সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ২৮ জানুয়ারি এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন,
ভেনেজুয়েলার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে আচমকা অভ্যুত্থানের (ক্যু)–র দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ওই দেশে মাদুরো বিরোধী জুয়ান গুয়াইদোকে যেভাবে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসাবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী শাসকরা ঘোষণা করেছে, আমরা তার তীব্র ধিক্কার জানাই৷ কোনও দেশ বশ্যতা স্বীকার না করলেই সেই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বেআইনি হস্তক্ষেপ করা এবং সেখানে মার্কিন দালাল সরকার বসিয়ে দেওয়ার অতি পরিচিত চক্রান্তের নির্দশন আবার দেখা গেল ভেনেজুয়েলায়৷ ইতিপূর্বে তারা এইভাবেই কিউবার প্রেসিডেন্ট কাস্ত্রোকে হটিয়ে সমাজতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল, যা ব্যর্থ হয়েছিল বে অফ পিগস–এর লড়াইয়ের দ্বারা৷ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদোর আলেন্দেকে হত্যা করেছে৷ আফগানিস্তান, ইরাক এবং লিবিয়ায় সরকারের পতন ঘটিয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ৷ কুখ্যাত মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর মাধ্যমে তথাকথিত ‘বিদ্রোহী’দের অস্ত্রসাহায্য দিয়ে তারা সিরিয়াতে পুতুল সরকার বসাতে চেয়েছিল এবং বর্তমানে ওই একই উদ্দেশ্যে ইয়েমেনে ছায়াযুদ্ধ চালাচ্ছে৷ এই সব জঘন্য কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা যুদ্ধাপরাধ করে চলেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করছে এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানকে সুপরিকল্পিতভাবে খুন পর্যন্ত করছে৷ একইভাবে পেন্টাগনের ষড়যন্ত্রীরা নিকারাগুয়া, পুয়ের্তোরিকো, ডোমিনিয়ন রিপাবলিক, পানামা, গুয়াতেমালা, মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে নানাভাবে নাশকতা এবং আগ্রাসী ক্রিয়াকলাপ চালিয়েছে৷
অন্য দেশকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগানো এবং ভয় দেখিয়ে তাদের পদানত রাখা এবং আধিপত্য ও দস্যুবৃত্তি চালিয়ে যাওয়ার জন্য মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তার সাগরেদদের সহযোগিতায় গোটা দুনিয়ায় গুণ্ডামি করে যাচ্ছে, তার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে তার প্রভাবাধীন এলাকা বাড়ানো এবং অন্যান্য সার্বভৌম রাষ্ট্রের তেল–গ্যাস–খনিজ সম্পদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা৷ তার জন্য সে সামরিক হুমকি দিচ্ছে, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালাচ্ছে, ভাড়াটে গুন্ডা ও বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের কাজে লাগিয়ে সেই সব দেশের ভিতরে কৃত্রিম ‘বিদ্রোহ’ সৃষ্টি করছে৷ পাশাপাশি, যে সব দেশকে সে বিরোধী বলে মনে করে তাদের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ চাপিয়ে দিচ্ছে – যা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সরাসরি হামলার চেয়ে কম নৃশংস নয়৷
আমেরিকা এমনকী ইরান ও উত্তর কোরিয়াকে ‘শয়তান রাষ্ট্র’ বলে ঘোষণা করেছে এবং এই দুই রাষ্ট্রকে যখন খুশি উচিত শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে৷ বিশাল তৈলভাণ্ডারে সমৃদ্ধ ভেনেজুয়েলা যেহেতু মার্কিন ধমকির সামনে মাথা নিচু করতে রাজি নয়, তাই সে হয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সাম্প্রতিক টার্গেট৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘ভেনেজুয়েলার বিদ্রোহী অফিসারদের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসন ‘ক্যু সম্পর্কে আলোচনা করেছে৷’ এতেই মার্কিন শাসকদের মতলব ফাঁস হয়ে গেছে৷ গণতান্ত্রিক বিরোধী দলের আলখাল্লাপরা গুয়াইদোপন্থীরা আসলে ভেনেজুয়েলার ধনকুবের গোষ্ঠী ও মার্কিন সরকারের অর্থানুকূল্যে পুষ্ট শক্তি৷ আশার কথা, মার্কিন শাসক এবং তাদের পদলেহীদের মরিয়া চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে এবং সেনাবাহিনী পুরোপুরি প্রেসিডেন্ট মাদুরোর পক্ষে দাঁড়িয়েছে৷
ভেনেজুয়েলার উপর এই কাপুরুষোচিত আক্রমণ সমগ্র মানবতার উপর আক্রমণ৷ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও তার দলবলের এই গোপন ষড়যন্ত্র ও অপরাধমূলক কার্যকলাপকে প্রতিহত করতে হবে বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী গণআন্দোলনের মাধ্যমে৷ সব দেশের সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও শান্তিপ্রিয় মানুষদের কাছে আমাদের আবেদন, দুনিয়াজুড়ে এই দস্যুতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হন এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে ভেনেজুয়েলার জনগণের প্রতি সংহতি জানান৷ আমরা আমেরিকার সাধারণ মানুষদের প্রতিও আবেদন জানাচ্ছি যে, ভেনেজুয়েলা ও অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত বন্ধ করার সংগ্রামকে তারা নিজেদের সংগ্রামের অঙ্গ বলে বিবেচনা করুন৷