২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিগেডের ভিড় দেখে আপনি হয়তো উচ্ছ্বসিত, কিন্তু আমি আতঙ্কিত। বিপদ ওই ভিড়েই। সরাসরি প্রশ্ন করুন, আপনারা কী চান? উত্তর সরল এবং সংক্ষিপ্ত– ‘ভোট’।
দীর্ঘ ৩৪ বছর পশ্চিমবাংলায়, ২৫ বছর ত্রিপুরায়, বিভিন্ন নামে ও জোটে কয়েক দশক কেরালায় ক্ষমতায় থাকা সিপিএম কী দিয়েছে?
জনগণের চিন্তা চেতনা-শিক্ষার মেরুদণ্ড তারা ভেঙে দিয়েছে। ‘উন্নয়ন’ যা করেছে সেটা যে কোনও দলের সরকার থাকলেই কম বেশি করত। দুর্নীতি, ঔদ্ধত্য, দলবাজি– এসব ব্যাপারেও তাদের অবদান অন্যদের চেয়ে কম নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে বেশি-ই। তবে চাতুর্য এক্ষেত্রে প্রসংশনীয়। অন্যরা বেফাঁস, বেলাগাম। শ্রমের ন্যায্য অধিকার, পরিপূর্ণ মানুষের মতো বাঁচার অধিকার– এগুলো বাম নেতারা ক্ষমতায় গিয়ে শুধু স্লোগানে রেখেছিলেন। বাস্তবে কিছু প্রশাসনিক সুবিধে পাইয়ে দিয়ে একটা বিপুল ভোটব্যাংক তৈরি ও তাকে রক্ষা করতেই ব্যস্ত থেকেছেন। এ দিনের ভিড়ের একটা বড় অংশের লক্ষ্য আবারও ক্ষমতায় যাবো এবং করেকম্মে খাবো। এর অতিরিক্ত কোনও আকাঙক্ষা হয়তো তাদের নেই। তাই লোক টানতে টুম্পা-গান সঙ্গে ডিজে বক্স। মুষ্ঠিবদ্ধ স্লোগানের বদলে উন্মত্ত নাচ। তার চেয়েও আশ্চর্যের, বামফ্রন্টের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এই বদলে যাওয়া ‘বাম সংস্কৃতিকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন! তাহলে পচনটা আপাদমস্তক!
কাগজে-কলমে বা ভাষণে বামফ্রন্ট নিজেদের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বলে দাবি করে এসেছে। আব্বাসউদ্দিন বাহিনীর সঙ্গে নির্বাচনী জোটে গিয়ে বামফ্রন্ট সেই ট্যাগ লাইনও হারাল। এ রাজ্যের রাজনীতির মূল সুর ধর্মনিরপেক্ষতা। এখানে ভারতের অন্য রাজ্যগুলির মতো ধর্ম বা বর্ণভিত্তিক ভোট হয় না। এটা ছিল বাঙালি হিসেবে আমাদের গর্ব। আর এ রাজ্যে বামপন্থীরাই ছিল ঐতিহ্য গড়ে তোলার অন্যতম স্থপতি। কিন্তু এরপর সেই ধর্মনিরপেক্ষ মানুষগুলো কোথায় যাবেন? এতদিন বুকে লালন করা সেই স্বপ্ন ও সংগ্রামের বুকে ছুরি বসালেন কোন অধিকারে? এক বিজেপিকে নিয়ে যখন আমরা বিপন্ন বোধ করছি, তখন একই চরিত্রের ধর্মীয় মৌলবাদী একটা শক্তিকে পিচমবঙ্গে জায়গা করে দিতে আপনাদের বাধলো না? এতদিন কার্ল মার্কস বা কমিউনিজমের নামাবলি গায়ে দিয়ে বামফ্রন্ট বামপন্থার যে অপরিসীম, ক্ষমাহীন ক্ষতি করেছে, এই পদক্ষেপ তাদের কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিল। দলের নামের সাথে মার্কসিস্ট বা কমিউনিস্ট জুড়ে দিলেই যেমন দলটা বামপন্থী হয়ে যায় না, তেমনি সেকুলার শব্দটা নামের সঙ্গে জুড়ে দিলেই দলটা ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যায় না।
মনে পড়ে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘তাহাদের কথা’ ছবিতে শোনা সেই কথাটা– ‘লড়াই কখনো থাইমা থাকে না, অনন্তকাল ধইরাই চলে। সেই বিশ্বাস আমার আছে।’
অর্ক মালিক
বেলমুড়ি, হুগলি