৩ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকেই পশ্চিমবাংলার রাজনৈতিক আবহ খুবই সরগরম ছিল৷ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাল্টিক্যাম সম্প্রচার চলছে–‘বামফ্রন্টের ব্রিগেড’৷ ব্রিগেডে কত লোক আসছে? কীভাবে আসছে? ব্রিগেডর কোন জায়গটা ফাঁকা পড়ে আছে? কীভাবে সেই শূন্যস্থান পূরণ হবে তার বিস্তারিত বিবরণ শুনলেন রাজ্যবাসী৷ নির্ধারিত নয়জন বক্তার প্রত্যেকেই প্রায় এক সুরে ‘বিকল্পে’র কথা বলে গেলেন, বললেন ‘বিকল্প নীতি’ বাস্তবায়নের কথা, কিন্তু কী সেই ‘বিকল্প নীতি’? সেই নীতির অভিমুখটাই বা কী? এর কোনও স্পষ্ট উত্তর সেদিন পাইনি, বরং আর পাঁচটা সংসদীয় দলের মতোই নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য যেভাবে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দেওয়া হয়–তাই–ই সেদিন দিয়েছেন নেতারা৷ ফলে প্রাপ্তির ভাঁড়ার শূন্য থেকেছে বেশিরভাগ বাম মনোভাবাপন্ন মানুষের৷ এই নিয়ে মন যখন ভারাক্রান্ত, মনে একটু শীতল বাতাস দিয়ে গেল গণদাবী’র (৭১/২৭) সংখ্যায় মুদ্রিত একটি নিবন্ধ ‘কোন বিকল্পের কথা বলছেন কমরেড’ এই নিবন্ধটিতে খুব যথোচিতভাবে সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন তোলা হয়েছে…‘‘দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় বামফ্রন্ট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সরকার চালিয়েছে৷ রাজনীতি–অর্থনীতি–সমাজ-সংস্কৃতি কোন ক্ষেত্রে কী বিকল্পের তারা চর্চা করেছিলেন? পশ্চিমবঙ্গকে কোন বিকল্পের সন্ধান তাঁরা দিয়েছিলেন? এখন যদি তাঁরা সরকার গঠনের আওয়াজ তুলে বিকল্পের কথা বলেন, তবে তো প্রশ্ন উঠবেই৷ ‘গণদাবী’ খুব সঠিকভাবেই জনসাধারণের মতকে প্রতিফলিত করছে এই নিবন্ধে যে ‘‘…এখন এই রাজ্যের মানুষ হিসাব করে, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে কে এগিয়ে বামফ্রন্ট না তৃণমূল? কুকর্মে কে কম বা কে বেশি?’’ এই বক্তব্যের সাথে সংখ্যাগরিষ্ঠ সৎ বামপন্থীরাও সহমত যে, ‘‘…ক্ষমতাসীন এক সরকারকে হঠিয়ে বামপন্থীরা বেশি আসন দখল করলেই বামপন্থার জয়? এই রাজনীতির চর্চা করে বামপন্থার অনেক সর্বনাশ করেছেন কমরেড, এবার থামুন৷ ভোটসর্বস্ব রাজনীতি করছেন করুন–দোহাই, তাকে বামপন্থা বলবেন না৷ ’’
নিবন্ধের মর্মবস্তুকে উপলব্ধি করলে যে সরল সত্যটি প্রস্ফূটিত হয় তা হল বামপন্থাকে নিছক ভোটের বিকল্প না বানিয়ে সংগ্রামী বামপন্থার ঝান্ডাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরাটাই আজ কর্তব্য৷
সৌপ্তিক পাল
কলকাতা