সঞ্জয় সাঠে, নাসিকের পেঁয়াজ চাষি, যাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে কৃষিতে ‘আচ্ছে দিনের’ মুখ বলে তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, সেই সঞ্জয় ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করে পাওয়া ১০৬৪ টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীরই কাছে৷ ‘আচ্ছে দিনের’ ভারতে ওই ক’টা টাকায় তো আর পরিবারের পেটে ভাত জুটবে না, তাই আচ্ছে দিনের ফেরিওয়ালাই বরং নিন ওটা৷
দেশের এমন অনেক চাষিই নানা ভাবে তাঁদের ফসলের দাম না পাওয়ার ক্ষোভ–দুঃখ জানিয়ে চলেছেন৷ একটাই প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী নিজের ‘মন কি বাত’ বলতে ব্যস্ত না থেকে চাষিদের ‘দুখ কি বাত’ একটু শুনুন! প্রধানমন্ত্রী কর্ণপাত করেননি৷
পাঁচ রাজ্যে ভোট |
মানুষের ঘরে ঘরে অভাব হাঁ করে তেড়ে আসছে৷ যুবকের চাকরি নেই, চাষির ফসলের দাম নেই, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা নেই, রোগীর চিকিৎসা নেই প্রধানমন্ত্রীর বাণী– সব ভুলে যাও, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মূর্তি আর রাম মন্দির করে দিচ্ছি৷ মানুষ চাইল রুটি, কাপড় আর বাসস্থান, চাইল কাজ, শিক্ষা, চিকিৎসা৷ প্রধানমন্ত্রী দিলেন ‘গো–রক্ষার রাজনীতি’৷ তাই আজ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে বিজেপির পরাজয়ে সাধারণ মানুষের উচ্ছ্বাস ফেটে পড়ছে৷ মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থানে বিজেপি মসনদ খুইয়েছে৷ তেলেঙ্গানায় প্রায় মুছে গিয়েছে৷ মিজোরামে কংগ্রেস বিরোধী জোটে মদত দিলেও বিজেপির নিজের শক্তি বিশেষ কিছু নেই৷ ২০১৯–এর লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল দেখিয়ে দিয়েছে হিন্দি বলয়তেই সবচেয়ে বেশি জনরোষ আছড়ে পড়েছে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে৷ ‘মোদি ম্যাজিক’ কিংবা রাম মন্দিরের হুঙ্কারকে ছাপিয়ে উঠেছে ধর্ম–বর্ণ–সম্প্রদায় নির্বিশেষে খেটে–খাওয়া মানুষের জীবন–জীবিকার দাবি৷
মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে ছ’জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল বিজেপি সরকার৷ তাতেও কৃষক আন্দোলন থামেনি বরং ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রান্তে প্রান্তে৷ রাজ্যে রাজ্যে কৃষক বিরোধী এবং করপোরেট পুঁজির স্বার্থবাহী কৃষিনীতির বিরুদ্ধে বারবার আন্দোলন ফেটে পড়েছে৷ দিল্লিতেও সেই আন্দোলনের ঢেউ পৌঁছেছে৷ কৃষকরা তাঁদের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন ভোটের মেশিনে৷ শহরের মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত মানুষ থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ী যারা নোট বাতিল এবং জিএসটি–র ধাক্কায় একেবারে দুর্দশার শেষ সীমায় চলে গেছেন তাঁরাও চেয়েছেন বিজেপিকে শিক্ষা দিতে৷ সব মিলিয়ে এই নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছে বিজেপি৷
