বাংলার বিশিষ্ট কবি শ্রীজাত আসামের শিলচরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন এবং হোটেলে যে অনুষ্ঠানটি চলছিল, সেখানেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে৷ আক্রমণের অজুহাত, প্রায় বছর দুয়েক আগে রচিত শ্রীজাত–র একটি কবিতার বিষয়বস্তু এবং কিছু শব্দ৷ যারা এই আক্রমণ সংগঠিত করেছেন, খবরে প্রকাশ, তারা বিজেপি ঘনিষ্ঠ কোনও একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত৷ এই গোটা ঘটনাটি সম্পর্কে ‘শিল্পী সংস্কৃতি–কর্মী–বুদ্ধি মঞ্চ’র সভাপতি বিভাস চক্রবর্তী এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিলীপ চক্রবর্তী ও সান্টু গুপ্ত ১৪ জানুয়ারি এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন– ‘আমরা এ জাতীয় নিকৃষ্ট এবং হিংসাশ্রয়ী ঘটনার নিন্দা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না৷ একই সঙ্গে আমরা লক্ষ করছি যে, সমাজের সুস্থ এবং গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের নিন্দা এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও দেশে এজাতীয় ঘটনা ধারাবাবিকভাবে ঘটেই চলেছে৷ আমরা মনে করি, আমাদের এই গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধান প্রতিটি মানুষকে অধিকার দিয়েছে সংবিধান–নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থেকে তার নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার–তা সভা–সমিতি, শিল্প–সাহিত্য, বিতর্ক–আলোচনা যেকোনও মাধ্যমেই হোক না কেন৷ কবি শ্রীজাত–র অধিকার রয়েছে কবিতার মাধ্যমে তাঁর অভিমত বা অনুভব প্রকাশ করার৷ তেমনই সেই অভিমত বা অনুভবের বিরোধিতা কিংবা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকারও স্বীকৃত৷ কিন্তু কখনওই বিচারের অধিকার নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে নয়, কিংবা দলবদ্ধ গুণ্ডামির দ্বারা নয়৷ সে–জাতীয় আচরণ বা পদক্ষেপ ফৌজদারি অপরাধ বলেই গণ্য হবে৷
সাম্প্রতিক ঘটনাবলি লক্ষ করলে মনে হতে পারে যে, আমরা একটি অসভ্য বর্বর দেশে বাস করছি, যেখানে কতিপয় মানুষ যে কোনও অজুহাতে আইন–বিচার এবং শাস্তি প্রদানের অধিকার নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে, এবং ক্ষমতাধর রাজনৈতিক শক্তিকেন্দ্রগুলি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থসিদ্ধির কারণে আইনভঙ্গকারীদের প্রশ্রয় ও আশ্রয় দিয়ে চলেছে৷
আমরা এই ভয়ঙ্কর প্রবণতার অবসান চাই৷ দেশকে রক্ষা করার জন্য সীমান্তে যে রকম অতন্দ্র প্রহরা আবশ্যক, তেমনি দেশের অভ্যন্তরেও প্রয়োজন নিরন্তর নজরদারি– আমাদের মনে রাখতে হবে, এই প্রবণতাই আজ ‘দ্য গ্রেটেস্ট ইন্টারন্যাল থ্রেট টু দ্য কান্ট্রিজ সিকিউরিটি’৷ আরেকটি কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন, ঘটনাটির জন্য দায়ী দুষ্কৃতকারীরা কখনওই ‘হিন্দুত্ববাদী’ হতে পারে না৷ কারণ কে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি বা ব্যাখ্যাকারী রূপে?’