পেট্রল-ডিজেলের দামবৃদ্ধিকে অজুহাত করে সরকারি ও বেসরকারি বাস যথেচ্ছ ভাড়া নিয়ে চলেছে। একেক বাসে একেক রকম ভাড়া। যেন কে কত বেশি নিতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলছে। যাত্রীরা ক্ষোভে ফুটছে। রাজ্য সরকার সব দেখেও নীরব। দরকার ছিল উপযুক্ত সংখ্যায় সরকারি বাস চালিয়ে সাধারণ মানুষের সুরাহার কোনও ব্যবস্থা করা। সরকার তাও করেনি।
এই পরিস্থিতিতে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর পক্ষ থেকে ২৩ জুলাই পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়ে দাবি জানানো হয়, সুষ্ঠুভাবে বাস ও অন্যান্য পরিবহণের ভাড়া নির্ধারণের জন্য যাত্রী কমিটির প্রতিনিধি সহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ কমিটি তৈরি করা হোক। সেই কমিটি সমস্ত দিক বিবেচনা করে দ্রুত ভাড়া নির্ধারণ করুক। একই সাথে ভাড়াবৃদ্ধির দুঃসহ চাপ থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করার জন্য রাজ্য সরকার প্রয়োজনে ভর্তুকি দিক।
মন্ত্রীকে পরিষ্কারভাবে জানানো হয়, করোনা অতিমারিতে সাধারণ মানুষের রুজি-রোজগার বন্ধ, অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই ও কলকারখানা বন্ধ থাকার কারণে জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। এরকম একটা পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার ক্রমাগত পেট্রল-ডিজেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়েই চলেছে। প্রতি লিটার পেট্রলে ৩২ টাকা ৯০ পয়সা এবং প্রতি লিটার ডিজেলে ৩১ টাকা ৮০ পয়সা ট্যাক্স কেন্দ্রীয় সরকারই আদায় করছে। রাজ্য সরকারও এই অস্বাভাবিক বর্ধিত মূল্যের উপর লিটার প্রতি পেট্রোলে ১৮ টাকা ৪৬ পয়সা এবং ডিজেলে ১২ টাকা ৫৭ পয়সা ট্যাক্স চাপিয়ে তাদের কোষাগার ভর্তি করছে। ফলে বাজারে পেট্রল-ডিজেলের দাম দাঁড়িয়েছে মূল দামের প্রায় তিনগুণ-এর কাছাকাছি। একই ভাবে দিন দিন বেড়েই চলেছে রান্নার গ্যাস এবং কেরোসিনের দামও। যাকে বাস্তবে, করোনা বিপর্যস্ত জনগণের কাছ থেকে লুট বললেও কম বলা হয়। জনজীবনের এই দুঃসময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের এত বড় একটা অন্যায়ের ব্যাপারে রাজ্য সরকারও মৌখিক প্রতিবাদ ছাড়া কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ নেয়নি।
বাস মালিকরা পেট্রল-ডিজেলের অন্যায় এই মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে কোনও কথাই বলছে না। বরং তেলের দাম বৃদ্ধিকে অজুহাত করে আরও বিপুল হারে বর্ধিত ভাড়ার অসহনীয় বোঝা জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেই তারা বদ্ধ পরিকর। রাজ্য সরকারও কেবলমাত্র ‘বাসভাড়া বাড়ানো চলবে না’ বলে মৌখিক ঘোষণা করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। এদিকে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় রুখতে কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।
এর আগেই এস ইউ সি আই (সি)-র পক্ষ থেকে লোকাল ট্রেন চালুর দাবি জানানো হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত লোকাল ট্রেন চালালেই দূরত্ব বিধি মেনে সুষ্ঠুভাবে যাতায়াত করা বাস্তবে সম্ভব হত। সেক্ষেত্রে বাসেও ‘যাত্রী সংখ্যা কম’ বলে বাস মালিকরা ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে যে অজুহাত তুলছে, সে অজুহাত তারা তুলতে পারত না। কিন্তু সে দাবি মানা হয়নি। পেটের তাগিদে কাজের সন্ধান করতে কিংবা চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য স্বল্প বেতনের কর্মীকেও বাধ্য হতে হয়েছে অটো-টোটো সহ অন্যান্য পরিবহণে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে যাতায়াত করতে। এই বাড়তি খরচ আর হয়রানির ফলে, মানুষের উপর সুকৌশলে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যাতে তারা বর্ধিত বাসের ভাড়া মেনে নিতে বাধ্য হয়।
পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হয়, সামাজিক-অর্থনৈতিক ও মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে বাস মালিকদের ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার এই কৌশল ও চাপের কাছে মাথা নত না করে, রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াক এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পেট্রল-ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও তার উপর ট্যাক্স চাপানোর বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার তার সদর্থক ভূমিকা পালন করুক। জনস্বার্থে পেট্রল-ডিজেলের উপর থেকে রাজ্য সরকার অন্তত তাদের চাপানো ট্যাক্স অবিলম্বে প্রত্যাহার করুক। রোড ট্যাক্সকমা এবং যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধির নিয়ন্ত্রণে সরকার কার্যকরী ভাবে হস্তক্ষেপ করুক। এস ইউ সি আই (সি)-র সুস্পষ্ট বক্তব্য– কোনও অজুহাতেই জনগণের ঘাড়ে ভাড়াবৃদ্ধির বোঝা চাপানো চলবে না।