মজুতদারি আইনসিদ্ধ করায় রান্নার তেলের ডবল ইঞ্জিন মূল্যবৃদ্ধি

 

ফাইল চিত্র

রান্নার তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। সরষের তেল, সয়াবিন তেল, পাম তেল, সূর্যমুখী তেল ইত্যাদি যত ভোজ্য তেল আছে সব কিছুরই দাম গত এক বছরে লিটার প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা বেড়েছে। এই মুহূর্তে খোলাবাজারে সরষের তেলের দাম ২০০ টাকার কাছাকাছি। এত অল্প সময়ে এই মূল্যবৃদ্ধি নজিরবিহীন। এই মূল্যবৃদ্ধির একটি ইঞ্জিন পুঁজিবাদী মুনাফাকেন্দ্রিক অর্থনীতি। অপর ইঞ্জিনটি হল প্রধানমন্ত্রী মোদির অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন ও মজুতদারি আইন সিদ্ধ করা। ফলে পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও তার পরিচালক কেন্দ্রীয় সরকারের জোড়া ফলা মূল্যবৃদ্ধির আক্রমণে জনজীবন বিপর্যস্ত।

গত বছর লকডাউনের সময় পার্লামেন্টে যথেষ্ট আলোচনার সুযোগ না দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ধূৰ্তর্তার সাথে তিনটি কৃষি আইন পাশ করিয়েছিলেন। তার মধ্যে আছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন সংশোধন। এই আইনে চাল ডাল আলু পেঁয়াজ তৈলবীজ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলিকে অত্যাবশ্যকীয় তালিকার বাইরে আনা হয় এবং এগুলি যথেচ্ছ পরিমাণে মজুত করে রাখার আইনি বৈধতা দেওয়া হয়। এর পর থেকেই রান্নার তেলের দাম বৃদ্ধি স্বাভাবিক হার ছাড়িয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে।

এই আইন অনুযায়ী সরকার মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কথা ভাববে একমাত্র দাম দ্বিগুণ হলেই। তার মানে কি তারা দাম কমাবে? যখন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন পুরোমাত্রায় বহাল ছিল,  তখনও কি কমিয়েছে?  জনগণের অভিজ্ঞতা, দাম একবার বাড়লে কমে না। তবে কখনও কখনও ১০০ টাকা বাড়িয়ে ১ টাকা কমানোর নির্লজ্জ প্রতারণা চলে। পুঁজিবাদী সমাজে এই মূল্যবৃদ্ধি এড়ানোর উপায় নেই। তবে নিয়ন্ত্রণের কিছু উপায় আছে। যেমন অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন ভেঁতা করে না রেখে কঠোর ভাবে প্রয়োগ করে মজুতদারদের গ্রেফতার ও শাস্তি দিলে,  অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের সরকারি বাণিজ্য চালু করলে। মূল্যবৃদ্ধির আগুন থেকে মানুষকে কিছুটা বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু সেটাও সরকার করবে না তীব্র গণ আন্দোলনের চাপ না থাকলে।

বর্তমানে করোনা অতিমারি পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের রোজগারে ধস নেমেছে। পিউ রিসার্চ রিপোর্ট উল্লেখ করে ইতিপূর্বে গণদাবী দেখিয়েছে,  ১৩৮ কোটি ভারতবাসীর মধ্যে ১৩০ কোটিরই ক্রয়ক্ষমতা এমন স্তরে নেই,  যাকে ভিত্তি করে দেশে শিল্প গড়ে উঠতে পারে। লকডাউনের ফলে জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও শোচনীয় হয়ে উঠছে। এখন দরকার কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক ত্রাণ প্যাকেজ দেওয়া,  দরকার মূল্যবৃদ্ধি কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে জনগণকে স্বস্তি দেওয়া। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এসব করার কোনও লক্ষণ নেই। | করোনা অতিমারির কারণে আজ গণজমায়েত করে প্রতিবাদের উপায় নেই। এখন আন্দোলনের নতুন নতুন প্রকরণ খুঁজতে হবে। সোস্যাল মিডিয়ায় সরকারের জনবিরোধী ভূমিকা নগ্ন করে দিয়ে প্রচারের ঝড় তুলতে হবে। আর ভুক্তভোগী জনগণকে উপলব্ধি করতে হবে, মালিক শ্রেণির স্বার্থরক্ষাকারী এই পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা যতদিন টিকে থাকবে এবং মালিক শ্রেণির পলিটিক্যাল ম্যানেজার হিসাবে বুর্জোয়া দলগুলি যতদিন সরকার চালাবে, ততদিন মূল্যবৃদ্ধির এই ভয়ানক আক্রমণ চলতেই থাকবে। ফলে জনগণকে এই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, সরকারগুলির জনবিরোধী ভূমিকার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। একই সঙ্গে শক্তিশালী করতে হবে পুঁজিবাদ উচ্ছেদের কর্মসূচি নিয়ে চলা বামপন্থী রাজনৈতিক দলকে। বলা বাহুল্য বাম দলগুলোর মধ্যে এস ইউ সি আই (সি) ছাড়া আর কোনও দলেরই পুঁজিবাদ উচ্ছেদের কার্যক্রম নেই।

গণদাবী ৭৩ বর্ষ ৩৩ সংখ্যা