বিদ্যুতের মাশুল ৫০ শতাংশ কমানো, কৃষিতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ, বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ (সংশোধনী) ২০১৮ বিল প্রত্যাহারের দাবিতে ১৯ মার্চ বিক্ষোভ দেখায় বিদ্যুৎ গ্রাহক সংগঠন অ্যাবেকা৷ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রদ্যোৎ চোধুরী বলেন, লোকসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়েছে৷ বিভিন্ন সংসদীয় দলের প্রার্থীরা উন্নয়নের বহু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন৷ সেই প্রতিশ্রুতির উদ্দাম কলরবের মাঝে বোরো চাষের সময়ে বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ায় চাষির বুকফাটা কান্নার শব্দকে আমরা হারিয়ে যেতে দেব না৷ পশ্চিমবঙ্গে কৃষি বিদ্যুতে ৪ টাকা ৭৫ পয়সা প্রতি ইউনিটের দাম৷ আবার পিক আওয়ারে ৭ টাকা ৪৮ পয়সা প্রতি ইউনিটে দিতে হয়৷ অথচ ভারতবর্ষের মধ্যে তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, পাঞ্জাব রাজ্যে কৃষিতে বিনা পয়সায় বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে৷ হরিয়ানাতে ১২ পয়সা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম৷ আমরা যেমন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, সাথে সাথে আমরা ভোট প্রার্থীদের কাছে জানতে চাইব তাঁরা জয়লাভ করার পর কৃষিতে বিনামূল্যে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করবেন কি না৷
দিল্লীতে বসবাসকারী একজন গৃহস্থ বিদ্যুৎ গ্রাহক প্রথম ১০০ ইউনিটের দাম দেন ১৪৫ টাকা, অন্ধ্রপ্রদেশের বিদ্যুৎ গ্রাহক দেন ২০৩ টাকা, বিহারের গ্রাহক দেন ৩১৭ টাকা, ঝাড়খন্ডে ১৭৫ টাকা, তামিলনাড়ু ১৫০ টাকা আর পশ্চিমবাংলাতে কলকাতার গ্রাহকদের দিতে হয় ৫৯৭ টাকা আর অন্য জেলার গ্রাহকদের দিতে হয় আরও বেশি ৬২৩ টাকা৷ আবার কলকাতায় সি ই এস সি এলাকার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে চলছে এক অদ্ভুত বৈষম্য৷ রাজ্য বন্টন কোম্পানির এলাকায় গরিব, নিম্নবিত্ত গ্রাহকদের জন্য ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত যৎসামান্য ভর্তুকি দেওয়া হলেও প্রাইভেট কোম্পানি সি ই এস সি–র এলাকায় লক্ষ লক্ষ গরিব গ্রাহকদের জন্য কোন ভর্তুকিই দেওয়া হয় না৷ আমাদের দাবি কলকাতাতেও গরিব গ্রাহকদের একইভাবে ভর্তুকি দিতে হবে৷
অন্যান্য রাজ্য সরকারগুলো সরকারের কোষাগার থেকে বিরাট অংকের টাকা ভর্তুকি দিয়ে তাদের রাজ্যে বিদ্যুতের দাম গরিব, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের জন্য ন্যূনতম রেখেছে৷ পশ্চিমবাংলাতে অ্যাবেকা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে মাশুল ৫০ শতাংশ কমানোর কথা, যার জন্য রাজ্য সরকারকে তার কোষাগার থেকে কোনও ভর্তুকি দিতে হবে না, বিদ্যুৎ কোম্পানির লাভ ১৬.৫ শতাংশের এক পয়সা কমাতে হবে না, শুধুমাত্র গত ২০১৬ – ১৭, ২০১৭– ১৮ বর্ষে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে কেটে নেওয়া প্রায় ৮৫৩৯.১৪ কোটি টাকা, যা কোম্পানিকে খরচ করতে হয়নি, কোম্পানিগুলোর সাশ্রয় হয়েছে, সেই টাকা গ্রাহকদের ফেরত দিলেই দাম ৫০ শতাংশ কমে যাবে৷ কীসের ভিত্তিতে অ্যাবেকা এ কথা বলছে৷ ২০১৬ সাল থেকে কয়লার দাম ৪০ শতাংশ কমেছে, কয়লার উপর জি এস টি কমেছে ৭ শতাংশ এবং কোম্পানির কারগরি ও বাণিজ্যিক ক্ষতি কমেছে ২ শতাংশ৷ তা সত্ত্বেও দাম ৫০ শতাংশ কমানো হচ্ছে না শুধুমাত্র গ্রাহকদের পকেট কেটে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের পাইয়ে দেওয়ার জন্য৷
জনস্বার্থবিরোধী বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ এর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহকে পরিষেবা হিসাবে দেখার বদলে বিদ্যুৎকে বাজারের পণ্যে পরিণত করা হয়েছে৷ তাই একদিকে বছর বছর মাশুল বাড়ছে আর অন্যদিকে বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ করা হচ্ছে৷ এতেও সন্তুষ্ট না হয়ে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে সংসদে আনা হচ্ছে বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ (সংশোধনী) ২০১৮ নামক চুড়ান্ত স্বৈরাচারী বিল৷ যেখানে প্রস্তাব আছে বৃহৎ বিদ্যুৎ গ্রাহক তথা শিল্পপতিদের জন্য দাম কমিয়ে ছোট গ্রাহক তথা গৃহস্থ, ক্ষুদ্র, শিল্প, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে দাম বাড়িয়ে সকলে দাম সমান করা হবে৷ প্রস্তাব আছে, কোম্পানি পরিষেবা সঠিক না দিলে বর্তমানে দিনে ৫০০ টাকা ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে বিদ্যুৎ বিলের মাত্র ১০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেওয়ার৷ এর ফলে এখন যতটুকুও পরিষেবা পাওয়া যায় এই বিল আইনে পরিণত হলে সেটা তলানিতে গিয়ে ঠেকবে, কিন্তু দাম ও আক্রমণ বাড়বে৷
প্রস্তাব আছে, এই কাজ করা হবে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের যতটুকু নিরপেক্ষতা আছে তাকে হরণ করে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার মধ্য দিয়ে৷ এছাড়া প্রস্তাব আছে ‘বন্টন’ পর্যায়কে ভেঙে নতুন এক ‘সাপ্লাই’ পর্যায় সৃষ্টি করে মুনাফার ‘গ্যারান্টি’ দিয়ে সেখানে প্রাইভেট কোম্পানি, তাদের কন্ট্রাক্টর, ফ্রান্সাইজি ও ট্রেডারদের ব্যবসা করার উন্মুক্ত পরিসর দেওয়া হবে সীমাহীন৷ দেশজুড়ে সাপ্লাই ক্ষেত্রে সরকারি ভুমিকা সংকুচিত করে মূলত প্রাইভেট বিদ্যুৎ–ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা সৃষ্টি করা হবে, যার ফল হবে মাশুলবৃদ্ধি, বাড়বে কন্ট্রাক্টর–রাজ, জনগণের দুর্ভোগ হবে সীমাহীন৷ কোনও গণতান্ত্রিক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ভারতের নাগরিক একে সমর্থন করতে পারে না৷ অ্যাবেকা এই বিল প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে৷ নির্বাচনী প্রার্থীরা এই বিলের বিরোধিতা না করলে তাদের বয়কট করার আহ্বান জানাচ্ছে৷