২০১৪–র নির্বাচনের আগে থেকেই মানুষ শুনেছে মোদি ম্যাজিকের প্রচার৷ কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ তখন সারা দেশ জুড়ে ফেটে পড়ছে৷ সেই ক্ষোভকে আন্দোলনের পথ থেকে সরিয়ে ভোটের বাক্সে চালান করে নির্বিষ করে দিতে না পারলে বুর্জোয়া শ্রেণির বিপদ৷ তাই তাদের দরকার হয়েছিল ‘সর্বরোগহর’ দাওয়াইয়ের মতো সব সমস্যার সমাধান করার ম্যাজিক দেখানো এক অবতারের আমদানি করা৷ যাকে দেখিয়ে আবার কিছুদিন মানুষকে শান্ত রাখা যায়৷ তাই গোটা করপোরেট মহল সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নরেন্দ্র মোদিকে অবতার বানানোর কাজে৷ পরিকল্পিত সেই প্রচারের তোড় এমন ছিল যে, বহু মানুষ যাঁরা গভীরে গিয়ে রাজনীতির চরিত্র বিচারে আগ্রহী নন, বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন ‘আচ্ছে দিন’ এল বলে৷ তিনি কালো টাকা উদ্ধার করে প্রত্যেক দেশবাসীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা ভরে দেবেন, বছরে দু’কোটি বেকারের চাকরি দেবেন, চাষির আয় দ্বিগুণ করে দেবেন, ইত্যাদি কত কী বলেছিলেন, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও৷ এমন কত ম্যাজিকের গল্প যে ছড়ানো হয়েছে তার সীমা নেই৷ গুজরাট দাঙ্গার প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদির মুখে সেদিন যেন উন্নয়ন ছাড়া কথাই ছিল না৷ বাংলার নামকরা দৈনিক লিখেই ফেলেছিল, ‘গুজরাটি অস্মিতা আর হিন্দুত্বের পথ ছাড়িয়া উন্নয়নের কাণ্ডারি আজ নরেন্দ্র মোদি’৷ একচেটিয়া পুঁজি মালিকরা প্রায় সকলেই সেদিন নরেন্দ্র মোদিকে জেতাতে অকাতরে খরচ করেছেন৷ এই বিপুল মানি পাওয়ারের জোরেই প্রচার–পেশিশক্তি–প্রশাসনিক সমস্ত আনুকূল্য কাজ করেছিল বিজেপিকে জেতাতে৷ এরপর যখন ধীরে ধীরে মানুষের মোহ কাটতে শুরু করেছে–ম্যাজিক আর তেমন কাজ করছে না, সেই সময়েও অর্থনীতির সমস্ত নিয়ম ভেঙে রাতারাতি নোট বাতিল করার মধ্যেই দেশের কল্যাণ, এ হেন ডাহা মিথ্যাকেও বহু মানুষের কাছে সাময়িক ভাবে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য করপোরেট পুঁজি মালিকদের বড় অংশ মোদি সাহেবের পাশে দাঁড়িয়েছে৷
দিন যত গড়িয়েছে, দেশের মানুষ একটু একটু করে বুঝতে শুরু করেছে এসবই গালগল্প মাত্র৷ চাষির আয় দ্বিগুণ হওয়া তো অনেক দূরের কথা, চাষের খরচটুকু তোলার মতো ফসলের ন্যূনতম মূল্যের ব্যবস্থা সরকার করেনি৷ ঋণের ফাঁদে হাঁসফাঁস করা কৃষক পরিবারের আর্তনাদে দেশের বাতাস ভারী হয়ে গেছে৷ প্রতিদিন আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যা বেড়ে চলেছে৷ প্রধানমন্ত্রী বেটি বাঁচাবেন কি, তাঁর শাসনকালে নারী নির্যাতন সর্বকালীন রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে দু’কোটির জায়গায় বছরে দু’লক্ষ বেকারেরও কাজ হয়নি৷ মোদি শাসনে যতজন কাজ পেয়েছেন, কাজ হারিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি৷ নোট বাতিলের ধাক্কায় সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ীরা যখন কপর্দকশূন্য হওয়ার পথে, বিজেপি তথা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদধন্য মেহুল চোকসি, নীরব মোদি প্রমুখ বৃহৎ ব্যবসায়ীরা ভারতীয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা মেরে দিয়ে বহাল তবিয়তে বিদেশের নাগরিকত্ব নিয়েছে বিজেপি সরকারের মদতেই৷ বিজেপির আর এক আশীর্বাদধন্য সাংসদ বিজয় মাল্যও একই পথের পথিক হয়েছেন৷ ‘দেশের চৌকিদার’ বলে যে প্রধানমন্ত্রী নিজের পিঠ চাপড়াতেন, তাঁর দল এবং সরকারের মদতেই শিল্পপতিরা ঋণের নামে কার্যত ব্যাঙ্ক লুঠ চালিয়ে যাচ্ছে৷ রাফাল কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের পিঠ বাঁচাতে সুপ্রিম কোর্টকে পর্যন্ত ভুল তথ্য দিয়েছে বিজেপি সরকার৷ রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে সিবিআই কোনও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার সরকার রক্ষা করেনি, সর্বত্রই নগ্ণ দলবাজি আর গৈরিকীকরণের নজির গড়েছে৷
