২০২৪-এর প্যারিস অলিম্পিকে জ্যাভলিন প্রতিযোগিতায় পাকিস্তানের নাদিম প্রথম এবং ভারতের নীরজ দ্বিতীয় হয়েছেন। গত বারের চ্যাম্পিয়ন নীরজ চোপড়াকে হারিয়ে প্রথম হয়েছেন আরশাদ নাদিম। পাকিস্তানের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে নাদিম সোনার পদক জিতে বলেছেন, বহু থ্রো-ই তিনি নীরজের থেকে শিখেছেন।
রূপোর পদক পাওয়ার পর পানিপথের ছেলে নীরজ চোপড়ার গ্রামে তখন উৎসবের মেজাজ। সাংবাদিকরা তাঁর মা সরোজ দেবীর কাছে জানতে চান, আপনি কি খুশি? তিনি বলেন, অবশ্যই। রূপোই আমাদের সোনা। সোনা তো জিতেছে নাদিম। সেও তো আমার আর এক ছেলে।
আবেগাপ্লুত নীরজের বাবা তাঁর ছেলের পদক উৎসর্গ করেছেন ভারতের কুস্তিগির বিনেশ ফোগটকে। বিনেশ অলিম্পিকের ফাইনাল রাউন্ডে ১০০ গ্রাম বাড়তি ওজনের কারণে বাতিল হয়েছেন। ক্রীড়াপ্রেমী প্রতিটি মানুষ যখন এতে মুষড়ে পড়েছেন, বিনেশও খেলা থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন, তখন নীরজের বাবার পদক উৎসর্গ এক অনন্য নজির সৃষ্টি করল।
নাদিমের মা রাজিয়া পারভিনের মুখেও শোনা গেল একই অভিব্যক্তি। নীরজও আমার সন্তান। সে নাদিমের বন্ধু ও ভাই। জেতা-হারা খেলার অঙ্গ। নীরজ আরও ভাল খেলবে, আরও অনেক পদক পাবে, সেই আশা করি।
যখন ভারত-পাকিস্তানের কোনও খেলা মানেই দু’দেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়তে থাকা, একে অপরের শত্রু হিসাবে দাগিয়ে রাখার অনুশীলন যখন দু’দেশের শাসকরা প্রতি মুহূর্তেই চালাতে থাকে, সেই সময় দুটি দেশের খেলোয়াড়দের আবেগঘন সম্পর্ক আর তাঁদের বাবা-মায়েদের পরস্পরের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন, আপামর দেশবাসীকে আবেগে আপ্লুত করে দিয়েছে।
এ বারের প্যারিস অলিম্পিকের মতো অনন্য ঘটনা এর আগেও ঘটেছে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপে। ইরান এবং মার্কিন শাসকদের প্রবল শত্রুতার মধ্যেও একটি ম্যাচে দুই দেশের ফুটবলাররা সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরেছিলেন। ফুল ও উপহার দিয়ে এবং গ্রুপ ফটো তুলে দুটি দেশের ফুটবলাররা পারস্পরিক উষ্ণ সম্পর্কের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
‘স্পোর্টসম্যান স্পিরিট’ আসলে কী, তা নাদিম-নীরজরা দেখিয়ে দিলেন। দেখিয়ে দিলেন, খেলা দু’টি মানুষের মধ্যে কত বড় সেতুর কাজ করতে পারে, সব মানুষের মধ্যে ঐক্যের সুর বেঁধে দিতে পারে, দূর করে দিতে পারে সব বিভেদ।