‘‘প্রথম দিকের সমাজতন্ত্রের সাথে ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণার ততটাই অসঙ্গতি ছিল, যতটা অসঙ্গতি ছিল প্রকৃতি সম্পর্কে ফরাসি বস্তুবাদীদের ধারণার সাথে আধুনিক প্রকৃতিবিজ্ঞানের। প্রথম যুগের সমাজতন্ত্র অবশ্যই প্রচলিত পুঁজিবাদী উৎপাদন-পদ্ধতিকে ও তার ফলশ্রুতিগুলোকে সমালোচনা করেছিল। কিন্তু তা এই উৎপাদন-পদ্ধতিকে ব্যাখ্যা করতে পারেনি এবং তাই একে করায়ত্ত করতে পারেনি। খুব খারাপ বলে চিহ্নিত করে এটাকে সে শুধুমাত্র মনে মনে খারিজ করে দিতে পেরেছিল, কিন্তু একে সত্যিকারের অর্থে খারিজ করার জন্য প্রয়োজন ছিল। একদিকে সমস্ত ঐতিহাসিক আন্তঃসম্পর্ক সমেত পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থাকে উপস্থিত করা, একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক পর্বে এর অনিবার্যতা এবং ফলত এর অবলুপ্তির অনিবার্যতাও তুলে ধরা; অন্য দিকে এর মূল চরিত্র উদঘাটন করা, যা তখনও লুকানো ছিল, কেন না এর সমালোচকরা এতদিন সামগ্রিক প্রক্রিয়াটিকে না ধরে শুধুমাত্র এর কুফলগুলিকেই আক্রমণ করে আসছিলেন। উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব আবিষ্কৃত হওয়ার সাথে সাথে এই কাজ নিষ্পন্ন হয়। দেখানো হল, পুঁজিবাদী উৎপাদন পদ্ধতি এবং এই পদ্ধতিতে নিষ্পেষিত শ্রমিকদের শোষণের মূল ভিত্তি হল দাম না দেওয়া শ্রমের আত্মসাৎ; পণ্য হিসেবে একজন শ্রমিকের শ্রমশক্তির বাজারে যা দাম হওয়া উচিত, একজন পুঁজিবাদী যদি বাজার থেকে সেই পুরো দাম দিয়েই শ্রমিকদের শ্রমশক্তি কিনে নেয়, তা হলেও সে যে-দাম দিয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্য সে শ্রমিকের কাজ থেকে আদায় করে নেয়; শেষ বিচারে উদ্বৃত্ত মূল্য হচ্ছে সেইসব মূল্যের যোগফল যা থেকে মালিকশ্রেণিগুলির হাতে পুঞ্জীভূত হচ্ছে নিরন্তর ক্রমবর্ধমান পুঁজির পাহাড়। এইভাবে পুঁজিবাদী উৎপাদন এবং পুঁজির উৎপাদনের পদ্ধতি উভয়েরই ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া গেল। ইতিহাসের বস্তুবাদী ধারণা এবং উদ্বৃত্ত মূল্যের মাধ্যমে পুঁজিবাদী উৎপাদনের রহস্য উদঘাটন এই দুই বিরাট আবিষ্কারের জন্য আমরা মার্ক্সের কাছে ঋণী। এই আবিষ্কারগুলির সাথে সাথে সমাজতন্ত্র একটি বিজ্ঞানে পরিণত হল। এখন কাজ হল এর সমস্ত খুঁটিনাটি এবং আন্তঃসম্পর্কগুলি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা।”
—‘অ্যান্টি ডুরিং’, ফ্রেডরিক এঙ্গেলস