সব দেখে দেশের মানুষ বুঝতে শুরু করেছেন, বিজেপির সুচতুর কূটকৌশলের শিকার তাঁরা৷ ২০১৪–র কংগ্রেস বিরোধী জনরোষকে পুঁজি করে সংকট মোচনের মসীহা সাজা নরেন্দ্র মোদি যে কংগ্রেসের থেকে আলাদা কোনও আর্থিক নীতি নিয়ে চলেননি তা অনেকটাই ধরা পড়ে যায় মানুষের চোখে৷ উন্নয়নের ঝুলির শতচ্ছিন্ন চেহারাটা বে–আব্রু হয়ে যাওয়ায় বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদি বার করেছেন তাঁদের ধর্মের ভেক, আস্তিনে লুকানো উগ্র হিন্দুত্বের তাস৷ বিজেপির মদতে শুরু হয়েছে গো–রক্ষার নামে একের পর এক মানুষকে হত্যা৷ উগ্র জাতীয়তাবাদের ধুয়ো তুলে মানুষের বিচারবুদ্ধি গুলিয়ে দেওয়ার জন্য নানা কার্যসূচি চলেছে৷ চলেছে বিজেপি এবং তাদের আদর্শগত চালক আরএসএস বিরোধী যুক্তিবাদী লেখক, সাংবাদিকদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে একটা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা৷ সব অস্ত্র প্রয়োগ করেও যখন মানুষের মন পাচ্ছে না বিজেপি সেই সময় তারা তূণ থেকে বার করেছে তাদের রামমন্দির অস্ত্র৷ ধ্বংস করা বাবরি মসজিদের স্থানেই রামমন্দির চাই, এই দাবিতে আবার লম্ফঝম্প শুরু করেছে বিজেপি–আরএসএস৷ কিন্তু পেট বড় বালাই৷ ধর্মপ্রাণ মানুষ, যাঁদের একটা বড় অংশকে বিজেপি ১৯৯২ সাল কিংবা ২০১৪ সালে মন্দিরের নামে পাগল করে তুলতে পেরেছিল তাঁদের অধিকাংশই এবারে মন্দিরের হুঙ্কার শুনে বলেছেন, আগে কাজ, পেটে ভাত–রুটি তারপর ভাবব মন্দিরের কথা৷ উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদ শহরের নাম পাল্টেযোধ্যা করেও বিজেপি উন্মাদনার পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ বিজেপি প্রস্তাবিত রাম মন্দিরের অদূরে দাঁড়িয়েই সাংবাদিকরা শুনেছেন, ‘মন্দির এক ভোট কা মুদ্দা হ্যায়৷’ অর্থাৎ ভোট এলেই মন্দিরের কথা মনে পড়ে বিজেপির৷ রাজ্যে রাজ্যে রথযাত্রা, রামযাত্রা এমন নানা সার্কাস করেও বিজেপি নেতারা মানুষের এই ক্ষোভের ঝড়কে রুখতে পারেননি৷
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি বিরোধী বিক্ষোভের সুবিধা পেয়েছে কংগ্রেস৷ কিন্তু কংগ্রেস জিতেছে মানেই কি মানুষ তাকে চেয়েছে বলতে হবে? তিন রাজ্যে কংগ্রেসের জয়ের প্রধান কারণ বিজেপি বিরোধী বিক্ষুব্ধ মানুষের সামনে প্রকৃত বিকল্পের অভাব৷ বিজেপি যে অস্ত্র ব্যবহার করতে চেয়েছিল এবারের ভোটে সেই অস্ত্রই কংগ্রেস ব্যবহার করেছে বিজেপির বিরুদ্ধে৷ তাই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে তাদের ছোট–বড় নেতারা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ইত্যাদি নিয়ে শব্দ খরচ করেছেন অতি সামান্য৷ রাহুল গান্ধী যেন মোদির সাথে মন্দিরে মন্দিরে ছুটে বেড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন৷ কে বড় হিন্দু এই প্রতিযোগিতায় বারবার নিজের পৈতে দেখিয়ে হিন্দুত্বের আবেগে সুড়সুড়ি দিয়েছেন রাহুল গান্ধী৷ বিজেপির সাথে কংগ্রেসের হিন্দুত্বের পাল্লা দেওয়ার এই রাজনীতির জন্যই এবারের ভোটে মানুষের সমস্যা ছেড়ে হনুমানের জাত বিচার থেকে নেতাদের গোত্র বিচারই হয়ে উঠল যেন প্রধান ইস্যু বিজেপির গো–রাজনীতির প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেস গোশালা করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইস্তাহারে৷ ফলে কংগ্রেসের জয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জয় বলে দেখানো চলে না৷ তেমনই বলা চলে না বিজেপির জনবিরোধী আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে যে রায় মানুষ দিল, তা শিরোধার্য করে কংগ্রেস যথার্থ জনমুখী নীতি আনবে৷
