‘‘হাতের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে, শ্রমের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির উপরে যে প্রভুত্ব শুরু হল, তা প্রতিটি নতুন অগ্রগতিতেই মানুষের দিগন্ত রেখাকে প্রসারিত করে দিল। প্রাকৃতিক বস্তুপুঞ্জের নতুন নতুন অজ্ঞাতপূর্ব গুণাগুণ মানুষ ক্রমাগত আবিষ্কার করে চলল। অপর পক্ষে, পারস্পরিক সহায়তা ও যৌথ কর্মোদ্যমের দৃষ্টান্ত ক্রমাগত বাড়িয়ে, এবং প্রত্যেকের কাছে এই যৌথ কর্মোদ্যমের সুবিধা তুলে ধরে শ্রমের বিকাশ অনিবার্য ভাবেই সমাজের সদস্যদের নিবিড়তর বন্ধনে আবদ্ধ করতে সাহায্য করল। সংক্ষেপে বলা যায় যে, গড়ে উঠবার পথে মানুষ এমন একটি পর্যায়ে এল, যখন পরস্পরকে কিছু বলার প্রয়োজন তাদের হল। এই প্রেরণা তার নিজস্ব অঙ্গ সৃষ্টি করল, স্বরের দোলন দ্বারা ক্রমাগত উন্নততর স্বরগ্রাম সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বানরের অপরিণত কণ্ঠনালী ধীর অথচ স্থির গতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। ক্রমে ক্রমে মুখের প্রত্যঙ্গগুলি একটার পর একটা স্পষ্ট ধবনি উচ্চারণ করতে শিখল।”
এই সমস্ত আলোচনার পর, তিনি দেখালেন কীভাবে এপ-মানুষের মস্তিষ্ক আরও উন্নত, আরও নিখুঁত, আরও বৃহৎ হয়ে মানুষের মস্তিষ্কে উন্নীত হল। ‘‘প্রথমত শ্রম, তারপর ও তার সঙ্গে বাকশক্তি – এই দু’টি হল প্রধানতম প্রেরণা যার প্রভাবে বানরের মস্তিষ্ক ক্রমে ক্রমে মানুষের মস্তিষ্কে রূপান্তরিত হল। সমস্ত রকমের সাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও মানুষের এ মস্তিষ্ক অনেক বড়, অনেক নিখুঁত। মস্তিষ্কের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে চলল তার সব চাইতে নিকট হাতিয়ার– সংবেদনশীল ইন্দ্রিয়গুলির বিকাশ। কথা বলতে পারার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে যেমন অনিবার্যভাবেই শ্রবণেন্দ্রিয়ের উন্নতি হয়, তেমনি মস্তিষ্কের সামগ্রিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে চলে সমস্ত ইন্দ্রিয়ের উন্নতি।”
তারপর এঙ্গেলস দেখালেন, কখন এবং কেন কৃষিজমির সর্বজনীন মালিকানা ব্যক্তি-মালিকানার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হল, যার ফলে সমাজে শ্রেণি বিভাজন সৃষ্টি হল। ‘‘জমির উপর আদিম গোষ্ঠী-মালিকানার সহগামী ছিল একদিকে মানুষের এমন স্তরের বিকাশ যখন হাতের কাছে আশু যা পাওয়া যায় তার মধ্যেই মানুষের পরিধি সীমাবদ্ধ থাকছে এবং অন্যদিকে তার পূর্বশর্ত ছিল লভ্য জমির কিছু উদ্বৃত্তি যাতে এই প্রাথমিক ধরনের অর্থনীতির কোনও সম্ভাব্য কুফল সংশোধনের মতো খানিকটা জায়গা থাকছে।
এই উদ্বৃত্ত জমি যখন ফুরিয়ে গেল তখন গোষ্ঠী-মালিকানারও অবনতি ঘটল। পরের উন্নততর সমস্ত উৎপাদন পদ্ধতি কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণির সৃষ্টি করে শাসক এবং উৎপীড়িত শ্রেণির মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত করল।” (চলবে)