শ্রমজীবী মানুষের বিক্ষোভে গত কয়েক মাস ধরে উত্তাল ব্রিটেন৷ সে দেশে প্রথম প্রতিবাদের ঢেউ তোলেন রেলকর্মীরা৷ তাঁদের আন্দোলনে উজ্জীবিত হয়ে নিজেদের দাবি–দাওয়া নিয়ে ক্রমাগত এগিয়ে আসছেন আরও শত–সহস্র খেটে–খাওয়া মানুষ৷
গত জুলাইয়ে মূল্যবৃদ্ধির হার যখন ৪০ বছরের রেকর্ড ছাড়ায় তখনই আন্দোলনে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ব্রিটেনের পরিবহণ বিভাগের শ্রমিক–কর্মচারীরা৷ রেল, জলপথ ও সড়কপথের কর্মীদের সংগঠন আরএমটি–র নেতৃত্বে রেল–কর্মচারীরা প্রথম বিক্ষোভ দেখান৷ ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাড়তে থাকা সংসার–খরচ সামাল দিতে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে একের পর এক ধর্মঘট করেন তাঁরা৷ কর্তারা দাবি মানেননি৷ প্রতিবাদে এ মাসের মাঝামাঝি এবং জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আরএমটি–র নেতৃত্বে ৪০ হাজারেরও বেশি রেল–কর্মচারী আবারও বেশ কয়েকটি ধর্মঘটে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷
শীতের শুরুতে ব্রিটেনের লিভারপুল ও ফেলিক্সস্টোয়েতে বন্দর–কর্মীরা নিজেদের দাবিতে ধর্মঘট করেছেন৷ আইনজীবী, কল–সেন্টারের কর্মী ও প্রযুক্তিকর্মীরা কাজ বন্ধ করে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে৷
নভেম্বর মাসের ২৪ তারিখ ব্রিটেনের হাজার হাজার ডাক–কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও শিক্ষকরা গোটা দেশ জুড়ে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন পোস্টফিস, কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলগুলিকে৷ অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির এই কঠিন সময়ে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার জন্য বেতন বাড়ানোর দাবিতে স্ক্টল্যান্ডের শিক্ষকরা গত দশ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার পথে নেমেছেন৷ ডাকবিভাগের কর্মীরা গত ২৫ নভেম্বরও ধর্মঘটে অনড় ছিলেন৷ আসন্ন খ্রিস্টমাসের আগে নিজেদের বিক্ষোভ–আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা৷
রয়েল কলেজ অফ নার্সিং–এর নার্সিং স্টাফরা খুব শিগগিরই ধর্মঘটে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন৷ বেতন বৃদ্ধি ও রোগী–নিরাপত্তার দাবিতে নার্স–সংগঠনের ৩ লক্ষ সদস্য ধর্মঘট করে দাবি–দাওয়ায় সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ গত ১০৬ বছরে এই প্রথম ধর্মঘটে সামিল হতে চলেছেন নার্সরা৷
দেশ জুড়ে খেটে–খাওয়া মানুষের এই সংগঠিত প্রতিবাদে ভয় পাচ্ছে শাসকরা৷ কোনও কোনও ক্ষেত্রে ক্ষুব্ধ শ্রমিক–কর্মচারীদের নিরস্ত করতে কিছু কিছু দাবি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে তারা৷ যেমন, অতি সম্প্রতি ‘ইউনাইট’ নামের একটি শ্রমিক সংগঠন জানিয়েছে, তারা ‘হেইনজ’ কারখানার ১৫০ জন কর্মীর ১১ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি আদায় করেছে৷ ব্রিটেনের একটি বামপন্থী সংবাদপত্র মন্তব্য করেছে, ‘বেতনবৃদ্ধির এই ঘটনায় বোঝা যাচ্ছে, শ্রমিকদের সোচ্চার প্রতিবাদে মালিকরা উদ্বিগ্ণ৷ এটা ভাল লক্ষণ৷ তবে এ থেকে এ কথাও স্পষ্ট হচ্ছে যে, মালিকরা ইচ্ছে করলেই কর্মীদের বেতন বাড়াতে পারে– সেই টাকার জোর তাদের রয়েছে৷’
এদিকে টোরি নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট একটি প্রতিক্রিয়াশীল বিল নিয়ে এসেছে৷ সেই বিলে শ্রমজীবী মানুষের প্রতিবাদ–বিক্ষোভ দমন করতে পুলিশের হাতে আরও বেশি ক্ষমতার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে৷ শ্রমিক প্রতিনিধিদের আশঙ্কা, এর ফলে ধর্মঘটের দিনে পিকেটিংরত আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি বর্বরতা আরও বাড়বে৷
কিন্তু শাসকের বর্বরতায় আতঙ্কিত নন ব্রিটেনের শ্রমিক–কর্মচারীরা৷ একের পর এক রাজপথ কাঁপানো আন্দোলনে উজ্জীবিত ব্রিটেনের শ্রমিক–কর্মচারীরা আরও বেশি সংখ্যায় শ্রমিক–সংগঠনের সদস্য হচ্ছেন৷ সংগঠনগুলিতে যেভাবে সদস্যসংখ্যা বাড়ছে, গত দশ বছরে তা কখনও দেখা যায়নি৷ শ্রমিক–কর্মচারীরা একে অপরের কাছ থেকে আন্দোলনের কলাকৌশল শিখে নিচ্ছেন, নিজের নিজের কাজের জায়গায় মালিকের বিরুদ্ধে সংগ্রামী আন্দোলন গড়ে তোলার শপথ নিচ্ছেন৷