আজকের দিনে বুর্জোয়া গণতন্ত্রে নির্বাচন মানেই বুর্জোয়াদের পছন্দমতো নির্বাচন৷ বস্তুত একচেটিয়া মালিকদের ইচ্ছাই নানা ভাবে জনগণের ইচ্ছা বলে সামনে আনা হয়৷ তাদের টাকার জোরই প্রচার, প্রশাসনিক আনুকূল্য, পেশি–শক্তি, ভোট কেনা, রিগিং মেশিনারি, এই সব কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করে৷ এ দেশের একচেটিয়া মালিকরা আগের মতো ঐক্যবদ্ধভাবে যে বিজেপির পাশে থাকছে না তার ইঙ্গিত নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল৷ পুঁজিবাদী বাজারের সংকট দিনে দিনে এতটাই তীব্র হয়েছে যে, সংকুচিত বাজারের ভাগ পেতে একচেটিয়া পুঁজির কাড়াকাড়ি মারাত্মক আকার নিয়েছে৷ কোনও ক্ষেত্রে একচুল জমিও পরস্পরকে ছাড়তে তারা রাজি নয়৷ নিজেদের এই লড়াইতে ভারতীয় ধনকুবেরদের একটা শক্তিশালী অংশ বিজেপির পাশেই দাঁড়ালেও আর এক অংশ প্রকাশ্যেই কংগ্রেসকে মদত দিয়েছে৷ একচেটিয়া পুঁজি মালিকদের এই ভূমিকা কংগ্রেসকে সুবিধা করে দিলেও জনস্বার্থের সাথে তার সম্পর্ক কী?
যখন দেশের সাধারণ মানুষ–শ্রমিক–কৃষকের ক্ষোভ ফেটে পড়তে চাইছে৷ বহু স্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ শুধু রাস্তায় নামছে তাই নয়, পুলিশের গুলির সামনে পর্যন্ত দাঁড়াচ্ছে৷ এই নির্বাচনে দেখা গেল বিজেপির গো–রাজনীতি–রাম মন্দির হুঙ্কার পর্যন্ত পেটের ভাতের দাবি, জীবন–জীবিকার দাবির কাছে ম্লান হয়ে গেছে৷ এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, একচেটিয়া মালিকতোষণের রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রকৃত বিকল্প কী হতে পারে? দেশজোড়া বাম–গণতান্ত্রিক আন্দোলনই নয় কি?
কিন্তু সেই বিকল্প গড়ে তোলার কাজটি নিছক কিছু ভোটের হিসাবের বিষয় নয়৷ কয়েকটা এমএলএ–এমপি লাভের কৌশল চরিতার্থ করতে যে কোনও জোট করা কিংবা, কংগ্রেসের হাত শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে এই বিকল্প গড়ে উঠতে পারে না৷ বিজেপির বিকল্প হিসাবে কংগ্রেসকে তুলে ধরাটা বুর্জোয়া প্রভুদের কৌশল৷ শাসক শ্রেণির তাঁবেদার একটা দল জনপ্রিয়তা হারালে গণতন্ত্রের নামে বুর্জোয়া শ্রেণি তাদের সেবাদাস আর একটি দলকে ক্ষমতায় আনে৷ দ্বিদলীয় বুর্জোয়া রাজনীতির এই চক্করে পড়ে তাঁতের মাকুর মতো মানুষ একবার এদিক আর একবার ওদিকে যায়– ভাবে, এই শোষণ–যন্ত্রণার অবসান হবে৷ কিন্তু শোষণ আরও চেপে বসে৷ বিজেপি বিরোধী বিক্ষোভকে কংগ্রেসের দিকে নিয়ে যেতে বুর্জোয়া শাসকরা তাই প্রচারের আলো এখন কংগ্রেসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে৷ সত্যিকারের বামপন্থীরা সাধারণ মানুষকে সেই মায়াময় আলোতে মোহগ্রস্ত হতে দিতে পারে না৷
এই পরিস্থিতিতে শুধু ভোটে নয়, বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আদর্শগত ভাবে পরাজিত করতে হবে৷ তা করতে হলে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলাটাই রাস্তা৷ তাতে সামিল করতে হবে বাম–গণতান্ত্রিক মনোভাবাসম্পন্ন সকল মানুষকে৷ একচেটিয়া মালিকের দল কংগ্রেস কখনও এই আন্দোলনের শক্তি হতে পারে না৷ বিজেপি এবং কংগ্রেস এই দুই শক্তির বিরুদ্ধেই লড়তে হবে খেটে খাওয়া মানুষকে৷