যে দল ক্ষমতায় আসতে পারবে সেই দলকেই ভোট দেব, অন্য দলকে ভোট দেওয়া মানে ভোট নষ্ট, নির্বাচনের আগে জনতার একাংশের মনে এমনই চিন্তাধারা চলতে থাকে। এই প্রবণতা অবশ্য বিভিন্ন গদিলোভী দল তৈরি করেছে। যেদিকে হাওয়া, সে দিকে ভোট দেওয়ার প্রবণতা ভয়াবহ। এই হাওয়াটাকে আরও প্রবল করে এক শ্রেণির গণমাধ্যম। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রত্যেক প্রার্থীকে সমান প্রচার অনেক গণমাধ্যমেই দেয় না। হাওয়া নয়, যে দলকে সঠিক মনে হবে সেই দলকেই ভোট দেবো এই চিন্তা নিয়ে ভোট দেওয়া দরকার সবার। কে ক্ষমতায় আছে, কে ক্ষমতায় আসতে পারে, কার এমপি এমএলএ আছে, কে বড়ো দল কে ছোটে দল এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আমজনতার ভাবা উচিত কোন দল জনগণের সমস্যা সমাধানে আন্দোলন করে, কোন দলের নেতা কর্মীরা নীতি আদর্শের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত জীবন সহ রাজনৈতিক জীবন পরিচালনা করে। ভোটের আগে জনমত সমীক্ষা প্রকাশ করছে কিছু সংস্থা। রাজ্যে প্রায় ১০ কোটি জনসংখ্যা সেখানে মাত্র কয়েক হাজার মানুষের মতামত নিয়ে সমীক্ষা বেশিরভাগ জনগণের মতামত প্রতিফলিত করে না এই জনমত সমীক্ষা। মূলত দুটি দলের হয়ে হাওয়া তোলার কাজটা করে। হয় এই দল, না হয় ওই দল।
ভোটের আগে জনমত সমীক্ষা প্রকাশ বন্ধ করা প্রয়োজন। ভোট কোনও উৎসব নয়, ভোট কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এ জন্য প্রতিটি ভোটার নিজের বিধানসভা এলাকার প্রার্থীদের বিশ্লেষণ করে দেখবেন। প্রার্থীদের দলের নীতি, কাজকর্ম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল হবেন। এরপর যে প্রার্থীকে সঠিক মনে হবে তাকেই ভোট দেবেন।
সাধারণ মানুষ যে দলকে ভোট দেয়, সে দলের প্রতি একটা আবেগ থাকে। কিন্তু সেই দলেরই নেতা মন্ত্রীরা এক দলে টাকা কামানো শেষ হলে অন্য দলে চলে যাচ্ছেন। শাসকদলগুলো রাজনীতিকে ব্যবসায় পরিণত করেছে।
আবার সাধারণ মানুষের একাংশের মধ্যেও ক্ষুদ্র চাওয়া পাওয়ার মানসিকতা কাজ করে। পঞ্চায়েত ঘনিষ্ঠ থাকলে সহজে একশো দিনের কাজ সহ কিছু সরকারি সুবিধা পাওয়া যাবে এই ভেবে অনেকেই শাসকদলে ঘেঁষে থাকেন। শাসকদলের প্রতি ঘৃণা থাকলেও শাসকের পক্ষেই ভোট দিয়ে দেন।
সরকারি সুযোগ সুবিধা যাতে সবাই পান, তার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই ভাবতে হবে চাকরির সংস্থানের জন্য কোন দল কী করছে। বছরের পর বছর নিয়োগ নেই। শূন্যপদের অবলুপ্তি ঘটাচ্ছে। যতটুকু নিয়োগ ভোটের স্বার্থে হচ্ছে সেখানেও ভয়াবহ দুর্নীতি।
শিক্ষা স্বাস্থ্যের বেসরকারিকরণ মানে সাধারণ জনগণকে বিপদে ফেলা। তাই কোন দল শিক্ষা স্বাস্থে্যর বেসরকারিকরণ রুখে দিয়ে সরকারি শিক্ষা স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পরিকল্পনা দেখাচ্ছে সেই দলের দিকে ভোট দেওয়ার প্রবণতা প্রয়োজন।
দেশ বা রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষ শ্রমিক বা কৃষক। কৃষকের জীবনের মূল সমস্যা ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া আর ফসল উৎপাদনের জন্য চাষের খরচ বৃদ্ধি। কোন দল ফসলের ন্যায্য দাম দেওয়ার সুপরিকল্পনা করছে সেদিকে নজর দেওয়া দরকার। সার, বীজ, কীটনাশক সহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের জন্য সরকারিভাবে কারখানা তৈরি করলে কৃষক লাভবান হবে।
আমি ভোট দেব সেই দলকেই যে দল বেকার সমস্যা সমাধানে সঠিক দিশা দেখাবে, সরকারি শিক্ষা স্বাস্থে্যর উন্নতি ঘটানোর সদিচ্ছা দেখাবে, সরকারি চাকরির শূন্যপদ বৃদ্ধি ঘটানোর কথা বলবে, শূন্যপদের অবলুপ্তি না ঘটিয়ে প্রতি বছর দুর্নীতিমুক্ত ভাবে চাকরিতে নিয়োগ করবে, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম দেবে, শ্রমিকের কাজের নিচয়তা দেবে, কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের সরঞ্জাম তৈরির জন্য সরকারিভাবে কারখানা খুলবে।
আব্দুল জলিল সরকার, কোচবিহার