এটা ঘরে ঘরে পৌঁছানো দরকার
কবি শুভ দাশগুপ্তকে তাঁর বিশেষ পরিচিত এক চিকিৎসক পড়তে দিয়েছিলেন এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষের বই– ‘লোকসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার আগে বিচার করুন’। তিনি বইটি পড়ে ওই চিকিৎসককে জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে বইটি পড়লাম। খুব ভাল। এটা ঘরে ঘরে পৌঁছানো দরকার। তাঁর এই বক্তব্য গণদাবীতে ছাপা যেতে পারে কি না জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, অবশ্যই। তারপর বলেন, দলীয় রাজনীতি আমি করি না, কিন্তু ঠিক কে ঠিক বলতে ভয় পাই না।
এ বারের ভোটটা তোমাদেরই দেব
কলকাতা দক্ষিণ লোকসভার চেতলা এলাকায় প্রচারের সময় এক আবাসনের ফ্ল্যাটে কলিং বেলের আওয়াজে বেরিয়ে এলেন এক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। কর্মীদের বক্তব্য শোনার পর বললেন, দিন দুয়েক আগে আমি অপাত্রে দান করেছি। সিপিএম এসে টাকা নিয়ে গেছে। তারপর নানা বিষয়ে আলোচনা করার পর নির্বাচন সংক্রান্ত বইটি নিলেন ও চাঁদা দিয়ে বললেন, এ বারের ভোটটা তোমাদেরই দেব।
তোমরা ভোট পাবে
মানিকতলা বাজারের এক দোকানদার খুশি খুশি মুখে ডেকে বললেন, এই প্রথম দমদমে তাঁর পাড়ার রাস্তায় এসইউসিআই দেওয়াল লিখেছে। নিজে এক সময় বাম রাজনীতির সংস্পর্শে ছিলেন। কয়েক মাস আগেও কুট তর্ক করা খানিকটা স্বভাবে ছিল। এখন যেন উল্টো। পরামর্শ দিয়ে বলেন ‘ভোটটা ভাল করে করো। অন্যদের সাথে টাকায়, জৌলুসে পারবে না। বেশি করে পোস্টার ভেতরে ভেতরে লাগাও। তোমরা ভোট পাবে।’
এই পার্টির জন্য দরজা খোলা
টালিগঞ্জের এক আবাসনে প্রচারে গেলে গেটম্যান বাধা দিয়ে বলেন, কোনও রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর এখানে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা আছে। বাধাকে খানিকটা এড়িয়ে কর্মীরা প্রচার করতে থাকেন। একটি ফ্ল্যাটে ঢুকতে গেলে গেটম্যান আবার একই সমস্যা করলে ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ওঁকে বলেন, এই পার্টির জন্য নিষেধাজ্ঞা নয়। গেটম্যান সাময়িক থেমে যান। কর্মীরা অন্য ফ্ল্যাটগুলিতে গেলে এ বার তিনি দলবল নিয়ে এসে দেখেন একটি ফ্ল্যাটের মালিক দলের কর্মীদের ভেতরে ডেকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন আর বলছেন, এই দলকে অনেক দিন ধরে দেখছেন। রাজনীতি বলতে সাধারণ ভাবে যা বোঝায় এরা তেমন নয়। এরা সবার ভালর কথা বলে ও তার জন্য লড়ে। এগুলো হলে সবার মঙ্গল। দলটা যেন আরও বাড়ে। তিনি হতচকিত গেটম্যানদেরও মিষ্টিমুখ করান। বাকি সময়টা গেটম্যান সঙ্গে থেকে বাকি বাড়িগুলোয় নিয়ে যান। খানিকটা মাফ চাওয়ার সুরে বলেন, চাকরি সুত্রে হুকুম তামিল তাঁর কাজ। কিন্তু মেদিনীপুরে তাঁর বাড়ির কাছে এসইউসিআই দলের অনেক লড়াই, প্রতিবাদ, ভাল কাজ দেখেছেন। তাঁর সামান্য মাইনের চাকরির উপর নির্ভর করে আছে তাঁর গ্রামের পরিবার। বললেন, আপনারাই সত্যিকারের ভরসা।
পরে এসে পড়া ধরবেন কিন্তু
প্রচারের সময় বিবেকানন্দ রোডে চালতাবাগানের এক পোড়ো বাড়ির দোতলায় এক মহিলার সাথে তর্কবিতর্ক চলে বেশ কিছুটা। মোটের উপর তিনি হতাশ। শেষে নির্বাচন প্রসঙ্গে কমরেড প্রভাস ঘোষের বইটি নিলেন। পরে কর্মীরা দেখা করতে গেলে তিনি আগের দিনের ঝাঁঝালো কথার জন্য ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমি প্রথমে ভেবেছিলাম আপনারা সিপিএম। পরে বুঝতে পারলাম। বলেন, পড়ার অভ্যেস চলে গেছে। তবু যে বইটি দিয়েছেন পড়ব। পরে এসে পড়া ধরবেন কিন্তু।
দিদি তো হতে পারি
প্রচার করতে করতে কয়েক জন কর্মী দুপুরে খাওয়ার জন্য মানিকতলার গড়পারে এক দিদির বাড়িতে বলে গিয়েছেন। দু-চার জন পেয়িং গেস্টকে রান্না করে খাবার পাঠিয়ে তাঁর দিন চলে। দুপুরে দলের কর্মীদের যত্ন করে খাওয়াতে বসে বললেন, ছোটবেলায় শুনেছি স্বদেশিরা এমনি করে কত দিদির ঘরে ঘরে খেয়ে লড়েছেন। তবে দেশ স্বাধীন হয়েছে। আজ কী দশা হয়েছে দেশটার। তোমাদের কী বা বয়স, তবু লড়ছ। আর তেমন কিছু করতে না পারি, দিদি তো হতে পারি। কখনও দরকার পড়লে একটা ফোন করে সোজা চলে এসো।
মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই বলেই ঘনিষ্ঠ
দীর্ঘদিন জার্মানিতে কর্মরত বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এক ইঞ্জিনিয়ার থাকেন যাদবপুর এলাকায়। পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে মর্নিং ওয়াক গ্রুপের বন্ধুরা একদিন তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ইদানিং তিনি এসইউসিআইয়ের প্রতি অনুরক্ত কেন। উত্তরে তিনি বলেন, তিন চার বছর ধরে এই দলের কর্মীদের কাজ খুঁটিয়ে দেখছি। দলটাকে যতটা সম্ভব জেনে, এদের কাগজপত্র পড়ে মনে হয়েছে, এরা কিছু পাওয়ার লোভে বা ধান্দার জন্য দল করে না। এরা শিক্ষিত, রুচিশীল, ডেডিকেটেড। আমি নিজেও পাইয়ে-দেওয়া রাজনীতির বিরোধী। বাকি জীবনটা আমি মর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চাই বলেই এই দলের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েছি।
তিনি উপস্থিত অন্যদের এই দলটিকে বোঝার আবেদন করেন ও এই দলের প্রার্থীদের ভোট দিতে বলেন।