উত্তরপ্রদেশে বিজেপি সরকারের কৌশল– পুলিশ দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি চালিয়ে খুন করে এবং দানবীয় কালাকানুনে মামলায় ফাঁসিয়ে এনআরসি–সিএএ বিরোধী আন্দোলন দমন করা৷ গুজরাটে কৌশল ভিন্ন– প্রতিবাদ আন্দোলনে নামতেই না দেওয়া৷ উভয় কৌশলের পিছনে একটাই কারণ– তা হল শাসক বিজেপি ভয় পেয়েছে৷ নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করে মোদি–অমিত শাহের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার দেশবাসীকে ভয় পাওয়াতে গিয়ে নিজেরাই ভয় পেয়েছে৷ ব্রিটিশ প্রবর্তিত ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতি প্রয়োগ করতে গিয়ে জনগণকে আন্দোলনের ঐক্যে বেঁধে দিয়েছে৷ বাস্তবিকই এই আন্দোলনে নানা সম্প্রদায়ের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি তুলেছেন ‘সিএএ–র নামে হিন্দু–মুসলিম বিভাজন বন্ধ কর’৷
১৯ ডিসেম্বর ছিল কাকোরি মামলার সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতা সংগ্রামী রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লা খান এবং রোশন সিং–এর শহিদত্ব বরণের দিন৷ ১৯২৭ সালের এই দিনটিতে ব্রিটিশ সরকার এই তিন বিপ্লবীকে ফাঁসি দেয়৷ এস ইউ সি আই (সি) সহ অন্যান্য বামপন্থী দলগুলি গুজরাটে এ দিন এনআরসি–সিএএ–এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল৷ আমেদাবাদের সরদার বাগে বিক্ষোভের জন্য আগাম অনুমতিও নেওয়া হয়েছিল৷ হঠাৎ ১৮ ডিসেম্বর রাতে প্রশাসন সেই অনুমতি বাতিল করে৷ সরকারের এই অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে ১৯ ডিসেম্বর সরদার বাগে বিক্ষোভ শুরু হতেই বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং আন্দোলনকারীদের টেনে হিঁচড়ে ভ্যানে তোলে৷ তারা সংগঠনের ব্যানার–ফেস্টুন কেড়ে নেয় এবং সংবাদমাধ্যমে জানাতে গেলে বাধা দেয় (ছবি)৷ কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এস ইউ সি আই (সি) নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ ভ্যান রওনা দিতেই দু–তিনশো মানুষ আশপাশ থেকে ছুটে এসে ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ দেখান৷ দাবি তোলেন, এঁদের বিনা শর্তে মুক্তি দিতে হবে৷ পুলিশ তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করে৷
ভদোদরাতেও একই চিত্র৷ সেখানেও বাম দলগুলির কর্মসূচির অনুমতি বাতিল করে প্রশাসন৷ পরদিন জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ দিয়ে এস ইউ সি আই (সি) নেতা তপন দাশগুপ্ত এবং ইন্দরজিৎ সিং গ্রোভার সহ প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়৷ বলা হয়, স্মারকলিপি দিতে হলেও আগে থেকে অনুমতি নিতে হবে৷ প্রশাসনের এই কঠোরতা তার দুর্বলতাকেই তুলে ধরে৷ সে আজ আতঙ্কিত গণবিক্ষোভের আশঙ্কায়৷