গত জুলাইয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি’ সংক্রান্ত ২০২৩ সালের রিপোর্ট। ফাও (ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল অরগানাইজেশন) এই রিপোর্ট টি প্রকাশ করেছে। ফাও এবং ইউনাইটেড নেশনস এজেন্সি যৌথভাবে এই রিপোর্ট তৈরি করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারতের তিন-চতুর্থাংশ জনগণ তাঁদের নিম্ন আয়ের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য জোগাড় করতে পারেন না।
এই রিপোর্ট কেন্দ্রের বিজেপি এবং রাজ্যে রাজ্যে নানা রঙের সরকারের উন্নয়নের ফোলানো-ফাঁপানো প্রচারে এক সজোরে থাপ্পড়। এই ধরনের রিপোর্ট সাধারণত শাসকদলগুলি চিল-চিৎকারে অগ্রাহ্য করে থাকে। কিন্তু তথ্যকে তো উপেক্ষা করার উপায় নেই। মুম্বই থেকে সংগৃহীত এই তথ্যে দেখা যাচ্ছে, খাদ্যের দাম গত পাঁচ বছরে, অর্থাৎ মোদি-শাসনে বেড়েছে ৬৫ শতাংশ। এই সময়ে শ্রমিকদের বেতন কী হারে বেড়েছে? শ্রমিকদের বেতন বহু ক্ষেত্রে কমেছে, কিছু ক্ষেত্রে একই রয়েছে। যে সামান্য অংশের বেড়েছে, সেই বৃদ্ধির পরিমাণ ২৮ থেকে ৩৭ শতাংশ। অর্থাৎ মজুরি যতটুকু বেড়েছেও, সেটা খাদ্যের মূলবৃদ্ধির তুলনায় অর্ধেক।
এদিকে খাদ্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে চলেছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের দাম তো অগ্নিমূল্য। এই অবস্থায় নিম্ন আয়ের মানুষরা কী করে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কিনবে? এ সব বিষয় নিয়ে বিজেপির এনডিএ জোট বা বিরোধী ইন্ডিয়া জোট– কোনও জোটেরই কোনও বক্তব্য নেই। তারা ব্যস্ত স্রেফ ভোটের হিসাব নিকাশে। মিডিয়ার দৌলতে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুধুই ভোটে কে জিতবে কে হারবে, তার আলোচনা। মানুষ মূল্যবৃদ্ধিতে জেরবার হচ্ছে, রোজগারের অর্ধেকই চলে যাচ্ছে খাদ্যের পিছনে। শিক্ষা, চিকিৎসা সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে বরাদ্দ কমাতে বাধ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এটাই কি স্বাধীনতার অমৃতমহোৎসবের প্রাপ্তি? এর নামই কি দেশের উন্নয়ন? দেশের অগ্রগতি? ৭৪ শতাংশ মানুষের এই দুঃসহ অবস্থার পাশাপাশি আর একটি চিত্রও আছে। তা হল, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসাবে ভারত জায়গা করে নিয়েছে। এই যে অগ্রগতি তার সাথে দেশের আলোচ্য ৭৪ শতাংশ মানুষের সম্পর্ক কী? দেশ অবশ্যই এগোচ্ছে, যদি দেশ বলতে শুধু আদানি-আম্বানি-টাটা-বিড়লা প্রভৃতি একচেটে পুঁজিপতিদের বোঝায়। যে পুঁজিবাদী অর্থনীতি পরিচালনা করছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি, তাতে এই বৈষম্য অনিবার্য। এর ব্যতিক্রম হওয়ার কোনও উপায়ই এই অর্থব্যবস্থায় নেই।
এই ধরনের চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট এর আগেও প্রকাশিত হয়েছে। মানুষের ক্ষোভ প্রশমনের লক্ষে্য পুঁজিবাদী শাসকরা নানা দান-খয়রাতির স্কিমও কার্যকর করছে। মানুষের ক্ষোভ কমাতে, খাদ্য নিরাপত্তা আইনও রচিত হয়েছে। তার কিছু প্রয়োগও হয়তো হচ্ছে। ভারতের সংবিধানও বাঁচার অধিকার ঘোষণা করেছে। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও অর্থনীতিটা যেহেতু পুঁজিবাদী, ফলে এই ব্যবস্থায় এই বৈষম্য উত্তরোত্তর বেড়েই চলবে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার না পেলে অপুষ্টি দেখা দেবে। অপুষ্টির পথ ধরেই আসবে নিঃশব্দ ঘাতক মৃত্যু। পুঁজিবাদ মানুষকে আজ সেই মৃত্যুর দিকেই ঠেলছে। ফাও রিপোর্ট তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
(তথ্যসূত্রঃ দি হিন্দু–৩১.০৮.২০২৩)