Breaking News

ভয়াবহ বেকারত্বে বিপর্যস্ত দেশ অথচ কর্মসংস্থান প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ কমাল বিজেপি সরকার

 

এ যেন সেই ‘শিবঠাকুরের আপন দেশে“আইন-কানুন সর্বনেশে’-এর জবরদস্ত উদাহরণ। বেকার সমস্যায় জেরবার দেশের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার বদলে এবারের বাজেটে গ্রামীণ ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ ছাঁটাই করল কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।

বেসরকারি হিসাবে দেশে বেকারত্বের হার গত ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর খোদ সরকারি হিসাবে ২০২২-এর ডিসেম্বরে বেকারত্বের হার ১৬ মাসের রেকর্ড ভেঙে পৌঁছেছে ৮.৩ শতাংশে। সদ্য পার হয়ে আসা বছরটিতেই দু-দু’বার কর্মপ্রার্থী যুবসমাজকে দেশ জুড়ে একটানা বিক্ষোভে ফেটে পড়তে দেখেছে মানুষ। একবার রেলে নিয়োগের পরীক্ষা বাতিলের বিরুদ্ধে, আরেকবার সেনাবাহিনীতে ঠিকা-সেনা নিয়োগে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প ঘোষণার প্রতিবাদে।

মানুষ আশা করেছিল, বছরে ২ কোটি কর্মসংস্থানের মতো কান-ফাটানো নানা অলীক প্রতিশ্রুতি, যা ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সহচরদের মুখ থেকে বারবার শুনতে হয়েছে, তার বদলে এবারের বাজেটে বেকার যুবকদের কাজের কার্যকরী কিছু ব্যবস্থার কথা শোনা যাবে। কিন্তু তার বদলে দেখা গেল, একশো দিনের কাজের প্রকল্প, যা আকালের এই বাজারে এখনও বহু মানুষের রোজগারের একমাত্র ভরসা, তাতে বরাদ্দ বিপুল পরিমাণ কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার কোটি টাকা। অথচ গত বছরে এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এ থেকে আবার বকেয়া মজুরি মেটাতেই চলে যাবে ২৫ হাজার কোটি। অর্থাৎ এই প্রকল্পে নতুন কাজ সৃষ্টির জন্য বাস্তবে বরাদ্দ থাকল মাত্র ৩৫ হাজার কোটি টাকা!

এই প্রকল্প প্রথম থেকেই মোদি-সরকারের অপছন্দের। বিজেপি সরকার ‘চুঁইয়ে পড়া তত্ত্ব’-এর অনুগামী হয়ে বরাবরই বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়িয়ে কাজের বাজার খুলে দেওয়ার কথা বলে দেশের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের জন্য সুদ-ছাড়, ঋণ-অনুদান ও ব্যাপক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছে। মোদি সরকারের গত ১০ বছরের ইতিহাস সাক্ষী, সেই পথে হেঁটে পুঁজিমালিকদের দেদার মুনাফা পাইয়ে দেওয়া গেলেও বেকার সমস্যা ক্রমাগত বিপুল আকার নিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হাতে খরচ করার মতো টাকা এতটাই কমে গেছে যে, অর্থনীতি সচল রাখতে অতি-অপছন্দের এই একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বারবার মোদি সরকার বাজেট বরাদ্দের চেয়ে বেশি খরচ করতে বাধ্য হয়েছে। গত বছরের বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ কমানো হলে খোদ বৃহৎ ব্যবসায়ীরাই সরকারকে উল্টো চাপ দেয়, যাতে চাহিদা কম হওয়ার দরুণ বাজারে যে দারুণ মন্দা চলছে, তা আরও বেড়ে না যায়। ফলে চলতি আর্থিক বছর ২০২২-‘২৩-এ একশো দিনের কাজ প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ ছাপিয়ে সরকারকে খরচ করতে হয়েছে।

এই অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এ বছর একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ বিপুল কমিয়ে দিল বিজেপি সরকার। অবশ্য এবারেও বেসরকারি বিনিয়োগের বৃদ্ধি এবং তার ফলে বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার কথা বড় গলা করে বলতে ভোলেননি অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট ভাষণে। কিন্তু অর্থনীতির এই মন্দা দশায় কীভাবে বাড়বে বেসরকারি বিনিয়োগ, আর যদি তা বাড়েও তাহলে ‘অটোমেশন’-এর এই যুগে কোন উপায়ে তাতে বিপুল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে–সে সব প্রশ্ন সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি।

মানুষও বুঝেছে, কেন্দ্রের চরম জনস্বার্থবিরোধী বিজেপি সরকারের বাজেটে জনস্বার্থবাহী কোনও নীতি আশা করাই বাতুলতা। প্রাপ্য বুঝে নিতে হলে পথে নামতে হবে। হাঁটতে হবে সঠিক নেতৃত্বে আন্দোলনের পথ ধরে।