মধ্যপ্রদেশে এস ইউ সি আই (সি)-র বর্ধিত রাজ্য কমিটির সদস্য এবং দেওয়াস জেলা সম্পাদক কমরেড হিমাংশু শ্রীবাস্তব ১৭ এপ্রিল রাত ৮টায় ইন্দোরে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর চিকিৎসা চলছিল ইন্দোরের এমওয়াই হাসপাতালে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৬ বছর।
গুনায় গভর্নমেন্ট পিজি কলেজে পড়ার সময়ে এআইডিএসও-র কর্মী হিসাবে কমরেড হিমাংশু মাক্সর্বাদ-লেনিনবাদ, কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি দল ও গণআন্দোলন গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
দলের বিস্তারের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে কমরেড হিমাংশু প্রথমে ইন্দোর ও পরে দেওয়াসে যান। দেওয়াসে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে তিনি অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি দেওয়াসের ছাত্র, যুব ও শ্রমিকদের মধ্যে পার্টি গঠনের ভিত্তি প্রস্তুত করেন। গোটা রাজ্যে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা নেন। গত বছরে কোভিড অতিমারি শুরু হওয়ার আগে সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী আন্দোলন যখন দেশজুড়ে তুঙ্গে উঠেছিল, সেই সময় দেওয়াসের পাশাপাশি রাতলাম, মন্দসৌর সহ অন্যান্য জেলায় কমরেড হিমাংশু আন্দোলনকে সঠিক পথে চালনার লক্ষ্যে জনগণের কাছে কমরেড শিবদাস ঘোষের বিপ্লবী শিক্ষা বহন করে নিয়ে গিয়েছিলেন।
শ্রমিক শ্রেণির প্রতি আনুগত্য ও সংগ্রামী মেজাজের জন্য কমরেড হিমাংশু বিশেষ করে দেওয়াসের শ্রমিকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। গত বছর লকডাউনে কারখানা-মালিকরা প্রাপ্য মজুরি না দিয়ে দরিদ্র শ্রমিকদের বঞ্চিত করার চেষ্টা করলে কমরেড হিমাংশু বিনা মূল্যে বহু শ্রমিককে আইনি পরামর্শ দিয়েছেন। এরপর, কেন্দ্রীয় সরকারের তিন কালা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চাষিরা আন্দোলন শুরু করলে কমরেড হিমাংশু শুধু দেওয়াসে নয়, সংলগ্ন জেলাগুলিতেও কৃষক আন্দোলন সংগঠিত করতে থাকেন। ১১ এপ্রিল দেওয়াসে কিসান মহাপঞ্চায়েত সফল করার উদ্দেশ্যে কমরেড হিমাংশু গ্রামে গ্রামে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছিলেন দিনের পর দিন। এই সময়েই তিনি কোভিডে আক্রান্ত হন। হাসপাতালে ৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর রোগের বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধে তিনি পরাজিত হন।
শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত যেভাবে হাসিমুখে কমরেড হিমাংশু সংগ্রাম করে গেলেন, তা আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাঁর মৃত্যুতে শুধু দলের নয়, শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলনেরও অপূরণীয় ক্ষতি হল। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মধ্যপ্রদেশ রাজ্য কমিটির সম্পাদক কমরেড প্রতাপ সামল এই যুব কর্মীর অকালমৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করে তাঁর সংগ্রামী জীবনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
কমরেড হিমাংশু শ্রীবাস্তব লাল সেলাম